মানব শহীদ মিনার। মানব স্মৃতিসৌধ। মানব পিরামিড। মানবসেতু। এরকম স্থাপনা প্রদর্শনী বা ডিসপ্লের সময় মঙ্গলবার এক কাল্পনিক ‘পদ্মাসেতু’-তে চড়ে বসেছেন চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নূর হোসেন পাটোয়ারী। ঘটনাটি ঘটেছে স্কুলটির বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে। যেসব মানবের ওপরে তিনি উঠেছেন তারা নীলকমল উছমানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র।সাধারণত চীন-জাপানে সার্কাসে বেশ কসরত করে এগুলো দেখানো হয়। তাও বেশ পেশাদাররা সেটা করে। তবে বাচ্চাদের পিঠের ওপরে চেপে পদ্মাসেতু পার হওয়াটা কতটা উচ্ছ্বসিত হওয়ার মত তা ঠিক বোধগম্য নয়। কি বিমর্ষতা নিয়ে তাকিয়ে দেখেছি চেয়ারম্যান পাটোয়ারীর বীরদর্পে সেতু পার এবং সেতু পার শেষে তার বিগলিত হাসি? যদিও চেয়ারম্যান এখন পড়েছেন বেশ তোপের মুখে, কিন্তু সব ছাত্র আর প্রধান শিক্ষকের অনুরোধেই নাকি তিনি ‘বাধ্য’ হয়ে এই কাজ করেছেন জানিয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। ঘটনাটি স্রেফ প্রতীকি এবং পদ্মাসেতুকে তুলে ধরাটাই ছিল মূল লক্ষ্য, জানিয়েছেন প্রধান শিক্ষক। বহু চেষ্টা করেও পাটোয়ারী চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি চ্যানেল আই অনলাইনের পক্ষ থেকে কারণ তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। অবশ্য, স্কুল ছাত্রদের পিঠের ওপর দিয়ে মানবসেতু পার হওয়ার ঘটনাটি অনেকদিন ধরেই চলছে। সর্বশেষ ২০০৯ সালে এমনই এক মানবসেতু পার হয়েছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুকেশ বাবু। তিনিই কী এই অস্বাভাবিকতার পথ দেখিয়ে গিয়েছেন কি না তা এই মুহূর্তে সঠিক করে বলা যাচ্ছে না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইমরান এইচ সরকার এই ঘটনার তীব্র সমালোচনা করে এই জনপ্রতিনিধিকে ‘বদমাশ’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। আমাদের প্রশ্ন এরকম একটি কাজের জন্য কোন শাস্তির বিধান কি আদৌ আছে? থাকলে সেই শাস্তির মাত্রাই বা কেমন? আর যিনি এই কাজটি করলেন, তাকে শুধু গালাগাল দিয়েই কি আমরা থেমে যাব? এরকম একজন মানুষ কোন অপরাধে আসলে অভিযুক্ত হবে? এরকম বর্বরতার ভেতরে আনন্দ উল্লাসের কী সম্পর্ক বা ছাত্ররাও এই কাজটি করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে কি না তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। নাকি বাধ্য হয়েই তাদের পিঠ পেতে দিতে হচ্ছে। ছাত্রদের নগদ পাঁচ হাজার টাকা নজরানা/বখশিস দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি বিশ্বাস করতে বেশ কষ্ট হচ্ছে আমাদের। কৌতুক করে বললে বলা যায়, যদি এই ঘটনাটি ভাষার মাসে ঘটতো আর ছাত্রদের গড়া মানব শহীদ মিনারের ওপর দিয়ে চেয়ারম্যান সাহেব আরও বেশি অমানবিক উপায়ে উঠে পড়তেন, তাহলে কেমন হত? এরকম কোন বিকারগ্রস্ত পরিকল্পনা ভবিষ্যতে অন্য কারও আছে কিনা তা আমাদের অজানা। পদ্মাসেতুর নির্মাণকাজ আমাদের জন্য গৌরবের। এমন একটি গৌরব সবার সামনে তুলে ধরার এই বিকৃত প্রক্রিয়ায় বাচ্চা স্কুল ছাত্রদের শরীরের ওপর দিয়ে যখন একজন জনপ্রতিনিধি হেঁটে যান, তখন অবাক হই কীভাবে এই গৌরবে আমরা গৌরবান্বিত হব? ভীষণ লজ্জিত হই আমরা। চেয়ারম্যান পাটোয়ারীর হেঁটে যাওয়া যেন অন্তহীন একটি জিজ্ঞাসাচিহ্ন হয়ে রইলো আমাদের কাছে। এই অমানবিকতার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কামনা করে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।