চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

কেমন চাই আগামীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

২০২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ পূর্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে নানা প্রত্যাশার পাশাপাশি বেশকিছু সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসংগঠনগুলো। প্রশাসন বলছে, ‘সুপরিকল্পিত সমন্বিত কিছু পদক্ষেপ’ নিয়ে ২০২১ সালের বিশ্ববিদ্যালয় বিনির্মাণের পথে এগিয়ে যাচ্ছে তারা।

শুক্রবার ঢাবি ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের ক্যাফেটেরিয়ায় ‌ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি আয়োজিত ‘কেমন চাই আগামীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভা ও ইফতার অনুষ্ঠানে এসব প্রস্তাব উঠে আসে।

অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, ক্রিয়াশীল সকল ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মী ও সাংবাদিক সমিতির সাবেক নেতৃবৃন্দ অংশ নেন।

সমিতির সভাপতি আসিফ ত্বাসীন শতবর্ষ নিয়ে ছাত্র সংগঠনগুলোর প্রত্যাশা বিষয়ে সাংবাদিক সমিতির পক্ষ থেকে একটি প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন। যেখানে বলা হয়, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সর্বপ্রথম শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশের কথা বলেছে। তারা চান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটি পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে ওঠবে। প্রশাসন ডাকসু নির্বাচনের যে উদ্যোগ নিয়েছে, তা বাস্তবায়িত হবে। তারা আন্তর্জাতিক মানের গবেষণার উপর জোর দেন।

জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের পক্ষে প্রস্তাবনায় বলা হয়, ছাত্রদলের নেতারা এমন একটি ক্যাম্পাস চান, যেখানে সবাই নিরাপদে নিজেদের কথা বলতে পারবে, ক্রিয়াশীল সকল ছাত্র সংগঠনের সহাবস্থান নিশ্চিত হবে, ডাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারবে, আবাসনের কোনো সংকট থাকবে না, গেস্টরুম কালচার ও সান্ধ্যকোর্স বন্ধ হবে, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের দলীয় রাজনীতি বন্ধ হবে।

বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের চাওয়া ৭৩ এর আদেশ অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বতন্ত্র অবস্থান। তারা সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের দিকে জোর দেন ও গেস্টরুম কালচার বন্ধ করতে বলেন।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের বক্তব্য, আগে শিক্ষার্থীদের বিষয়ে গণমানুষের যে প্রত্যাশা ছিল, জনগণের পক্ষে যেসব কথা বলার সুযোগ থাকতো, শ্রমিক ও কৃষকের সন্তানেরা পড়তে পারতো, সেই ঐতিহ্যের দিকে ফিরে যাবে।

মার্কসবাদী বাসদ সমর্থিত ছাত্র ফ্রন্টেরও চাওয়া, হারানো ঐতিহ্যে আগে মনোনিবেশ করা। সাংস্কৃতিক চর্চা ও ছাত্রদের ভিন্নমতকে লালন করা।

বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন প্রশাসনিক স্বৈরতান্ত্রিকমুক্ত শিক্ষার গণতান্ত্রিক পরিবেশ চায়। সংগঠনের নেতারা শতবর্ষে সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধি থাকার প্রত্যাশা করেন। নতুন নতুন গবেষণার মাধ্যমে মানুষের জীবনযাপনকে আরও সহজ করে তোলার প্রস্তাব দেন।

জাসদ সমর্থিত ছাত্রলীগের চাওয়া ডাকসু আর প্রক্টরিয়াল বডিতে নারী সদস্য। একাডেমিকভাবে তারা বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি সুশৃঙ্খল পরিবেশে দেখতে চান, যেখানে দেশের প্রয়োজনীয়তা অনুসারে ছাত্র ভর্তি করা হবে, অপ্রয়োজনীয় বিভাগগুলো খুঁজে তা বন্ধ করে দেওয়া হবে।

বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী শতবর্ষে একটি গণতান্ত্রিক বিশ্ববিদ্যালয় আশা করছেন, যেখানে অবশ্যই ছাত্র সংসদ থাকবে। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাখাতে বরাদ্দ বহুগুণ বাড়ানোর প্রস্তাব তাদের।

এই প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সব সময় ভিন্ন মত ও দর্শনের লালন করে। এই অনুষ্ঠানে সব দল ও মতের লোকজনের উপস্থিতিই এর প্রমাণ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি সকল মতের মিলনের এই ঐতিহ্যকে ধারন করার জন্য ধন্যবাদ।

উপাচার্য আরও বলেন, “আমরা ২০২১ সালে এমন একটি বিশ্ববিদ্যালয় চাই যা অত্যন্ত পরিকল্পিত, দূরদর্শী দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সামনের দিনগুলোতে বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করতে পারি। সেই নিরীখে সুপরিকল্পিত সমন্বিত কিছু পদক্ষেপ নিয়ে ২০২১ সালের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিনির্মাণ করতে চাই। আমাদের বিগত সময়গুলোতে সুসমন্বিত দূরদর্শী উদ্যাগ না নিতে পারাটা দুঃখজনক। আমাদের মূল কাজ, মাস্টারপ্ল্যান তৈরি ও ভূমি জরিপ। সাংবাদিক সমিতির প্রস্তাবে গণতন্ত্রায়নের দিকে যাওয়ার যে কথা বলা হয়েছে, আমরা মূলত সেদিকেই এগুচ্ছি। আমরা এই মতামত বিবেচনায় নেব। ভিন্ন মত গ্রহণ করেই অগ্রসর হওয়ার প্রত্যাশা করছি।”

নবনিযুক্ত উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক কবি মুহম্মদ সামাদ বলেন, “সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ, ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক, অভিভাবক ও সন্তানের সম্পর্ক, ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়ে আমরা কাজ করছি। এর মাধ্যমেই একটা দেশজ মূল্যবোধ গড়ে উঠেবে। মূল ধারার সংস্কৃতির চর্চা করতে হবে। সত্য ও ইতিহাসের উপর যদি সংস্কৃতি দাঁড়ায় তবে আমরা যে আগামীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা বলছি সেটি বাস্তবায়ন হবে।”

অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম, প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানী, বিজয় একাত্তর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক আ জ ম শফিউল আলম ভূইয়া, জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক অসীম সরকার, সরকারসমর্থক শিক্ষকদের নীল দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক পারভেজ সাজ্জাদ, বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত সাদা দলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য দেন। এছাড়াও প্রশাসনের বিভিন্ন দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক, কর্মকর্তা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান নয়ন অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। এ সময় ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ, সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি ইমরান হাবিব রুমন ও সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন প্রিন্স, মার্কসবাদী বাসদ সমর্থিত ছাত্র ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক স্নেহাদ্রী চক্রবর্ত্তী রিন্টু, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি গোলাম মোস্তফা ও সাধারণ সম্পাদক জাহিদ সুজন, বিসিএল ছাত্রলীগের সভাপতি শাহজাহান আলী সাজু ও সাধারণ সম্পাদক গৌতম শীল, জাসদ ছাত্রলীগের সভাপতি মাসুদ আহাম্মেদ, বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি ফারুক আহমেদ রুবেল, বাংলাদেশ ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি ইউনুস শিকদার, সাধারণ সম্পাদক সাদিকুর রহমান সুমন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আল মেহেদী তালুকদার, সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশার সিদ্দিকী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।