চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

কোটার জটিল অঙ্কে হিসাব মিলবে?

কোটা বাতিল/পর্যালোচনা/সংস্কারের জন্য গঠিত উচ্চ পর্যায়ের কমিটি সরকারি চাকরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর পদে কোটা বাতিলের প্রস্তাব রেখে পনের দিন আগে যে সুপারিশ করেছিল; তাতে অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

দু’একদিনের মধ্যেই এ নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি হবে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম। কোটা সংস্কারের দাবিতে দেশজুড়ে তীব্র আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছিলেন সরকারি চাকরিতে কোনো কোটাই থাকবে না।

আমরা জানি, প্রধানমন্ত্রীর সেই ঘোষণার কয়েকদিন পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলমকে আহ্বায়ক করে ৭ সদস্যের কমিটি গঠন করে সরকার। প্রথমে কমিটিকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে কোটা নিয়ে প্রতিবেদন দিতে বলা হলেও পরে তা আরো ৯০ কার্যদিবস বাড়ানো হয়।

ওই কমিটিই সবকিছু যাচাই-বাছাই করে যেসব সুপারিশ দিয়েছিল তার ভিত্তিতেই প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদে কোটা বাতিলের প্রস্তাব অনুমোদন করে মন্ত্রিসভা। তাদের ওই সুপারিশে বলা হয়েছিল, ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত চাকরিতে কোনো কোটা থাকবে না। এসব পদে নিয়োগ হবে মেধার ভিত্তিতে।

স্বাধীনতা অর্জনের পরপর ১৯৭২ সাল থেকে সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ পদ বিভিন্ন কোটার জন্য সংরক্ষিত ছিল। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য (পরে সন্তান, বর্তমানে নাতি-নাতনিদের জন্য) ৩০ শতাংশ, নারীদের জন্য ১০ শতাংশ, জেলায় ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ৫ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধী ১ শতাংশ কোটা নির্ধারিত ছিল।

কিন্তু এই কোটার সংস্কার নিয়ে পাবলিক সার্ভিস কমিশন-পিএসসিসহ সরকারের একাধিক সংস্থা বিভিন্ন সময় নানা সুপারিশ দিয়েছে। কিন্তু কয়েক মাস আগে এ নিয়ে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে কোটা সংস্কারের দাবিতে তীব্র আন্দোলন গড়ে উঠে। তারই এক পর্যায়ে কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।

তবে কোটা সংস্কার বা বাতিল; দুটো বিষয় নিয়েই কোনো কোনো পক্ষের আপত্তি রয়েছে। কেননা আমরা দেখেছি কমিটির সুপারিশের পরপরই মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী এবং কোটার সুবিধাভোগী অন্যান্যরাও তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। এমনকি কমিটি এই সুপারিশ বাতিলের দাবি করে আন্দোলনেরও হুমকি দিয়েছে তারা।

অনেকের দাবি দেশের নারীদের সার্বিক অগ্রগতিতে নারী কোটা বড় ভূমিকা রেখেছে। এই যুক্তিতে তাদের চাওয়া নারী কোটা বহাল থাকুক। একই ভাবে জেলা কোটা, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটা এবং প্রতিবন্ধী কোটাও বহাল রাখার পক্ষে কেউ কেউ।

এসব বিবেচনায় কোটা বাতিলের ফলে নারীরা আবারো পিছিয়ে যাবে কি না? বা অন্যদের অধিকার ক্ষুণ্ন হবে কি না-এমন নানা প্রশ্ন আছে। বিশেষ করে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান এবং নাতি-নাতনিরা কোটা বাতিলের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তাদের কী হবে?

সব মিলিয়ে বলা যায়, এ এক জটিল প্রশ্ন। যার উত্তরও আরো জটিল। তবে আমরা মনে করি, উচ্চ পর্যায়ের কমিটির যে প্রস্তাব মন্ত্রিসভায় অনুমোদন হয়েছে; তাতে সব দিক বিবেচনায় নেয়া হয়েছে।