চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

কে হবেন টাঙ্গাইল-৪ আসনের কর্ণধার?

টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনে লতিফ সিদ্দিকীর পদত্যাগের পর ওই আসনটি শূন্য ঘোষনা করে গেজেট প্রকাশ হওয়ার পর থেকেই অনিশ্চয়তার মেঘ কেটে গিয়ে বিরাজ করছে উপ-নির্বাচনের আমেজ। সম্ভাব্য প্রার্থীরা চষে বেড়াচ্ছেন ২ পৌরসভা ও ১৩ টি ইউনিয়নের ২ লাখ ৫২ হাজার ২৬ ভোটারের কাছে।

ইতিমধ্যে আগামী উপনির্বাচনকে সামনে রেখে হাফ ডজনেরও ওপর সম্ভাব্য প্রার্থীরা প্রচারণা শুরু করেছেন। বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে নিজেদের মেলে ধরার চেষ্টা করছেন তারা। প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন নানা উন্নয়নের। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত গ্রাম ও শহরের চায়ের দোকানগুলোতে চলছে নানা হিসেব- নিকেশ, আলোচনা ও সমালোচনা। কে হচ্ছেন টাঙ্গাইল-৪ আসনের পরবর্তী কর্ণধার?

মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন যারা :
আসনটিতে উপ-নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ ছাড়াও জাতীয়পার্টি ও অন্যান্য দলের বেশ কয়েকজন নেতা প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক, এফবিসিসিআই ও জনতা ব্যাংকের পরিচালক মো: আবু নাসের, বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোজহারুল ইসলাম তালুকদার, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক হাসান ইমাম খান সোহেল হাজারী, টাঙ্গাইল জেলা যুব মহিলা লীগের আহবায়ক সাবিনা ইয়াসমিন ইব্রাহীম, সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মোল্লা।

এছাড়াও উপনির্বাচন ঘিরে এ আসনটিতে জাতীয় পার্টির দু’জন প্রার্থী গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। এরা হলেন টাঙ্গাইল জেলা জাতীয় পার্টির অর্থ বিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ মোস্তাক আহম্মেদ রতন ও কালীহাতি উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক মো. আজিজুর রহমান।

তবে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী আবু নাসের ও হাসান ইমাম খান সোহেল হাজারী অনেকটা কোমড় বেঁধে মাঠে নেমেছেন। ইতিমধ্যেই তারা দলীয় কর্মী সমর্থক নিয়ে পুরোদমে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। মনোনয়ন পেতে উভয়ই জোড় তদবির চালাচ্ছেন। বসে নেই অন্যান্য প্রার্থীরাও।

যে যার আঙ্গিকে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে সূত্র মতে আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীর ছোট ভাই কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর ১৪ দলে যোগদানের মেঘ কেটে গেলে পাল্টে যেতে পারে সকল হিসাব নিকাশ।

যদিও এখন পর্যন্ত কাদের সিদ্দিকীর কাছ থেকে এধরনের কোন আভাস ও নির্বাচনী এলাকায় তাকে দেখা যায়নি। তাঁর অনুসারীদের তথ্য মতে, কাদের সিদ্দিকী ভারত সফর শেষে চলতি মাসের ৮ তারিখ দেশে আসবেন। তখনই বিষটি পরিস্কার হয়ে যাবে।

সম্ভাব্য প্রার্থীরা কে কি বললেন :
উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী আওয়ামী লীগের মো: আবু নাসের বলেন, ৪০ বছর ধরে কালিহাতীতে রাজা-মহারাজার শাসন চলছিলো। সাধারণ মানুষ তাদের প্রতি অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলো। এর অবসান হয়েছে। কালিহাতীর মানুষ এদের হাত থেকে মুক্তি পেয়েছে। দীর্ঘ দিনেও কালিহাতীর পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ বিদ্যুতের আলো পায়নি। আমাকে ঘিরে তাদের মধ্যে প্রাণ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

‘এলাকার মানুষের আকাঙ্খা পুরণের লক্ষ্যেই আমি তাদের পাশে দাঁড়িয়েছি। বিগত নির্বাচনেও দলের প্রার্থী হয়েছিলাম। কিন্তু মনোনয়ন পাইনি। তাই উপ-নির্বাচনকে ঘিরে প্রচারণায় নেমেছি। দলের প্রতি আনুগত্য রেখে দল যে সিদ্ধান্ত নেবে আমি তা মেনে নেব। তবে মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী।’

আরেকজন মনোনয়ন প্রত্যাশী হাসান ইমাম খান সোহেল হাজারী বলেন, বিগত উপজেলা নির্বাচনে জয়ী হয়ে চেয়ারম্যান হিসেবে আমি সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেছি। উপজেলার প্রত্যেকটি এলাকায় আমি ঘুরেছি। জনগণ আমার পক্ষে আছে। আমার বিশ্বাস দল আমাকেই মনোনয়ন দিবে। যদি মনোনয়ন না পাই তাহলে দলীয় সিদ্ধান্ত আমি মেনে নিবো।

বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান মোজহারুল ইসলাম তালুকদার বলেন, লতিফ সিদ্দিকীর অনুপস্থিতিতে আমি দলের হাল ধরেছি। দলকে সংগঠিত রেখেছি। এসব দিক বিবেচনা করলে আগামী উপ-নির্বাচনে দল আমাকেই মনোনয়ন দেবে।

টাঙ্গাইল জেলা যুব মহিলা লীগের আহবায়ক সাবিনা ইয়াসমিন ইব্রাহীম বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে এলাকার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। সার্বিক দিক বিবেচনা করলে মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আমি আশাবাদী।

জাতীয় পার্টির প্রার্থী আজিজুর রহমান বলেছেন, এ আসনে জাতীয় পার্টির প্রচুর রিজার্ভ ভোট রয়েছে। বর্তমানে দলীয় নেতা-কর্মীরা অনেকটা সক্রিয়। তারা উপ-নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। আগামীতে দল আমাকে মনোনয়ন দিলে জয় অনেকটা সহজ হবে।

জাতীয় পার্টির অপর প্রার্থী সৈয়দ মোস্তাক আহমেদ রতন বলেছেন, আমি এর আগেও নির্বাচন করেছি। দলের দলের প্রতি আস্তা রেখে কাজ করে যাচ্ছি। সর্বদা নেতা-কর্মীদের পাশে থেকেছি। দল আমাকে মনোনয়ন দিলে উপ-নির্বাচনে আমিই জয়ী হবো।

এদিকে এ উপজেলায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কর্মসূচী একই সঙ্গে পালিত হলেও মূলত দলটিতে রয়েছে ত্রিমূখী দ্বন্দ্ব। সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও সরকারি সাদত বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সাবেক ভিপি হাসান ইমাম খান সোহেল হাজারী- বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান মোজহারুল ইসলাম তালুকদার ও আবু নাসেরের মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েছে। ফলে দলীয় নেতাকর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়েছে তিনটি অংশে।

বেশি সুবিধা যিনি দিচ্ছেন নেতাকর্মীরা ঝুঁকছেন তারই দিকে। তবে মোজহারুল ইসলাম বলেন, দলের ভিতরে তেমন কোনো দ্বন্দ্ব নেই। আমরা সবাই এক সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি।

অন্যদিকে জাতীয় পার্টি মহাজোটে থাকলেও বিগত দিনগুলোতে তাদের কার্যক্রম খুব একটা দেখা যায়নি। নেতাকর্মীরা অনেকটা প্রাণহীন হয়ে পড়েছে। মহাজোটে থাকা সত্ত্বেও নেতা,কর্মী ও সমর্থকরা তেমন কোন সুবিধা ভোগ করতে পারেনি এ দলটি।