চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

কোপা আমেরিকা ‘বয়কটে’ অধিনায়করা কে কি বলছেন

কনফেডারেশনগুলোর হাতে অর্থ নেই। করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ অবস্থায় থাকার পরও তাই কোপা আমেরিকা আয়োজনে বদ্ধপরিকর কনমেবল। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে টুর্নামেন্টের দুসপ্তাহ আগে নতুন আয়োজক হিসেবে ব্রাজিলের নাম ঘোষণা করে নতুন বিপদে পড়েছে লাতিন ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। খোদ ব্রাজিল দল-কোচের কেউই চান না টুর্নামেন্ট মাঠে গড়াক।

ব্রাজিল দল শুধু একা নয়, সঙ্গী হিসেবে আরও কয়েক প্রতিবেশী দেশের খেলোয়াড়দের পাশে পাচ্ছে তারা। সংখ্যাটা দিন দিন বাড়ছে। সামনের সারির দলগুলোর অধিনায়ক বা তারকা খেলোয়াড়রা মুখ খুলতে শুরু করেছেন। বলতে গেলে আর্জেন্টিনা দলপতি লিওনেল মেসি ছাড়া কোপার দলগুলোর প্রায় সব অধিনায়কই মুখ খেলেছেন।

মেসি-নেইমার-সুয়ারেজদের মহাদেশীয় টুর্নামেন্ট কোপার ২০২১ আসর ব্রাজিলে আয়োজনের সিদ্ধান্তের পর এদিকে সূচিও জানিয়ে দিয়েছে কনমেবল। গত বৃহস্পতিবার তারা জানিয়েছে, ১৩ জুন ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে ব্রাজিলের ম্যাচ দিয়ে পর্দা উঠবে শতবর্ষী প্রতিযোগিতাটির। ১৪ জুন আর্জেন্টিনার টুর্নামেন্ট শুরু হবে চিলির বিপক্ষে।

টুর্নামেন্টের ফাইনাল গড়াবে রিও ডি জেনিরোর বিখ্যাত মারাকানা স্টেডিয়ামে, পর্দা নামা ম্যাচটি ১০ জুলাই। ব্রাজিল টানা দ্বিতীয়বারের মতো কোপার আয়োজক হচ্ছে। প্রতিযোগিতাটির বর্তমান চ্যাম্পিয়নও তারা। এবার তাদের গ্রুপ বি-তে আছে কলম্বিয়া, ইকুয়েডর ও পেরু। আর্জেন্টিনার গ্রুপ এ-তে চিলির পাশাপাশি আছে বলিভিয়া, প্যারাগুয়ে ও উরুগুয়ে।

শুরুতে আয়োজক ছিল না ব্রাজিল। দুই আয়োজক কলম্বিয়াতে ১৫ ও আর্জেন্টিনায় ১৩টি করে ম্যাচ হওয়ার কথা ছিল। অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতায় কলম্বিয়া, করোনা পরিস্থিতির বাড়ন্ত দশায় আর্জেন্টিনা বাদ পড়ে যৌথ আয়োজকের খাতা থেকে। তাদের দূরে রাখার সিদ্ধান্ত নেয়ার পর টুর্নামেন্টের নতুন আয়োজক হিসেবে ব্রাজিলকে বেছে নেয় কনমেবল। এরপরই গোল বাধতে থাকে।

ব্রাজিল অধিনায়ক কাসেমিরো প্রথমে বেঁকে বসেন। তার আগে সেলেসাও কোচ টিটে সংবাদ মাধ্যমের সামনে জানিয়ে যান কাসেমিরো কোপা ব্রাজিলে আয়োজনের বিপক্ষে, তাই ইকুয়েডরের বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচের আগে প্রেস কনফারেন্সে আসেননি।

ব্রাজিল দলপতি বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচ খেলে গত শনিবার গণমাধ্যমের সামনে এসে নিজ মুখেও সেটি বলে যান। নিজ দেশে টুর্নামেন্ট না আয়োজনের পক্ষে কাসেমিরো পুরো দল-কোচের সঙ্গে সেরা খেলোয়াড় নেইমারকে সঙ্গী পেয়েছেন ভালোমতোই। দুজনে অন্য দেশগুলোর অধিনায়ককে নিজেদের মতামতের দলে টানতে যোগাযোগ করে চলেছেন বলে খবর।

কোপা নিয়ে কলম্বিয়া দলই যেমন নিজেদের মতামত জানাতে দেরি করেনি। দেশটির প্রফেশনাল ফুটবলারদের অ্যাসোসিয়েশন স্পষ্টই জানিয়ে দিয়েছে, করোনা পরিস্থিতির মধ্যে টুর্নামেন্ট আয়োজন নিয়ে দেশটির খেলোয়াড়রা উদ্বিগ্ন। অধিনায়ক হুয়ান কুয়াদ্রাদো মুহূর্তেই সেই কথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করে নিজের অবস্থানের জানান দিয়েছেন।

উরুগুয়ের পুরো সমর্থন পাচ্ছে ব্রাজিল। লুইস সুয়ারেজ, এডিনসন কাভানি, ফের্নান্দো মুসলেরা প্রকাশ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন আগে খেলোয়াড়দের স্বাস্থ্যের বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। সুয়ারেজ সরাসরি বলে দিয়েছেন, ‘আমি কোপা আমেরিকায় খেলার বিপক্ষে।’

লিওনেল মেসির জন্য অপেক্ষা। কোপায় খেলতে যাওয়া অন্য দেশগুলোর অধিনায়ক যখন আয়োজনের বিরুদ্ধে সরব, তখন বিস্ময়করভাবে চুপ আছেন লিওনেল মেসি। আর্জেন্টিনা দলপতি এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি। মুন্ডো দেপোর্তিভো অবশ্য বলছে, মেসির মত তার বন্ধু নেইমারের দলের মতের পক্ষেই যাবে!

মুখ খুলি খুলি করছে চিলিও। কোপা এই অবস্থায় আয়োজন না করতে মুখ খোলাদের দলে পরের নামটি হয়ত চিলি। দলটির অধিনায়ক গোলরক্ষক ক্লদিও ব্রাভোর সঙ্গে মেসি-সুয়ারেজ-নেইমারের সম্পর্ক খুব ভালো। বার্সেলোনায় তারা একই ড্রেসিংরুম শেয়ার করেছেন, একসাথে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতেছেন। পুরনো সতীর্থের কথা ব্রাভো ফেলতে পারবেন না বলেই মার্কা আভাস দিচ্ছে।

অবশ্য ব্যতিক্রমও আছে। বলিভিয়াই যেমন। দেশটি চাচ্ছে কোপা আমেরিকা আয়োজন হোক সঠিক সময়েই। কাসেমিরো-নেইমাররা যদিও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। খবর এসেছে ইকুয়েডর ম্যাচের পর দলপতি আর্তুন প্রেসিয়াদো ও ইনার ভ্যালেন্সিয়ার সামনে নিজদের মত তুলে ধরেছেন নেইমার। চেয়েছেন সমর্থনও।