এই মুহূর্তে দেশে নেই কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ। জারি হয়নি যুদ্ধাবস্থাও। বলতে গেলে, সবকিছুই স্থিতিশীল। তারপরও মাত্র ২৪ ঘণ্টার কম সময়ের ব্যবধানে বাজারে পেঁয়াজের দাম কেজি প্রতি ৪০ থেকে ৫০ টাকা বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। যে পেঁয়াজ গতকাল বিকালেও ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, আজ তা ৯০ থেকে ১০০ টাকা কেজি।
পেঁয়াজের এমন অস্বাভাবিক দাম বাড়তে দেখে অনেকেই হয়তো মনে করতে পারেন, দেশ থেকে পণ্যটি হঠাৎ উধাও হয়ে গেছে! কিংবা রাতারাতি কেউ সব পেঁয়াজ খেয়ে হাপিস করে দিয়েছে! কিন্তু তা না। মূলত একদল মুনাফা লোভী ব্যবসায়ীর যোগসাজশে এটা হয়েছে। তবে উপলক্ষটা ভারত। নিজেদের বাজার সামলাতে দেশটি পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করেছে। এরই মধ্যে সেখানে প্রতি কেজির দাম ৫০ রুপি ছাড়িয়েছে।
ধরে নিলাম ভারত তার সুবিধা অনুযায়ী হঠাৎ করেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে ভবিষ্যতে অসুবিধায় পড়বে বাংলাদেশ। কারণ আমদানির জন্য যেসব এলসি খোলা হয়েছিল, সেগুলো এদেশে পৌঁছাতে কমপক্ষে দুই সপ্তাহ থেকে এক মাস সময় লাগতো। কিন্তু ভারতের ঘোষণার কয়েকঘণ্টার মধ্যেই এদেশে পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দেওয়া হলো কোন যুক্তিতে?
কৃষি ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে প্রতি বছর আমাদের দেশে পেঁয়াজের চাহিদা প্রায় ৩০ লাখ মেট্রিকটন। এর বিপরীতে দেশেই উৎপাদন হয় প্রায় ২১ লাখ মেট্রিকটন। বাকি ৯ লাখ মেট্রিকটন ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হয়। নতুন পেঁয়াজ আসার এখনো কয়েকমাস বাকি। হিসাব অনুযায়ী দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজের বড় একটা অংশ এখনো মজুদ আছে। সেটা শেষ হলেই না আমদানির চিন্তা। ভারত বন্ধ করেছে তাতে কি? আমদানির জন্য পৃথিবীর আরও অনেক দেশ তো আছেই।
আমাদের প্রশ্ন মজুদ থাকার পরও কেন পেঁয়াজের দাম প্রায় দ্বিগুণ হলো? গত বছরও আমরা দেখেছিলাম, ঠিক এমনভাবেই দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। যে ব্যবসায়ীরা তা করেছিলেন, সরকার তাদের তালিকাও করেছিল। কিন্তু দুঃখজনক ব্যাপার হলো, ৩’শ টাকা পেঁয়াজ বিক্রি করা সেই ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। আর সে কারণেই এ বছরও সেই ব্যবসায়ীরাই কলকাঠি নেড়ে পেঁয়াজের দাম একদিনেই দ্বিগুণ করেছে।
আসল কথা অতি মুনাফা লোভী ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে দেশ ও দেশের মানুষ। কোনোভাবেই সেই লোভী ব্যবসায়ীদের থাবা থেকে মুক্তি মিলছে না মানুষ। সেটা চাল, চিনি, তেল কিংবা অন্য কোনো নিত্যপণ্য। এখানে তাদের সাম্রাজ্য। সেই সাম্রাজ্যে তাদের হুকুম চলে। এ জন্যই তারা সবকিছুর ঊর্ধ্বে।
আমরা মনে করি, এই সমাজটা মগের মুল্লুক না। দেশ ও মানুষের স্বার্থে এই ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। তা হলে সাধারণ মানুষের মুক্তি মিলবে না এদের হাত থেকে।