বাংলাদেশের তিন ক্রিকেটারের ক্যাসিনা-ভ্রমণ নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠেছে। নানা জনে নানান কথা বলছেন। ঠিক সেই সময় প্রবাসী ক্রীড়া বিশ্লেষক ফরহাদ টিটো কাসিনোর আদ্যোপান্ত নিয়ে ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন।
টিটো লিখেছেন: ব্যাপারটা নিয়ে কিছু লেখার ইচ্ছা ছিলো না আমার। চুপ করেই ছিলাম আর পড়ে যাচ্ছিলাম সাউথ আফ্রিকায় ক্রিকেটার তাসকিন, নাসির, শফিউলের ক্যাসিনোয় যাওয়া নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে, সোশাল মিডিয়ায় সত্য খবর, অতিরঞ্জিত বিশ্লেষণ, রাগ-ক্ষোভ, চরিত্র গেল, দেশের মান-ইজ্জত গেল টাইপের অসংখ্য ছোট-বড় লেখা, মন্তব্য।
একটা ব্যাপার বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করলাম, ক্যাসিনো কী বা এর ভেতরে ঢুকে মানুষ কী কী করতে পারে… সেই ধারণাই নেই অথবা ধারণা খুব কম এমন মানুষই বেশি আমাদের দেশে! আমি জানি, সাধারণত প্রায় সবাই জানে ‘ক্যাসিনো জুয়ার আখড়া’। এই বিশ্বাসের সঙ্গে যুক্ত ‘ক্যাসিনোয় গেলে চরিত্র শেষ’ অথবা ‘ক্যাসিনো এক ধরণের নিষিদ্ধ জগত’।
ব্যাপারটা কি আসলে তাই?
যে সব দেশে ক্যাসিনো ব্যবসা সরকার ও সমাজ অনুমোদিত সেসব দেশে ক্যাসিনোয় হঠাত একদিন যাওয়া, গিয়ে কিছুক্ষণ ঘুরে ফিরে আসা, জুয়ার বড় টেবিলে না বসে মেশিনে কিছুক্ষণ ভাংতি পয়সা ঢুকিয়ে ফান বা লাক ট্রাই করে চলে আসা কোনো মানুষই মুখ লুকায় না.. সে যদি সে দেশের নামী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বা তারকা খেলোয়াড়, সংগীত শিল্পীও হয়।
নিয়মিত/প্রতিরাতে বা প্রায়শ ক্যাসিনোয় যাওয়া পকেট খালি করে বা পকেট ভরে ঘরে ফেরা লোকগুলি জুয়াসক্ত, আসল জুয়াড়ি। এরা এক ধরণের মানসিক রোগীও। এই রোগ থেকে বেরিয়ে আসা অনেক কঠিন। এদের পরিচয়টা যে কোনো দেশেই সম্মানজনক না।
কিন্তু কালে-ভদ্রে, আকস্মিক জাস্ট ফান করে ঘুরতে যাওয়া মানুষরা তো সেই অর্থে গ্যাম্বলার না, মানসিক রোগীও না।
যারা জানেন না তাদের জন্য বলছি, উন্নত বিশ্বে বার বা পাবের ভেতরেও ‘মিনি ক্যাসিনো’ থাকে কোথাও। জুয়ার মেশিন থাকে ঘোড় দৌড়ের রেইস কোর্সে, পুল বা স্নুকার ক্লাবেও। ঘোড়ার দৌড় দেখতে গিয়ে বা পুল ক্লাবে খেলার টেবিলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়ে কয়েক মিনিটের জন্য গ্যাম্বলিং মেশিনে বসে পড়া লোক আছে অসংখ্য যারা পুরোদস্তুর ক্যাসিনোয় যায় না কখনো।
ক্যাসিনোর মতো গ্যাম্বলিং মেশিন থাকতে পারে শপিং মল বা শপিং মলের ফুড কোর্টের আশপাশেও। শপিং করতে গিয়ে বা খেতে গিয়েও কেউ বসে পড়তে পারে কিছুক্ষণের জন্য।
সাউথ আফ্রিকায় অবস্থানরত আমাদের রিপোর্টারদের পত্রিকা রিপোর্ট পড়ে জেনেছি ২০০ রানে ম্যাচ হারার রাতেই ক্যাসিনোয় গিয়েছিলেন তাসকিন-নাসিররা। আমাদের তিন ক্রিকেটার নাকি ম্যানেজার মিনহাজুল আবেদীন নান্নুর অনুমতি নিয়ে গিয়েছিলেন বাইরে শপিং ও ডাইনিং করার কথা বলে। এক অভিজ্ঞ সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে নান্নু নাকি বলেছেন, শপিং মলে শপ করতে গিয়ে, খেতে গিয়ে ক্যাসিনোয় ঢুঁ মারা এমন কি বড় ব্যাপার।
এই তিন খেলোয়াড়ের ডিসিপ্লিন বা রুল ব্রেকিং বা অন্যায়ের ব্যাপারটা ঘটেছে তারা নিয়মানুযায়ী রাত দশটার মধ্যে হোটেলে না ফিরে দেরি করে ফেরায়।
কোনো দুর্ঘটনা বা গুরুত্বপূর্ণ অনিবার্য কারণ ছাড়া এক ঘণ্টা পরে হোটেলে ফেরার জন্য অবশ্যই শোকজ করা যেতে পারে/উচিত এই খেলোয়াড়দের। কিন্তু জাতিকে হতাশায় ডুবিয়ে সিরিজ হারার পর পরের খেলায় (টি-টুয়েন্টি) জেতার জন্য রাতভর ক্রিকেট অনুশীলন করতে বা সারারাত হোটেল রুমে শুয়ে শুয়ে কান্নাকাটি করার নির্দেশও তো দিতে পারেন না আপনি!
পরের দিন সকালে যেহেতু ম্যাচ বা অনুশীলন কিছুই ছিলো না, খেলোয়াড়রা একটু সময় কাটাতেই পারে হোটেলের বাইরে নিজের মতো করে। তা নিয়ে এত মাতামাতি বা হুলুস্থুলের কী আছে?
হ্যাঁ, দশটার জায়গায় সাড়ে দশটা বা এগারোটায় হোটেলে ফেরার জন্য তাদের কাছে জবাবদিহিতা চাওয়া উচিত টিম ম্যানেজমেন্টের। অফ দ্য ফিল্ড এই ঘটনায় খেলোয়াড়দের বিপক্ষে বিচারকের ভূমিকা পালন করা সাংবাদিক বা সমর্থকের কাজ না।
ক্যাসিনো প্রসঙ্গে আরেকটা ব্যাপার খুব হাস্যকর। ফেসবুকে আমাদের বহু মানুষের মন্তব্য পড়ে মনে হয়েছে ক্যাসিনো বুঝি পতিতাপল্লী টাইপের কোনো জায়গা, যেখানে গেলে খারাপ পুরুষরা আরো খারাপ হয়ে যায়। ওখানে শুধু গ্যাম্বলিং না সব ‘খারাপ কাজ’ই হয়! কী আশ্চর্য!
আমি ক্যাসিনোয় যাই না। জুয়াও খেলি না। তবে দেখতে গেছি ক্যাসিনোর ভেতরের জীবন, অকেশনাল গ্যাম্বলার বন্ধুদের সঙ্গে গেছি ওদের কর্মকাণ্ড দেখতে, দেশ থেকে অনুষ্ঠান করতে আসা তারকা কণ্ঠ শিল্পী, অভিনয় শিল্পীদের নিয়ে গেছি তাদের জোরালো অনুরোধে। তাও খুব বেশি সময়ের জন্য না।
আমি নিজে তো জানিই, আমার চারপাশের সমাজও জানে আমি গ্যাম্বলার না।
দুঃখ হয় ক্রিকেটারদের জন্য… কেন যে ওরা জাতির শোক-কষ্টের দিনে ক্যাসিনোয় গেল!
ওদের শাস্তি হওয়াই উচিত… কী বলেন?