চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

ক্রিকেটারদের চেয়ে ব্যবসা বড়?

টাইমস অব ইন্ডিয়ায় পার্থ বাহাদুরির লেখা অবলম্বনে

দিল্লির ফিরোজ শাহ কোটলায় (বর্তমান অরুণ জেটলি স্টেডিয়াম) বৃহস্পতিবারের দুপুর। আকাশের সূর্য তখনো মাঠে নিজের আলো ছড়াতে হিমশিম খাচ্ছে। একটি নিস্তেজ সূর্যের নিচে বিষাক্ত ধোঁয়ায় মারাত্মকভাবে ছেয়ে আছে মাঠ। তার মধ্যেই অনুশীলনে ব্যস্ত বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। কারো কারো মুখে দূষণরোধী মাস্ক লাগানো। আর পরিস্থিতি ঘুরে দেখছেন মুষ্টিমেয় মিডিয়া এবং সম্প্রচারকর্মীরা। বাংলাদেশ ও ভারত রোববার এখানেই সিরিজের প্রথম আন্তর্জাতিক টি-টুয়েন্টি ম্যাচ খেলবে।

সবার চোখে যন্ত্রণা করলে বা পানি আসার অবস্থা হলেও তারা সব দেখার চেষ্টা করছে। এটা সত্য যে, ক্রিকেট সম্পর্কে কথা বলার সময়, দেখার সময় বা খেলতে গিয়ে মাঝে মাঝে কাশি এবং থুথু উপেক্ষা করা সহজ।

দিল্লির দূষণ মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধিতে উদ্বিগ্ন পুরো ভারত। অবস্থা এতটাই বেগতিক যে শুক্রবার দিল্লি ও এর সংলগ্ন অঞ্চলগুলোতে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত জরুরি অবস্থা বা ‘হেলথ ইমার্জেন্সি’ ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ৫ই নভেম্বর পর্যন্ত দিল্লির সমস্ত স্কুল বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। ছাত্রছাত্রীদের জন্য বিশেষ মাস্ক বিতরণ করার সময় দিল্লিকে গ্যাস চেম্বারের সঙ্গেও তুলনা করেছেন তিনি।

দূষণের মাত্রা এতটাই বেড়েছে যে, অযৌক্তিক ও দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকি এড়াতে প্রাতঃভ্রমণকারীদের পর্যন্ত সকালে মাস্ক পরে হাঁটতে বের হতে হচ্ছে। স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থীদের জন্য ৫০ লাখের বেশি মাস্ক সরবরাহ করা হয়েছে বলে জানায় রাজ্য সরকার। অনেক কিছুতেই নিষেধ আছে, তবে একটা কথা হয়তো তারা বলতে ভুলে গেছে, সেটা হল- আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলবেন না।

বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের অনেকে মাস্ক নিয়ে অনুশীলন করলেও ভারতের ক্রিকেটাররা সেটা ছাড়াই অনুশীলন করেন। শুক্রবার বাংলাদেশের দ্বিতীয়দিনের অনুশীলনে ফাস্ট বোলার আল-আমিন হোসেন, স্পিন বোলিং কোচ ড্যানিয়েল ভেট্টরি এবং হেড কোচ রাসেল ডমিঙ্গোকে দূষণরোধী মাস্ক মুখে দেখা যায়। তবে দিল্লির দূষণ নিয়ে বিশেষ উদ্বিগ্নতা দেখাননি বাংলাদেশ কোচ।

ডমিঙ্গো জানান, ‘পরিস্থিতি একেবারে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়নি। ক্রিকেটাররা খেলাতেই মনোসংযোগ করছে এবং দূষণ নিয়ে তাদের বিশেষ কোনো অভিযোগ নেই। সময়ের সঙ্গে সঙ্গেই পরিস্থিতি অনেকটা সহজ হয়ে যাবে। চোখ জ্বালা করতে পারে, গলায় কিছু সমস্যা হতে পারে। কিন্তু কেউ মারা যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।’

ডমিঙ্গোর কয়েক মিনিট পরই কথা বলেন ভারতের ব্যাটিং কোচ বিক্রম রাঠোর। কথা বলার সময় দূষণ নিয়ে তিনি ছিলেন খানিকটা নির্মম এবং নির্বিকার, ‘আমার মনে হয়, আপনি ভুল ব্যক্তিকে প্রশ্ন করছেন। খেলার সময় নির্ধারিত হয়ে গেছে এবং আমরা এখানে খেলতে এসেছি। খেলোয়াড়দের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য কোনো বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। আমরা এই অবস্থার সাথে অভ্যস্ত।’

এটি যেন যুদ্ধক্ষেত্রের আলোচনা। একদিন আগে রোহিত শর্মা যেমন বলেছিলেন, সেটা রাঠোরের বিপরীত কিছু নয়, ‘আমরা যখন দু’বছর আগে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচ খেলেছি, তখন এটি (দূষণ) আমাদের প্রভাবিত করেনি।’

যদিও দুই বছর আগের সেই ম্যাচ খেলোয়াড়দের উপর প্রভাব ফেলেছিল। তবে ডিসেম্বর ২০১৭’র কথা এখন সবাই পুরোপুরি ভুলে গেছে। ওই সময়ও ‘কেউ মারা যাচ্ছিল না’। তবে এটা নিশ্চিত যে, ভারত এবং শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটার এবং দর্শকরা দূষণের বিপজ্জনক স্তরের মধ্য দিয়েই টেস্টের পাঁচটা দিন শেষ করেছিলেন।

দূষণের এমন মাত্রায় শ্রীলঙ্কার খেলোয়াড়রা খেলতে অভ্যস্ত নয়। শ্রীলঙ্কার একিউআই স্তর খুবই স্বাস্থ্যকর। ২০১৭’র ভারত-শ্রীলঙ্কা দিল্লি টেস্টের দ্বিতীয় দিন হঠাৎ লঙ্কান কয়েকজন পেস বোলার বমি করা শুরু করেন এবং অক্সিজেন চেয়ে পাঠান। তখন সহানুভূতির পরিবর্তে পুরো ভারত অবিশ্বাস্য প্রতিক্রিয়া দেখায়।

ম্যাচের খেলা ১৭ মিনিট পর্যন্ত বন্ধ থাকে। অবস্থা খারাপ দেখে ড্রেসিংরুম থেকে মাঠে নেমে আসেন ভারতের কোচ রবি শাস্ত্রী। তবে ভারতের বোলিং কোচ ভরত অরুণ বলেছিলেন ম্যাচটি ‘অযথা থামানো হচ্ছে’। কোটলার দর্শকরা ‘হেরে গেছে, হেরে গেছে’ বলে চিৎকারে লঙ্কানদের উপহাস করতে থাকে।

কিন্তু পরের দিনই পাশার দান ঘুরে যায়, যখন ভারতের পেসার মোহাম্মদ সামি বমি করেন এবং মাঝমাঠে বসে পড়েন। তখন পুরো কোটলা অস্বাভাবিক শান্ত দেখায়। এরপর ভারতীয় ওপেনার শেখর ধাওয়ান বলেন, ‘লঙ্কান ক্রিকেটাররা হয়তো মিথ্যা বা বাড়িয়ে বলেনি।’

দুই বছর পরেও পরিবেশ দূষণ সম্পর্কে ভারতীয় ক্রিকেটের প্রতিক্রিয়া ছেলেমানুষি বা মূর্খতার সীমানা অব্যাহত রেখেছে। বিসিসিআইয়ের নতুন সভাপতি সৌরভ গাঙ্গুলি বলেছেন, সময়সূচি নিয়ে আরও ‘বাস্তববাদী’ হতে হবে এবং ম্যাচটি পুনঃনির্ধারণের জন্য সময় নেই বলে ছেলেমানুষি কথাটাকে আরও সঠিক শব্দে পরিণত করেছেন।

বাংলাদেশ কোচ ডমিঙ্গো অন্ততপক্ষে সততার সাথে যখন বলেছেন, ‘আমরা সবাই জানি শেষবার শ্রীলঙ্কাকে এখানে বেশ সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়েছিল। কিন্তু সেদিক থেকে দেখতে গেলে বাংলাদেশেও এমনকিছু সমস্যা আছে। স্পষ্টতই আপনি এমন অবস্থায় ৬-৭ ঘণ্টা থাকতে চান না। তবে ম্যাচটা তিন ঘণ্টার।’

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, কেন একেবারে ‘এখানেই থাকতে হবে’ (অনড় অবস্থায়)? বিশেষজ্ঞ এবং চিকিৎসকরা দিল্লির জনসাধারণকে বাইরেও জগিং পর্যন্ত না করার পরামর্শ দিচ্ছেন এবং এলাকাজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করা করেছে। তাহলে এই পরিস্থিতিতে কেন বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ক্রিকেট বোর্ড তার এবং অন্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারদের টি-টুয়েন্টি খেলায় মাঠে নামাচ্ছে?