চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

কোটালীপাড়ার ৫ লক্ষ মানুষের স্বাস্থ্য সেবায় ডাক্তার মাত্র ৭ জন

আসাদুজ্জামান বাবুল: গোপালগঞ্জ জেলা শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার পুর্বে কোটালীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। কাগজে কলমে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসাপাতালটিতে সরকারি বিধানমতে ২৭ জন চিকিৎসকের অনুমোদন থাকলেও ডাক্তার আছেন ৭ জন। এর মধ্যে আবার একজন ডাক্তার নিয়মিত ঢাকায় থাকেন।

অভিযোগ রয়েছে অন্য ৬ জন ডাক্তারের মধ্যে ১ জন ডেন্টাল সার্জন ও ১ জন হোমিও ডাক্তার হাজিরা খাতায় নাম লেখে চলে যান বাইরে প্রাকটিস করতে।

বাকী অন্য দু-জন ডাক্তার থাকেন রোগীদের সামাল দিতে ব্যাস্ত। ফলে কোটালীপাড়া উপজেলার ৫ লক্ষাধিক জনগোষ্ঠী প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কিন্ত গুটিকয়েক নেতাদের ছত্রছায়ায় থাকা হাসপাতাল নিয়ন্ত্রণকারী ও একক আধিপত্য বিস্তারকারী ডাক্তার প্রেমানন্দর ভয়ে মুখ খুলতে পারছে না কেউ।

কোটালীপাড়া উপজেলার দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্তবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে পার্শ্ববর্তী গৌরনদী, পয়সারহাট, নাজিরপুর, আগৈলঝাড়া, উজিরপুরসহ আশেপাশের বিভিন্ন উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম-পাড়া ও মহল্লার রোগীরা মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজ নির্বাচনী এলাকা কোটালীপাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলে বিনা পয়সা এবং তাড়াতাড়ি উন্নত চিকিৎসা সেবা নিয়ে ঘরে ফিরতে পারবেন। এমন আশা বুকে বেঁধে প্রতিদিন নানান বয়সের নানান ধরনের রোগীরা দল বেধে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসেন।

কিন্ত দু:খজনক হলেও সত্য যে সেবাতো পান-ই না বরং ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থেকে এক সময় বড় কর্তা ডাক্তার প্রেমানন্দ বাইর থেকে এসে বলেন: আজ কোনো রোগী দেখা হবে না। একদিকে ডাক্তার সংকট অন্যদিকে কর্তার কটু কথা-বার্তা শুনে অসহায়-দরিদ্র লোকজন ঘরে ফিরে যান।

চিকিৎসা সেবা না পেয়ে ঘরে ফিরে যাওয়ার সময় চরম ভোগান্তির শিকার এমন বেশ কয়েকজন রোগীর সাথে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে কথা হলে তারা অভিযোগ করেন: সরকারি বিধি মোতাবেক এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৭ জন ডাক্তারের অনুমোদন থাকলেও ডাক্তার আছেন মাত্র ৭ জন। এর মধ্যে আবার ১ জন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নিজ কর্মস্থলে থাকেন না। তিনি নিয়মিত ঢাকায় থাকেন। মাসের পর মাস আর বছরের পর বছর নিজ কর্মস্থল কোটালীপাড়া উপস্থিত না থেকেও বেতন-ভাতা নিচ্ছেন নিয়মিত। বাকি ৬ জনের মধ্যে বড় কর্তা প্রেমানন্দ আর মেজো কর্তা আরএমও শুশান্ত থাকেন বাইরে।

সরকার দলের নেতাদের সাথে আর ২ জন হাজিরা দিয়ে চলে যান বাইরে রোগী দেখতে। এরপর বাকি যে ২ জন ডাক্তার হাসপাতালে থাকেন, তারা হাসপাতালে আসা অসংখ্য রোগীদের পালাক্রমে চিকিৎসা দেন। কিন্ত তা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই কম। বাকি রোগিরা ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থেকে এক সময় চিকিৎসা সেবা না পেয়ে ঘরে ফিরে যান।

গত বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিন কোটালীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বারান্দায় দক্ষিণ প্রান্তে একটি কক্ষে ও বিপরীত দিকের আরেকটি কক্ষে বসে রোগী দেখছেন ২ জন ডাক্তার। কক্ষ দুটির সামনে দাঁড়িয়ে ও বসে আছে বিভিন্ন বয়সের নানান রোগে আক্রান্ত শতশত রোগী। তার পাশেই বেশ কয়েকজন শিশুর কান্না ভেসে আসে কানে। এগিয়ে দেখা গেল একদিকে প্রচণ্ড গরম আর অপরদিকে ঘন্টার পর ঘন্টা একভাবে বসে থাকার কারণে বাচ্চারা কান্নাকাটি করছে। প্রায় ২০ কিলো-মিটার দূরে পাশ্ববর্তী বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার আমবৌলা গ্রাম থেকে চিকিৎসা নিতে কোটালীপাড়ায় আসা গৃহবধু সুফিয়া বেগম শিশুপুত্র সবুজের জ্বর কাশি নিয়ে ডাক্তার দেখাতে এসে টিকিট কেটে সকাল ১০ টায় জমা দিয়েছেন। কিন্ত ৩ ঘন্টা পার হওয়ার পরেও তার ডাক না পড়ায় একটি ক্লিনিকে গিয়ে হাসপাতালের আরেকজন ডাক্তারকে ৩০০ টাকা ফি দিয়ে বাচ্চার চিকিৎসা নেন।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির একাধিক মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে: প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি থাকা সত্ত্বেও গত ১৫ বছর ধরে অপারেশন থিয়েটার বন্ধ রয়েছে। খোলা জানালা দিয়ে দেখা যায় অযত্ন অবহেলায় দিন দিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে কোটি কোটি টাকার অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ বরাদ্দ থেকে হাসপাতালটিতে উন্নতমানের একটি এক্স-রে মেশিন দেয়া হলেও টেকনিশিয়ানের অভাবে ব্যবহার না করায় সেটি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি থাকার পরেও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে প্যাথলজিক্যাল কোনো পরীক্ষাই হয় না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের নির্ভরযোগ্য একটি দায়িত্বশীল সূত্র বলেছে: ৫১ বছর আগে নির্মিত কোটালীপাড়া স্বাস্থ্যকমপ্লেক্স মেরামতের জন্য শেখ হাসিনা বেশ কয়েক দফায় টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (টিএইচই) ডাঃ প্রেমানন্দ মন্ডল এবং আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ সুশান্ত বৈদ্য তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন: একটি মহল আমাদের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য এ ধরনে অপপ্রচার চালাচ্ছে। প্রকৃত পক্ষে জনবল না থাকার কারণে চিকিৎসা সেবার যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে পারছি না।