মাত্র কয়েক মাস আগেই স্পেন এবং ইউরোপ সেরা হয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। ইতিহাসের প্রথম দল হিসেবে টানা দুবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা জিতেছে তারাই। যার পথ ধরে মাদ্রিদের রাজকীয় দলটি বিশ্বের সেরা হিসাবেই স্বীকৃত ছিল।
কিন্তু ঘরোয়া লিগে লস ব্ল্যাঙ্কসরা চরম বিপদে, মৌসুমের শুরুতেই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বার্সেলোনার চেয়ে ৮ পয়েন্টে পিছিয়ে পড়েছে তারা। রিয়াল আগে কখনোই লিগে এত বড় ঘাটতির মুখোমুখি হয়নি।
রিয়াল মাদ্রিদের এমন কি হল যে, বিশ্বসেরা দলটি এখন হতাশার কেন্দ্রে পরিণত হল। গত সপ্তাহেই ফিফরো ওয়ার্ল্ড একাদশেও যাদের পাঁচজন খেলোয়াড় ছিল। কোন গেরো আটকে গেল জিনেদিন জিদানের দল?
স্কোয়াডের গভীরতা
দলীয় শক্তির গভীরতার কারণেই ইউরোপিয়ান ফুটবলের হিংসারপাত্র হয়ে উঠেছিল রিয়াল। বার্নাব্যুতে বা বার্নাব্যুর বাইরে রিয়ালকে যারা পরীক্ষায় ফেলতে চায় সেসব ক্লাব জানে যে, রিয়াল যদি নিয়মিত খেলোয়াড়দের মধ্যে থেকে কোনও খেলোয়াড়কে সরিয়ে দেয় বা বিকল্প খাড়া করায় তাহলে তাদের জন্য কাজটি আরও জটিল হবে।
কোচ জিদান অবিশ্বাস্য ভাবে ‘প্ল্যান বি’ নামে পরিচিত হয়ে উঠতে চাচ্ছিলেন বা যাচ্ছিলেন। এই প্ল্যানে যখন যে খেলোয়াড়কে এনেছেন তারাই ভাল করেছেন। যাতে করে বিশ্বের সেরা ব্যাক আপ টিমও হয়ে উঠছিল রিয়াল। রোনালদো, বেল ও বেনজামার জায়গায় কম যাননি সেবেলস-অ্যাসেনসিওরা।
জিদানের ব্যাক আপ টিমে আলভারো মোরাতা, জেমস রদ্রিগেজ এবং পেপের মত খেলোয়াড়কেও প্রথম একাদশে জায়গা পেতে যুদ্ধ করতে হয়েছে। পরে তাদের সবাইকে ছেড়ে দেয় রিয়াল। মোরাতা চেলসিতে, রদ্রিগেজ বায়ার্ন এবং পেপে গেছেন তুর্কি ক্লাব বেসিকতাসে।
যদিও এই সময়ে দানি সেবালস, থিও হার্নান্দেজ, জেসাস ভালেজো, মার্কোস লরেন্ত এবং বোর্জা মায়োরালের মত কিছু হটেস্ট তরুণকে দলে স্বাক্ষর করায় রিয়াল। তবে এটা তাদের জন্য যথেষ্ট নয়।
প্রতিভাধর এই তরুণদের রিয়ালের ভবিষ্যৎ হিসেবে ধরে নিয়েই দলে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই মুহূর্তে গেম চেঞ্জার বিষয়ে তাদের উপর নির্ভর করা যাচ্ছে না।
লেট গোলের অভাব
আগের মৌসুমেও পিছিয়ে পড়ে শেষ মুহূর্তের গোলে অনেক ম্যাচ জিতেছে রিয়াল। কিন্তু চলতি মৌসুমে গেটাফের বিপক্ষে রোনালদোর শেষ মুহূর্তের গোল ছাড়া আর কোনও গোল পায়নি চ্যাম্পিয়নরা। উল্টো রিয়াল বেটিসের কাছে ৯৩ মিনিটে গোল হজম করে ম্যাচ হেরেছে তারা।
অতি আত্মবিশ্বাস
গত মৌসমের সাফল্যের কারণে অতি আত্মবিশ্বাসে ভুগছে রিয়াল। যার ছাপ দেখা গেছে সবশেষ জিরোনা ম্যাচেও। শুরুতে ইসকোর গোলে এগিয়ে থেকেও শেষ পর্যন্ত তারা ম্যাচ হারে ২-১ গোলে। তবে জিদান এটা বলতে পারবেন না যে, জিরোনাকে হালকাভাবে নিয়েছিলেন তারা। বরং স্কোয়াডে সম্ভব্য সেরাদেরই মাঠে নামিয়েছিলেন তিনি। রাজনৈতিক উত্তাপের ম্যাচে প্রথম লিড নিয়ে মাটিতে পা রাখতে পারেনি মাদ্রিদের রাজারা।
ম্যাচ শেষে ইসকোর কথায় সেটা ধরাও পড়েছে, ‘আমাদের মনোভাবে ঘাটতি ছিল, আমরা তাদের খুব সহজেই ম্যাচে ফিরে আসার সুযোগ দিয়েছি।’
স্ট্রাইকার সমস্যা
মোরাতাকে বিক্রির পর রিয়ালের সর্বেসর্বা স্ট্রাইকার হয়ে দাঁড়িয়েছেন করিম বেনজামা। কিন্তু বেনজামা কখনোই সপ্তাহের পর সপ্তাহ গোল করার জন্য পরিচিত নন। তিনি খেলেন এবং গোল করেন রোনালদো বা বেলে কারণে।
এই মৌসুমটা আবার তিন জনের জন্য ভাল যাচ্ছে না। বেলের ইনজুরি আর রোনালদোর নিস্পভ্রতার কারণে গোলমুখ খুঁজে পেতে কষ্ট হচ্ছে রিয়ালের। যেটা তারা গত মৌসুমে দিনের পর দিন করে গেছে।
নিষেধাজ্ঞার কারণে প্রথম চার ম্যাস খেলতে না পারা রোনালদো লিগের ছয় ম্যাচে মাত্র একটি গোল করতে পেরেছেন। রিয়ালে যোগ দেওয়ার পর এটাই তার সবচেয়ে বাজে শুরু।
ইনজুরি সমস্যা
রিয়ালের করুন হালের জন্য রোনালদোর ওপর সব দোষ চাপানোটা অন্যায় হবে। চলতি মৌসুমে এ পর্যন্ত ১২ ম্যাচে ১০ জন খেলোয়াড় ইনজুরিতে পড়েছেন। দানি কাভাহালের সঙ্গে বুধবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগে টটেনহ্যামের বিপক্ষে খেলতে পারছেন না নাভাস ও বেল।
নিশ্চিতভাবেই মাদ্রিদের একটি প্রতিভাবান স্কোয়াড আছে। তবে রিয়ালকে এখনই ঘরোয়া সমস্যায় নজর দিতে হবে। অন্যথায় ২৩ নভেম্বরের ক্লাসিকোর আগেই আকাশছোঁয়া দুরত্বে চলে যাবে বার্সেলোনা।