নির্বাচন কমিশনকে কোমর সোজা করে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব ও ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শুক্রবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জে নির্বাচনী জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি মহাসচিব। এসময় দেওয়া বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচন কমিশন ঠুঁটো জগন্নাথ। আমরা যা বলি তা শুধু শুনেন। কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেন না। অসহায়। নির্বাচন কমিশনকে বলতে চাই, কোমর সোজা করে দাঁড়ান৷ সংবিধান ও রাষ্ট্র আপনাকে যে দায়িত্ব ও ক্ষমতা দিয়েছে তা সঠিকভাবে পালন করুন। না পারলে চলে যান। কিন্তু কোনো অন্যায় করবেন না। অন্যায় করলে জনগণ মেনে নিবে না।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সিইসি বলেছেন, দেশে নাকি গণতন্ত্রের সুবাতাস বইছে। সুবাতাস কেমন? সুবাতাস কি জনগণ নির্বাচনী সভায় আসতে না পারার সুবাতাস? বিরোধীদের প্রচার করতে না দেয়া ও মাইক লাগাতে না দেয়ার সুবাতাস? কী চমৎকার নির্বাচন! কিন্তু এই নির্বাচনেই আমাদের জিততে হবে। ৩০ তারিখ নির্বাচনে সিদ্ধান্ত হবে দেশের মানুষ কি আলোতে যাবে নাকি অন্ধকারে থাকবে, স্বাধীন থাকবে নাকি পরাধীন, গণতন্ত্রের পথে থাকবে নাকি স্বৈরতন্ত্রে থাকবে, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি আসবে নাকি আসবে না।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, গত ২ সপ্তাহ আগে আমি বেগম খালেদা জিয়াকে দেখতে গিয়েছিলাম। তিনি অত্যন্ত অসুস্থ। হুইল চেয়ারে চলতে হয় তাকে। এর মধ্যেও তার মুখে কোনো হতাশা দেখিনি। তিনি বলেছেন, তোমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে জয় ছিনিয়ে আনো। তাহলে আমার মুখে হাসি ফুটবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, বন্ধুরা গণতন্ত্রের মায়ের মুখের হাসির জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ শিকার করে ধানের শীষে ভোট দিতে হবে। আপনি একটি ভোট দেবেন। আর বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে৷ এই প্রার্থীরা হলেন খালেদা জিয়ার প্রার্থী।
সরকারের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, তারা বারবার বলে দেশের উন্নয়ন হয়েছে। হ্যাঁ উন্নয়ন হয়েছে, উন্নয়ন হয়েছে তাদের। তাদের পকেট ভারী হয়েছে। বিদ্যুতের দাম, গ্যাসের দাম, পানির দাম, চালের দাম, বাড়ি ভাড়ার দাম বাড়ছে। রাস্তায় খানাখন্দে ভরা। শেয়ারবাজার লুট করেছে,, ব্যাংক লুট করেছে। বলেছিলো ঘরে ঘরে তরুণদের চাকরি দিবে। হ্যাঁ, চাকরি আছে৷ তবে ১২ লক্ষ খরচ করে চাকরি পেতে হয়। তাও ডিএনএ টেস্ট করে আওয়ামী লীগ হতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা ক্ষমতায় গেলে তরুণদের চাকরি দিব। চাকরি না হওয়া পর্যন্ত বেকার ভাতা দিব৷ আমরা মেয়েদের বিনা বেতনে উচ্চশিক্ষা করার সুযোগ দিব, সকল হত্যাকাণ্ডের বিচার হবে। এই দেশে ধর্মীয় স্বাধীনতার উপর আঘাত দেয়া যাবে না।৷ দাড়ি টুপি পরলেই জঙ্গি বললে চলবে না। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানদের উপর হামলা করা যাবে না৷ সব ধর্মের দেশ বাংলাদেশ৷
জনসভায় আরো বক্তব্য রাখেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, ডা. জাফর উল্লাহ চৌধুরী, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা তৈমুর আলম খন্দকারসহ নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন আসনের প্রার্থীরা।
এর আগে দুপুর ২টা ২০ মিনিটে গুলশান থেকে ফখরুলের গাড়িবহর নারায়ণগঞ্জের উদ্দেশে রওনা দেয়। যাত্রাবাড়ি পেরিয়ে মহাসড়কের মোড়ে মোড়ে পুলিশকে নিরাপত্তা দিতে দেখা যায়।
কাঁচপুর ব্রিজ অতিক্রম করে সোনারগাঁও উপজেলায় এসে সামনে হামলার আশংকা থেকে হঠাৎ গাড়িবহর থেমে যায়। এসময় নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের বিএনপি প্রার্থী এসে নারায়াণগঞ্জ পুলিশ সুপারকে ফোন দিয়ে ঘটনাস্থলে ডেকে আনেন। বন্দর এলাকায় হামলা হতে পারে আশংকা থেকে পুলিশ সুপার স্বয়ং এসে নিরাপত্তা দিয়ে জনসভাস্থলে ফখরুলের গাড়িবহর পৌঁছে দেন।