শফিউল বারী রাসেল, জয়পুরহাট প্রতিনিধি: জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার কানমোনা-হারাবতি খালের ওপর নির্মিত কানমোনা-হারাবতি সেচ প্রকল্প ও নুনগোলা খালের ওপর নির্মিত ‘কাদিরপুর-বাখড়া’ সেচ প্রকল্প যে উদ্দেশ্যে বাস্তবায়ন করা হয়েছিল তা পূরণ হয়নি। পানির সুষ্ঠ ব্যবস্থাপনা ও আর্থসামাজিক উন্নয়নে এ দুটি প্রকল্পে প্রায় এক কোটি টাকা ব্যয় হলেও তা কৃষকের কোন কাজেতো আসছেই না, বরং তা কৃষকের গলার ফাঁস হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরেজমিনে অনুসন্ধানে স্থানীয় কৃষকদের এমন অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে ভিন্ন কথা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ উন্নয়ন সেক্টর প্রকল্পের আওতায় কৃষি ফসলের সেচ সুবিধা নিশ্চিত করতে ১৯৯৮ সালে কালাই উপজেলার মাত্রাই, উদয়পুর ও আহম্মেদাবাদ ইউনিয়নের উপর দিয়ে প্রবাহিত কানমোনা-হারাবতি খালের ওপর ‘কানমোনা-হারাবতি সেচ প্রকল্প’ এবং ২০০৫ সালে এলজিইডি’র একই প্রকল্পের আওতায় উপজেলার জিন্দারপুর ইউনিয়নের নুনগোলা খালে ‘কাদিরপুর-বাখড়া’ সেচ প্রকল্প গ্রহন করা হয়। ‘কানমোনা-হারাবতি সেচ প্রকল্প’ খালখনন ও স্লুইচ গেইট নির্মাণসহ বাস্তবায়ন খরচ হয় প্রায় ৫০ লাখ টাকা। আর ‘কাদিরপুর-বাখড়া’ সেচ প্রকল্পেও ব্যয় হয়েছে প্রায় ৫০ লাখ টাকা। এরমধ্যে কানমোনা খালের রোয়াইর দীঘি এলাকায় স্লুইচ গেইট নির্মানে ৩০ লাখ টাকা এবং নুনগোলা খালের বেলগাড়িয়া এলাকায় ২৮ লাখ ৯৩ হাজার ৭৭৬ টাকায় ৩ ভেন্ট রেগুলেটর ও কাদিরপুর গ্রাম সংলগ্ন এলাকায় প্রায় ৬ লাখ টাকা ব্যয়ে অপারেশন মেইনটেন্স শেড নির্মাণ করা হয়। অবশিষ্ট টাকা ব্যয় করা হয়েছে খাল খনন কার্যে।
সেসময় পানির সুষ্ঠ ব্যবস্থাপনা ও আর্থসামাজিক উন্নয়নে প্রকল্পের সুফলভোগী কৃষকদের নিয়ে পৃথক দুটি পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতিও গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু প্রকল্পের আওতায় তদারকি প্রতিষ্ঠান এলজিইডি’র উদাসীনতা এবং সংশ্লিষ্ট পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির স্থবিরতার কারণে এ দু’টি সেচ প্রকল্প কৃষকের নূন্যতম উপকারে আসছেনা।
সরেজমিনে প্রকল্প এলাকাগুলোতে গিয়ে দেখা গেছে, বর্তমানে এ দুটি প্রকল্প এলাকায় শুষ্ক মৌসুমতো দুরের কথা ভরা মৌসুমেও পানি শুন্য থাকে। বর্ষাকালেও পানি ধরে রাখা যায় না। তার উপর ওই দুই প্রকল্প এলাকায় অপরিকল্পিতভাবে একাধিক স্লুইচ গেইট নির্মান করায় ভরা বর্ষা মৌসুমে অতিবৃষ্টি বা টানাবৃষ্টির পানি প্রবাহে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হওয়ায় আশেপাশের গ্রামসহ এলাকার শত শত বিঘা ফসলি জমি বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। তাছাড়া সঠিক ভাবে প্রকল্প দুটি পরিচালনার অভাবে ও যন্ত্রাংশ ব্যবহৃত না হওয়ার কারনে অযত্ন-অবহেলায় সেগুলোও অকেজো হয়ে পরে আছে। চুরি হয়ে গেছে এই দুটি প্রকল্পের অনেক মূল্যবাদ যন্ত্রাংশও। অথচ এ দু’টি সেচ প্রকল্প বাস্তবায়নে এরই মধ্যে সরকারের খরচ হয়ে গেছে প্রায় এক কোটি টাকা। কিন্তু প্রকল্প দুটি কার্যত কৃষকের কোন উপকারেই আসেনি বরং তা কৃষকের গলায় ফাঁস হয়ে দাড়িয়েছে এমনই অভিযোগ এলাকাবাসীর।
উপজেলার বাখড়া গ্রামের কৃষক মোকলেছুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, প্রায় অর্ধকোটি টাকা খরচ হয়ে যাওয়া কাদিরপুর-বাখড়া সেচ প্রকল্পটি এলাকার কৃষি ক্ষেত্রে মাইলফলক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা না হয়ে প্রকল্পটি এখন এলাকার কৃষকদের জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাছাড়া সঠিক ভাবে তদারকি না থাকায় সুইচগেটের সব কিছুই চুরি হয়ে গেছে।
উপজেলার রোয়াইর গ্রামের কৃষক দারাজ উদ্দিন বলেন, কানমোনা-হারাবতি সেচ প্রকল্পটি কৃষকদের কোন উপকারে আসেনি। উল্টো বর্ষাকালে এ সুইচ গেটের কারণে এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। এখন ইরি-বোরো মৌসুম। খালে পানি না থাকায় যে যার মত করে ফসল লাগিয়েছে।
এ ব্যাপারে এলজিইডি’র সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী গোলাম মোরশেদ বলেন,‘কানমোনা-হারাবতি’ ও ‘কাদিরপুর-বাখড়া’ সেচ প্রকল্প’দুটি কৃষকের কোন উপকারে আসেনি এমন অভিযোগ সত্য নয়। তবে প্রকল্প’দুটি সংস্কার করতে হবে। এ জন্য অর্থের প্রয়োজন। অর্থপ্রাপ্তি সাপেক্ষে দ্রুত সংস্কারের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।