কোটা বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির মতামতের প্রতিক্রিয়ায় কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা বলছে, সব মিলিয়ে কোটা ১৫ শতাংশের বেশি হলে তারা মানবে না।
কোটা বাতিল করে জাতীয় সংসদে দেয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণার পরও সংসদীয় কমিটি তা পুরোপুরি বাতিল না করে কোটা সংস্কারের পক্ষে মত দিয়েছে।
রোববার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এজেন্ডাভুক্ত না হলেও কোটা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে।
বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি এইচএন আশিকুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন: প্রধানমন্ত্রী কোটা বাতিলের কথা বলেছেন ঠিকই। কিন্তু আমাদের কিছু দায়বদ্ধতা রয়েছে। দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা রয়েছে। ইতিহাসের (মুক্তিযুদ্ধ) প্রতি দায়বদ্ধতা রয়েছে। আঞ্চলিকতার প্রতি দায়বদ্ধতা রয়েছে। পিছিয়ে পড়া নৃগোষ্ঠীর প্রতিও আমাদের দায় আছে।
‘‘সংবিধানে সমতার কথা বলা আছে। পিছিয়ে পড়া গোষ্ঠীর সুযোগ সুবিধার কথা বলা হয়েছে। এসব বিবেচনা করে আমরা কোটা পদ্ধতি সহজীকরণের কথা বলেছি। যুক্তিযুক্ত সংস্কারের কথা বলেছি। পাশাপাশি এই কোটা নিয়ে যেন কোনও ষড়যন্ত্র ও দুরভিসন্ধি না হয়, সে কথা বলেছি।’’
এ বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক, এ. বি. এম ফজলে করিম চৌধুরী, র.আ.ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, মুস্তফা লুৎফুল্লাহ, খোরশেদ আরা হক এবং জয়া সেনগুপ্ত।
সংসদীয় কমিটির এ মতামতের পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের মূল মঞ্চ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: আমরা কখনওই কোটা পদ্ধতি বাতিল চাইনি। শুরু থেকেই আমরা সংস্কারের কথা বলে আসছি। আমরা বারবার বলেছি রাষ্ট্রের কল্যাণে যারা কোটা সুবিধা পেয়ে আসছে তাদের সেই সুবিধাটা দেওয়া হোক। তবে অবশ্যই সেটা যৌক্তিক এবং সহনীয় পর্যায়ে হতে হবে। আমরা সব মিলে ১০ শতাংশ কোটার কথা বলেছি সেটা ১৫ শতাংশ হতে পারে।
‘‘তবে ১৫ শতাংশের বেশি হলে আমরা মানবো না’’ বলেন হাসান আল মামুন।
তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী সংসদে দাঁড়িয়ে একটা বক্তব্য দিয়েছেন। আমরা অবশ্যই তার বক্তব্যের ব্যাপারে শ্রদ্ধাশীল। তিনি দেশে ফিরলেই এ ব্যাপারে প্রজ্ঞাপন হবে বলে আশাকরি।
গত ফেব্রুয়ারি থেকে চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন ব্যাপকতা লাভ করে গত ৮ এপ্রিল থেকে। ওইদিন পাঁচ দফা দাবিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতাকর্মীরা রাজধানীর শাহবাগে পূর্ব ঘোষিত অবস্থান কর্মসূচি শুরু করে। এক পর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে তারা।
সেদিন রাতভর সংঘর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় চলে পুলিশ ও আন্দোলনকারীদের তাণ্ডব। আক্রান্ত হয় উপাচার্যের বাসভবনও। প্রতিটি কক্ষে ঢুকে সবকিছু তছনছ করে একদল মুখোশধারী।
পরেরদিন সোমবার তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে সরকারের প্রতিনিধি দলের সাথে আলোচনার পর ১ মাসের জন্য চলমান অান্দোলন স্থগিত ঘোষণা করে আন্দোলনকারীরা।
তবে একাধিক মন্ত্রীর ‘বিতর্কিত’ মন্তব্যের জেড়ে নতুন করে আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ১১ এপ্রিল সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটা বাতিলের ঘোষণা দেন।
এ দিন বিকেলে জাতীয় সংসদের প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে কোটা বিরোধী আন্দোলনের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কোটা থাকলেই আন্দোলন হবে, আজ এরা-কাল আরেকজন আসবে। এর থেকে আমি মনে করি কোটা পদ্ধতিই বাতিল করাটাই ভালো হবে।’
এ সময় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রেখে সরকারি চাকরিতে কোটা না রাখার কথা জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, নারীসহ তরুণ শিক্ষার্থী এবং জেলা পর্যায়েও শিক্ষার্থীরা যেহেতু কোটা চায় না, তাই কোটা পদ্ধতি রাখার দরকার নেই। সেই সঙ্গে, আন্দোলনকারীদের শ্রেণিকক্ষে ফিরে যাওয়ারও আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রীর এই ভাষণ শেষে আন্দোলন স্থগিত করে বুধবার সকালে সংবাদ সম্মেলন করে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা গেজেট অাকারে প্রকাশ করে অতি দ্রুত বাস্তবায়ন, আটক আন্দোলনকারীদের নিঃশর্ত মুক্তি, পুলিশি নির্যাতনে আহত সকল শিক্ষার্থীর সুচিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করতে অতি দ্রুত আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যোগাযোগসহ ছয়টি শর্তে আন্দোলন স্থগিত করা হয়।