দেশে ক্যান্সার আক্রান্ত ৩ লাখ মানুষের জন্য একটি শয্যা! ৩২ হাজার ৬শ’ ৮ জন রোগীর জন্য সরকারি পর্যায়ে আছেন একজন ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ। ২৩ হাজার ৭৭ জন রোগীর জন্য আছেন মাত্র একজন রেডিওথেরাপি টেকনোলজিস্ট। রাতারাতি চাহিদামত অবকাঠামো নির্মাণ, দক্ষ টেকনিশিয়ান এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তৈরী সম্ভব নয় বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
এই বাস্তবতায় ক্যান্সার সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি, প্রাথমিক পর্যায়ের ক্যান্সার রোগ সনাক্তে বছরে অন্তত একবার পরীক্ষার ওপর জোর দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। আর দেশের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে ক্যান্সার রোগীদের মরিয়া হয়ে ঢাকামুখী হয়ে অর্থনৈতিক বিপর্যয় এবং রাজধানীতে স্বজন-প্রিয়জন বঞ্চিত হয়ে অবস্থানের ভোগান্তি কমাতে অন্তত জেলা পর্যায়ের রোগীদের বিশেষায়িত চিকিৎসার দেবার প্রতি জোর দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টর্টাস ফোরামের উদ্যোগে সম্প্রতি ক্যান্সার সোসাইটির সাথে এক আলোচনায় এসব বিষয় উঠে এসেছে।
এসময় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, অসংক্রামন রোগ মরনব্যাধি ক্যান্সারের চিকিৎসায় জনদুর্ভোগ কমাতে সরকার দেশের ৮টি বিভাগে সরকারী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একশ’ শয্যার পূর্ণাঙ্গ ক্যান্সার চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপন করবে।
দ্বিতীয় পর্যায়ে অবশিষ্ট সকল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আধুনিক সুযোগ সুবিধাসহ পূর্ণাঙ্গ ক্যান্সার চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। আর তৃতীয় পর্যায়ে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের ২৫০ শয্যার ক্যান্সার হাসপাতাল নির্মানেরও পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এতসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সময়সাপেক্ষ হলেও দারুন আশা ব্যাঞ্জক নি:সন্দহে। তবে একটি প্রশ্ন ওই সব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আগে ক্যান্সার রোগীদের দুর্ভোগ লাঘবের কি কোনই উপায় নেই? আর ক্যান্সারের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা এবং রোগ ভোগান্তির বর্তমান বাস্তবতার ধরনের ওপর আলোকপাত করাও দরকার।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার এক হিসাবে বলা যায়, বিশ্বব্যাপী ৬০ শতাংশ মানুষের মৃত্যু হয় ক্যানসারে। উন্নয়নশীল দেশ বাংলাদেশে সাত দশমিত ৫ ভাগের মৃত্যুর কারণ ক্যান্সার। ধারণা করা হয় ২০৩০ সাল নাগাদ ক্যান্সার জনিত মৃত্যুর কারণ ১৩ শতাংশের বেশি হবে। মূলত অসংক্রমন রোগ ক্যান্সারের এই ভয়ানক ছোবলে ব্যক্তি-পরিবার-তথা রাষ্ট্রকেও গুনতে হবে অর্থদণ্ড।
ক্যান্সারের মত ব্যয়বহুল চিকিৎসা খরচ সামাল দিতে শুধু পরিবারগুলো আর্থিক বিপর্যয়ের শিকার হবে না, তার বিরুপ প্রভাব পড়বে রাষ্ট্রের ওপর। কারণ ব্যক্তি তার শ্রম আর অর্থ দিয়ে রাষ্ট্রের সমৃদ্ধিতে ভুমিকা রাখছে। পরিবার গুলো সমৃদ্ধির পাশাপাশি রাষ্ট্র পাচ্ছে কর্মদক্ষ উৎপাদনশীল জনগোষ্ঠি। কিন্তু ক্যান্সারের মত র্দীঘমেয়াদে চিকিৎসার ব্যয়ে ব্যক্তি-পরিবার তার আর্থিক স্বক্ষমতা হারাছে। হারাছে উৎপাদন ক্ষমতা ও পারিবারিক উদ্যোম।
তাই এখন বহুল আলোচনায় ‘ক্যানসার রোগ-আক্রান্তরা’ শুধু নিজেরাই চিকিৎসার ব্যয় বহন করতে গিয়ে সর্বশান্ত হচ্ছে না। বরং সমাজের এবং অর্থনৈতিক বোঝা হিসেবেও গন্য হচ্ছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় আঞ্চলিক জোট বা আসিয়ান ভুক্ত দেশ গুলোতে ‘একশন স্টাডি অন ক্যানসার’ শীর্ষক জরিপে ক্যানসার এবং ‘সোসিও ইকোনোমিক বারডেন’ বিষয়টি বহুল আলোচিত হচ্ছে।
ঐ জরিপে দেখা গেছে, ক্যানসার সনাক্তের পর এক বছরের মধ্যে ৪৮ শতাংশ পরিবারে আর্থিক দুর্যোগে শিকার হয়। আর ক্যান্সার সনাক্তের এক বছরের মধ্যে ২৯ শতাংশ ক্যানসার আক্রান্তের মৃত্যু হয়। ২৩ শতাংশকে আর্থিক বিপর্যয়কে মোকাবেলা করে বেঁচে থাকতে হয়।
ক্যানসার আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যুতেই ঐ পরিবারের ভোগান্তি কমছে না। কারণ ক্যানসার আক্রান্তের চিকিৎসা ব্যয়ে সর্বশান্ত পরিবারটিকে পরবর্তীতে বাকী সদস্যদের লেখাপড়া-জীবনযাপন ব্যয় এমনকি খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থানসহ মৌলিক চাহিদা পূরনেও আর্থিক বিপর্যয়ের মুখে জীবন মান নির্বাহ করতে হয়। এর সাথে যেমন একটি প্রত্যক্ষ সামাজিক বিরুপ প্রভাব আছে আবার পরোক্ষ বিরুপ প্রভাবও ক্যানসার আক্রান্ত পরিবারটিকে বহন করতে হয়। কারণ এমনও হচ্ছে ‘ক্যানসার’ বংশগত রোগ কি না এমন অমুল অবৈজ্ঞানিক ধারনার বিবেচনায় বিবাহ বা আত্মিয় সম্পর্ক স্থাপনেও অনিহা দেখা দেয় কোথাও কোথাও।
আবার একটা সময় তো এমনটা দেখা গেছে ক্যানসার আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে ‘রেডিয়েশন মার্কার থাকায় রাজধানীর অনেকে হোটেলে তাদের রুম ভাড়া দেয়নি। আবার চাইলেই ক্যানসার আক্রান্তরা তিনশ শয্যার একমাত্র সরকারি ক্যানসার হাসপাতালে ভর্তি হবেন এমন তো স্বপ্নেও বাস্তব সম্ভব নয় (ক্যানসার চিকিৎসায় একমাত্র সরকারী প্রতিষ্ঠান-জাতীয় ক্যানসার গবেষনা ইন্সটিটিউট ও হাসপাতাল)। কিন্তু জেলা ও উপজেলা প্রত্যন্ত থেকে ক্যানসার আক্রান্ত মরিয়া হয়ে জীবনের আশায় ছুটে আসছেন রাজধানী শহরে। রাজধানীতে সেই দুর প্রত্যন্তের গ্রাম থেকে আসা ভুক্তভোগী ক্যানসার রোগি যাদের কোন স্বজন-প্রিয়জন নেই তারা কি আদৌ চিকিৎসার নাগাল পাচ্ছেন পেলেও কিভাবে ?
এখানে রয়েছে দারুন অনুসন্ধানের সুযোগ। তবেই জানা যাবে, ক্যানসার আক্রান্ত ব্যক্তি পরিবারের অজানা দারুণ মানবিক-অমানবিক-দুর্নীতি আর সুযোগ সন্ধানী একটি গোষ্ঠির জমিয়ে বসার গল্প। যদিও ডিমান্ড-সাপ্লাইয়ের যে যুগোপত ত্বত্ত দিয়ে বিষয়গুলো ব্যাখা করেন সংশ্লিষ্টদের কেউ কেউ।
তবে আপাত বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ জেলা পর্যায়ে ক্যানসার রোগীর ডায়াগনসিসটা অনন্ত নির্ভেজাল এবং সঠিক হোক। আর তা করতে হলে দক্ষ টেকনিশিয়ান এবং ডায়াগনসিসটা সঠিক হতে হবে। থাকতে হবে রোগ ব্যবস্থাপনার সুনিদিষ্ট গাইডলাইন এবং রোগীদের কাউনিন্সিলিংও। উদাহরণ স্বরুপ বলা যায় একজন লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগী, যিনি এমন সময় ও এমন স্টেজে রযেছেন তাকে আর ঢাকা-দিল্লি করে লাভ নেই এটা তার স্বজনদের খোলাখুলি ভাবেই জানানো জরুরি।
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা করছেন না সংশ্লিষ্টরা। রোগীদের এই সত্যটি বোঝানোর ক্ষেত্রে শুভঙ্করের ফাঁকি রয়েছে। কারণটি অর্থনৈতিক। কিন্তু এমন ক্ষেত্রে কাউন্সিলিং করার কোন বিল্পন নেই তা চিকিৎসক, নার্স বা কাউন্সিলার যিনিই করুন না।
তবে চিকিৎসকের দায় অবশ্যই রয়েছে আর তা হলো মৃত্যু পথযাত্রী ঐ রোগীকে ডায়াগনসিসের নামে সর্বশান্ত করবেন কিনা এই বিষয়ে চিকিৎসকের নৈতিক অবস্থান পরিস্কার করা জরুরি। কারণটা আরো পরিস্কার করতে হলে ক্যানসার রোগ এর চিকিৎসার বিদ্যমান অবস্থা এর সাথে শুভঙ্করের ফাঁকির এর সাথে যোগসূত্রটাও পরিস্কার করা জরুরি।
স্বাধীনতার ৪৭ বছরে এখনো সুনিদিষ্ট কোন তথ্য নেই। কারণ আজ অবদি কোন জরিপ হয়নি। তাই বিভিন্ন বিশেষজ্ঞদের মতে দেশে প্রতিবছর আড়াই লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে মৃত্যু হয় প্রায় দেড় লাখের। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতে প্রতি এক লাখ মানুষের জন্য একটি রেডিওথেরাপি চিকিৎসার সুবিধাসহ চিকিৎসা কেন্দ্র প্রয়োজন।
সে হিসেবে ১৬ কোটি জনগনের জন্য ১৬০টি ক্যানসার সেন্টার প্রয়োজন। কিন্তু সরকারি ১৬টি আর বেসরকারী ১০টি ক্যানসার চিকিৎসা সেবা কেন্দ্র মিলিয়ে দেশে আছে ২৬টি ক্যানসার চিকিৎসা সেবা কেন্দ্র। রেডিওথেরাপি মেশিন আছে ৭টি এর মধ্যে জাতীয় ক্যানসার গবেষনা ইন্সটিটিউটও হাসপাতালে ৪টি, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১টি শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১টি এবং ঢাকা সিএমএইচে ১টি মেশিন। একই ভাবে কোবাল্ট মেশিন ৬টি, ব্রাকি থেরাপি মেশিন ৫টি কনভেনশন সিম্যুলেটর মেশিন ২টি, সিটি সিম্যুলেটর ২টি, ট্রিটমেন্ট প্লানিং সিস্টেম ৪টি। আর সরকারী বেসরকারী পর্যায়ে সর্বমোট ক্যানসার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সংখ্যা ১৭০ জন। ক্যানসার রোগ চিকিৎসা সেবা প্রদানকারী চিকিৎসকের পদের সংখ্যা ৮৮টি তার মধ্যে বিশেষজ্ঞ পদ ও ৪২টি ট্রেনিং পদ, অর্থাৎ ১৭০৪৫ জন রোগীর জন্য একটি পদ এবং ৩২,৬০৮ জন রোগীর জন্য সরকারী পর্যায়ে একটি বিশেষজ্ঞ পদ আছে।
সরকারি পর্যায়ে রেডিও থেরাপি টেকনোলজিস্ট এর পদ আছে ৬৫টি। এর মধ্যে ২৬টি পদে লোক রয়েছে বাকি ৩৯টি পদ শুন্য। অর্থাৎ ২৩০৭৭ জন রোগীর জন্য মাত্র একজন রেডিওথেরাপি টেকনোলজিস্ট আছেন।
এই বাস্তবতায় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্যানসার রোগ প্রতিরোধে সনচেতনতা জরুরি। আর জেলা পর্যায়ে চিকিৎসার সেবার আওতা বাড়ানো প্রয়োজন। পাশাপাশি ধুমপান থেকে বিরত থাকা, বিভিন্ন ধরনের তামাক-গুল-পাতার ব্যবহার বন্ধে সচেতনতা বাড়ানো, ভেজাল খাবার, কৃষি জমিতে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিকের ব্যবহার বন্ধ এবং নদী দূষনের বিরুদ্ধে সোচ্ছার হয়ে আন্ত:মন্ত্রনালয় সমন্বয়ও প্রয়োজন বলছেন কেউ কেউ।
কিন্তু এত কিছুর পরে কেউ ক্যানসারে আক্রান্ত হলে করনীয় কী? সঠিক পথ নিদের্শনা না থাকায় ক্যানসার হয়েছে এই সত্যটা উপলদ্ধি করে পথে হাঁটতে গিয়ে জীবন-মৃত্যুকে দেখা ব্যক্তি-পরিবার দিশেহারা হয়ে আরো বিপর্যস্থ্য হয়ে পড়ে। এই সময় দরকার সুনিদিষ্ট নির্দেশনার। যদিও ক্যানসার মানে র্দীঘ মেয়াদে ব্যয়বহুল চিকিৎসা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্যানসারের চিকিৎসায় সনাক্তের পর সার্জারি, রেডিয়েশন এবং কেমোথেরাপি এই তিন ধরনের চিকিৎসা প্রয়াজন হয়।
রোগীকে হাসপাতালে কমপক্ষে ২০ থেকে ৪০ দিন ভর্তি থাকতে হয়। দেশের একমাত্র পূর্ণাঙ্গ ক্যানসার চিকিৎসা কেন্দ্র জাতীয় ক্যানসার গবেষনা ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালে তিনশ শয্যার হাসপাতালে সঙ্গত কারণেই অতিরিক্ত রোগীর ভর্তির সুযোগ নেই। ২৩টি বিভাগের অধিনে বিভিন্ন ক্যানসারে আক্রান্তরা সার্জারির সুযোগ পান। এর বাইরে ‘ডে কেয়ার সেন্টার সিস্টেমে’ প্রতিদিন একজন গড়ে পাঁচশ ক্যানসার রোগীর রেড়িওথেরাপি এবং গড়ে ৩শ রোগি কেমোথেরাপির সুযোগ পান।
সাধারনত রেডিওথেরাপির জন্য সপ্তাহে ৫ দিন করে কখনো ১৮ বা ২০ দিনও লাগতে পারে। (ক্লোবাল্ট মেশিনে কিছুটা সাশ্রয়ী হলেও লিনিয়ার মেশিন কিছুটা ব্যয়বহুল) রেডিয়েশন খরচ ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। আর কেমোথেরাপি জন্য ১৮ থেকে ২১ দিন সময় লাগে। রোগীর রোগ ও ধরন অনুযায়ী কমপক্ষে ৬ সাইকেলে ওষুধের ওপর নির্ভর করে ৪-১২ হাজার খরচ হয় খুব সাধারন আড়পোড়ে এক এক জন রোগীর। যদিও কেমোথেরাপির ওষুধের ক্ষেত্রে দেশী-ইন্ডিয়ান, জার্মান ওষুধ ভেদে মুল্য নির্ভর করে। তবে আশার কথা জাতীয় ক্যানসার গবেষনা ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালে কেমোথেরাপির জন্য অর্ধেক ওষুধ সরকার বিনামুল্যে দিয়ে থাকে। তারপরও রোগীর থাকা খাওয়া আসা যাওয়া খরচ মিলিয়ে খুব সাধারণ একজন দরিদ্র রোগীর খরচ ৫০ হাজার টাকার কম নয়।
আর আর্থিক ভাবে স্বচ্চল হলে ‘যত গুড় তত মিষ্টি’ এই প্রবাদে চালাতে হয় ক্যানসারের চিকিৎসা। বিশেষ করে বেসরকারি পর্যায়ে এই প্রবাদটি শত ভাগ প্রযোজ্য। কারণ রেডিয়েশনের জন্য বেসরকারি হাসপাতাল গুলোতে এক থেকে আড়াইল লাখ টাকার প্যাকেজ থাকলেও কেমোথেরাপির ক্ষেত্রে ওষুধের দেশি -বিদেশি এই যত দামী তত ভালো কার্যকর এমনটায় চলে আসছে।
আর কেমোর জন্য রোগীরা দেশি-বিদেশি-ভারতীয়-জার্মানীর কোন ওষুধ ব্যবহার করবেন তা চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী রোগীর স্বজনেরা কিনে থাকেন। এর বাইরে ক্যানসার রোগী কোথায় চিকিৎসা নিচ্ছেন সাধারণ সরকারি হাসপাতাল সেখানে তো আসন সংকট। তাছাড়া সবাই তো সেখানে যাবেন না।
তাই ক্যানসার চিকিৎসায় খরচ বাড়ে লাফিযে লাফিয়ে। রোগী স্বেচ্ছায় বা বাধ্য হয়েই যান ‘ফোন স্টার’ বা ‘ফাইভ স্টার’ হাসপাতালে। কারো আরো বেশি সামর্থ থাকেলে দেশে না বিদেশে ছুটছেন জীবন বাঁচাতে। ফিরে পেতে প্রিয় একটা প্রাণ। তবে দরিদ্র আর বিত্তবান ক্যানসার আক্রান্ত এক এক জনকে পাড়ি দিতে হয় দারুন বন্ধুর চড়াৎ-উৎরাই এক পথ। যে পথ এক জন দরিদ্র রোগী হয়ত গ্রামের প্রত্যন্ত থেকে উপজেলা-জেলা হাসপাতাল হয়ে তাবিজ-কবজ-ওঝা-কবিরাজ করে দীর্ঘ পথ পেরিয়ে একটা পর্যায়ে ঢাকার ক্যানসার হাসপাতালে পৌছে তাদের কাঙ্খিত চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার আওতায় এসেছেন।
চিকিৎসার জন্য চিকিৎসক ও হাসপাতালে ভর্তির অনন্য সুযোগে মৃত্যু খাদের কিঞ্চিত দুর থেকে ফিরেছেন ক্যানসারজয়ী এক এক জন। কিন্তু কেমো আর রেডিয়েশনের যে কষ্ট-যন্ত্রনা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তা ধনী-দরিদ্র সব রোগীই সমান ভাবেই উপলদ্ধি করেছেন। দীর্ঘ রোগ যন্ত্রনার এক একটি মুহূর্ত পাড় করেছেন হাজার বছর সমান উপলদ্ধিতে। নতুন ভোরের অপেক্ষায় দীর্ঘ পথ পাড়ি দেয়া এক এক জন ক্যানসার জয়ীর গল্পগুলোও একই। সব ক্যানসার জয়ীরাই জীবনের বাকী দিনগুলো ফেলে আসা দীর্ঘ পথ পাড়ি দেবার স্মৃতিতে প্রতিদিনের জীবন মাপেন প্রতিটি ক্ষণে। প্রতিদিনই ক্যানসার জয়ীরা জীবনকে ফিরে পাবার আনন্দ নিয়ে ওপর ওয়ালার কাছে কৃতজ্ঞতায় শেষ ও শুরু করেন মহামুল্যাবান এক-একটি দিন।