নিউজিল্যান্ডের কাছে প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে হারা ভারতের জন্য বাংলাদেশ ম্যাচটা ছিল বেশ গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশর জন্যও সমান গুরুত্বের। কারণ পাকিস্তানের বিপক্ষে নিজেদের প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচ বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়ায় শেষবারের মতো পরখ করার ছিল ভুল-ত্রুটিগুলো। বিশ্বকাপের আবহাওয়ায় মানিয়ে নিতে মাশরাফীর দলের জন্য এটাই শেষ প্রস্তুতির সুযোগ ছিল। তাতে ব্যাটে-বলে খণ্ড কিছু লড়াই ছাড়া বেশিকিছু অর্জন করতে পারেনি টাইগাররা। আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজের ট্রফির স্মৃতির সঙ্গে একটা হারের দাগ নিয়ে বিশ্বমঞ্চে নেমে পড়তে হবে বাংলাদেশকে!
নিজেদের লাকি গ্রাউন্ড কার্ডিফের সোফিয়া গার্ডেনসে প্রথম হারের স্বাদ পেয়েছে বাংলাদেশ। যদিও সেটা অনানুষ্ঠানিক ম্যাচে। ভারতের ৩৫৯ রানের বিশাল লক্ষ্য তাড়ায় নেমে ২৬৪ রানে থেমেছে টাইগারদের ইনিংস। ম্যাচে হার ৯৫ রানে।
যেহেতু প্রস্তুতি ম্যাচ, জয়-পরাজয়টা এখানে মুখ্য নয়। ঠিক একই কারণে রেকর্ড বইতেও লিপিবদ্ধ থাকছে, এখনো সোফিয়া গার্ডেনসে অপরাজিত টাইগাররা! যে ম্যাচে পেসার মোস্তাফিজ-রুবেলরা শুরুতে লড়াই করেছেন, আর পরে লিটন ৭৩ ও মুশফিক ৯০ রান করে প্রস্তুতি সেরেছেন।
শুরুর আগে থেকেই চলছে জোর শোরগোল, এবারের ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ হতে চলেছে রানপ্রসবা এক আসর। ইংল্যান্ড-পাকিস্তানের ওয়ানডে সিরিজে প্রতি ম্যাচেই তিনশো-সাড়ে তিনশো পার হয়েছে কোনো না কোনো ইনিংস। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ত্রিদেশীয় সিরিজেও ছোটখাটো নমুনা দেখেছে বাংলাদেশ। ব্যাটসম্যানদের দৃঢ়টায় সেটা পারও হওয়ায় গেছে। তবে আসল নমুনাটা মিলল ভারত ম্যাচেই। এলো জেগে ওঠার ডাক!
৩৬০ রানের বিশাল লক্ষ্যে যেমনটা হওয়া দরকার মোটামুটি তেমন শুরুই ছিল বাংলাদেশের ইনিংসে। কোমরের নিচের অংশে ব্যথা থাকায় প্রস্তুতি ম্যাচে খেলেননি তামিম ইকবাল। তারপরও প্রথম ১০ ওভারে ৪৯ রান তুলে ফেলেন দুই ওপেনার লিটন দাস ও সৌম্য সরকার।
জাসপ্রীত বুমরাহর জোড়া আঘাতে হঠাতই ছন্দপতন ঘটে বাংলাদেশের ইনিংসে। ভেতরে ঢোকানো বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন ২৫ রান করা সৌম্য। ক্রিজে এসে প্রথম বলেই বোল্ড হন আরেক বাঁহাতি সাকিব আল হাসান।
সেখান থেকেই মুশফিকুর রহিমকে সঙ্গী করে জুটি গড়েন ওপেনার লিটন দাস। পঞ্চম উইকেট জুটিতে দুজনে তোলেন ১২০ রান।
দুবাইয়ে এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে ১২১ রানের চোখধাঁধানো এক ইনিংস খেলেছিলেন লিটন। সেই ইনিংসটিই যেন ফিরে আসছিল কার্ডিফে। দারুণসব শটে ৭৩ রান করে সম্ভাবনা জাগাচ্ছিলেন শতকেরও, তখন হারালেন মেজাজ। যুজবেন্দ্র চাহালের বলে বেরিয়ে আসতে গিয়ে সাজঘরে ফিরেছেন স্টাম্পিং হয়ে।
লিটনের উইকেট পেয়ে আরও ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেন চাহাল। ভেতরের ঢোকা চাহালের গুগলির লাইন হাতছাড়া করে পরের বলেই এলবিডব্লিউর ফাঁদে মোহাম্মদ মিঠুন।
জোড়া উইকেটের ধাক্কা সামলাতে দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও মুশফিকুর রহিমের ওপর ভরসা ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু সেখানে এবার হানা দিয়েছেন কুলদীপ যাদব। নিচু হয়ে যাওয়া বলে প্রথমে বলে বোল্ড করেছেন ৯ রান করা মাহমুদউল্লাহকে। কিছুক্ষণ পর একইরকম বলে শিকার বানিয়েছেন মুশফিককেও।
মুশির আউটেই মূলত ম্যাচ জয়ের সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায় বাংলাদেশের। ৯৪ বলের ইনিংসটিতে মাত্র ১০ রানের জন্য শতকের দেখা পাননি মুশফিক।
ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি সাব্বির রহমান। ৭ রানে বোল্ড হয়েছেন রবীন্দ্র জাদেজার বলে। ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালের নায়ক মোসাদ্দেক হোসেন যাদবের তৃতীয় শিকার হয়ে ফিরেছেন প্রথম বলেই।
ব্যাটিংয়ের মতো দারুণ শুরুর পর শেষপর্যন্ত হতাশাই উপহার দিয়েছেন বোলাররাও। মূল আসরের আগে বোলিং নিয়েও তাই কাজ করতে হবে বাংলাদেশকে।
ভারতের ইনিংসকে দুই ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। শুরুর অংশে যার নিয়ন্ত্রণ ছিল পুরোপুরি বাংলাদেশের হাতে। ২২ ওভারে ১০৪ রান তুলতে ৪ উইকেট হারানো দলটি শেষ ২৮ ওভারে রান তুলেছে ঝড়ের বেগে।
রাহুল ও ধোনির পঞ্চম উইকেট জুটির ১৬৪ রানই বদলে দিয়েছে ভারতের গতিপথ। ৯৯ বলে ১০৮ রানের ইনিংস খেলে রাহুল যখন অনিয়মিত লেগস্পিনার সাব্বির রহমানের বলে বোল্ড হন, ভারতের সংগ্রহ ৪৩.২ ওভারে ২৬৬। শেষ ৪০ বলে দলটি তুলেছে ৯৩ রান।
৯৯ থেকে ছক্কা মেরে তিন অঙ্কে পৌঁছান ধোনি। বোল্ডে সাকিবের দ্বিতীয় শিকার হয়ে সাজঘরে ফেরার আগে করে যান ৭৮ বলে ১১৩। ইনিংসে ৮টি চারের পাশাপাশি ছিল ৭টি ছয়ের মার।
সোফিয়া গার্ডেনসের কিছুটা মন্থর উইকেটে এদিন ৯ বোলারকে ব্যবহার করেছেন মাশরাফী। নতুন বলে পেসাররা সফল হলেও পুরনো হতেই বদলে যায় চিত্র। ভারত গড়ে ফেলে রানের পাহাড়।
অধিনায়ক বিরাট কোহলি করেন ৪৭। শেষদিকে ১১ বলে ২১ রানের ক্যামিও ইনিংস খেলেন হার্দিক পান্ডিয়া। ৪ বলে ১১ রান করে অপরাজিত থাকেন রবীন্দ্র জাদেজা।
ইংল্যান্ডের এবারের ভেন্যুগুলোর উইকেটের যা অবস্থা, তাতে রান খুব একটা আটকে রাখা সম্ভবও হবে না। বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচের সময়ই আরেকটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছে নিউজিল্যান্ড-ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কিউইদের শক্তিশালী বোলিং লাইনআপের বিপক্ষে ৪২১ রান তুলেছিল ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানরা। বাংলাদেশের মতো বড় ব্যবধানে হারলেও শেষ পর্যন্ত ৩৩০ রান তুলে শক্তির জানান দিয়েছে নিউজিল্যান্ড।
রানে ভরা বিশ্বকাপে আসলে অনেককিছু করতে হবে ব্যাটসম্যানদেরই। সেই পরীক্ষায় ভালো করার সুযোগ ছিল ভারত ম্যাচেই। কিন্তু তাতে প্রায় ফেল টাইগারদের বেশিরভাগ ব্যাটসম্যান। ২ জুন সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে নামার আগে তিনদিন সময় পাচ্ছে বাংলাদেশ। ভুলত্রুটি শুধরে নেয়ার জন্য এখন সময় মোট ৭২ ঘণ্টা!