অভিবাসন প্রত্যাশী শত শত মানুষ বন্ধ করে দেওয়া হাঙ্গেরি-সার্বিয়া সীমান্তে রাত কাটিয়েছে। সাইবেরিয়া হয়ে ইউরোপ যাওয়ার আশা ম্লান হয়ে যেতে দেখে অনেকেই খুঁজছেন ইউরোপে যাওয়ার বিকল্প পথ।
গত মঙ্গলবার হাঙ্গেরি হঠাৎ করেই সীমান্তবর্তী এলাকায় জরুরী অবস্থা জারি করে এলাকাগুলোতে শত শত সেনা ও পুলিশ সদস্য মোতায়েন করে। ওই পরিস্থিতিতে কাটাতাঁরে বাঁধা সীমান্ত অতিক্রম করাকে অপরাধ ঘোষণা করে হাঙ্গেরি সরকার।
ওই ঘোষণার পর থেকে কোনো অভিবাসী বা শরণার্থীকেই সীমান্ত অতিক্রম করে সার্বিয়ায় ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এমনকি সেখান থেকে কোনো নিরাপদ স্থানেও সরিয়ে আশ্রয় দেওয়া হয়নি। রাতটা কেউ খোলা আকাশের নিচে কাটিয়েছেন; কেউ আবার মাথা গুঁজেছেন ছেঁড়া তাবুর নিচে। কেউ আবার আশপাশ থেকে কাঠ জোগাড় করে আগুন জ্বালিয়ে প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় টিকে থাকার চেষ্টা করেছেন।
শুধু সীমান্ত নয়, রোস্কে শহরের কাছের একটি রেলওয়ে ক্রসিংও বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ। ওই ক্রসিং দিয়ে এর আগে হাজারো অভিবাসীকে ইউরোপের শেনজেন অঞ্চলে ঢুকতে দেওয়া হয়েছে।
আটকে পড়া অভিবাসীদের দেহজুড়ে ক্লান্তি, চোখে হতাশা আর অনিশ্চয়তার ছাপ। অনেকেই সামান্য পানি বা খাবার ছাড়াই দিনের পর দিন পায়ে হেঁটে সীমান্ত পর্যন্ত পৌঁছেছে। সেখান থেকে এখন আর কোনোদিকে যাওয়ার উপায় খুঁজে পাচ্ছে না তারা।
অবশ্য এরপর অভিবাসী বোঝাই অনেকগুলো বাস ক্রোয়েশিয়ার দিকে রওনা দেয়। এর মধ্যে প্রথম দলটি ইতোমধ্যে সার্বিয়ার ক্রোয়েশিয়া সংলগ্ন সীমান্তে পৌঁছে গেছে। সেখান থেকে অভিবাসীরা প্রথমে স্লোভেনিয়া, তারপর অস্ট্রিয়া হয়ে সবশেষে জার্মানি পৌঁছানোর পরিকল্পনা করছে।
কিন্তু ক্রোয়েশিয়া বলছে, তারা ‘চাইলেই মানুষকে নিজ দেশের ভেতর দিয়ে যেতে দেবে না’!
অন্যদিকে অস্ট্রিয়াও হাঙ্গেরি সীমান্তের কঠোরতা দেখে নিজস্ব সীমান্তেও কঠোর আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থা প্রয়োগ করছে। অস্ট্রিয়ার পুলিশ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ভিয়েনার দু’টি প্রধান রেল স্টেশনেই অভিবাসীদের উপচে পড়া ভীড়। তাই পরিস্থিতি সামাল দিতে সে কোনো সময় প্রধান স্টেশন সালজবার্গ বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে।
তবে দেশটির সরকার এটাও জানিয়েছে, কেউ যদি হাঙ্গেরির সীমান্ত পেরিয়ে সার্বিয়া পৌঁছাতে পারে তবে তাকে ফেরত পাঠানো হবে না।
মূলত আফগানিস্তান, সিরিয়ার মতো যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলো থেকেই বেশিরভাগ শরণার্থী ও অভিবাসন প্রত্যাশী ইউরোপের পথে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। তারা না পারছে নিজের দেশে থাকতে, না পাচ্ছে অন্য কোনো দেশে আশ্রয়। মুখে মানবাধিকারের কথা বললেও এই মানুষদের অধিকার তো দূরের কথা, এদের জীবন-মৃত্যু নিয়েও কারো মাথাব্যথা নেই।
ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার পর প্রথম প্রথম ইউরোপ ও সংলগ্ন দেশগুলোর মধ্য দিয়ে শরণার্থীদের যাওয়ার পথ করে দেওয়া হলেও এখন হাঙ্গেরি-ক্রোয়েশিয়ার মতো অনেক দেশই আইন কঠোর করে ফেলছে। সবাই নিজেদের স্বার্থ ও নিরাপত্তার কথাই ভাবছে। তাহলে এদের কথা ভাবছে কে?