চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

কেন তিস্তার বিকল্প প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য নয়

তিস্তার বিকল্প হিসেবে অন্য নদী থেকে পানি নিতে পশ্চিম বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় যে প্রস্তাব দিয়েছেন তা কি গ্রহণযোগ্য? পানিসম্পদ বিশেষজ্ঞ এবং কূটনীতিকরা বলছেন, না।

তিস্তা নিজেই শুকিয়ে আছে দাবি করে মমতা বন্দোপাধ্যায় তোর্সা ও জলঢাকাসহ কয়েকটি নদীর পানিবণ্টনের বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। তার এই প্রস্তাব কেন গ্রহণযোগ্য নয়– চ্যানেল আই অনলাইনের কাছে পানিসম্পদ বিশেষজ্ঞ এবং কূটনীতিকরা তা ব্যাখ্যা করেছেন ।

মমতার বিকল্প প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য নয় উল্লেখ করে প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলেন: এই বক্তব্যের মাধ্যমে তিস্তা চুক্তি নিয়ে অনিশ্চয়তা বাড়লো। এই চুক্তি হতে এখন আরও সময় লাগতে পারে।

‘যেহেতু ভারতের প্রাক্তন ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এই চুক্তি করতে অঙ্গীকার করেছেন,  তাই উদ্যোগটি ভারত সরকারকেই নিতে হবে।’

হুমায়ুন কবির

এক্ষেত্রে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়াদি ও আনুষ্ঠানিকতা শেষ করতে যদি সময়ের প্রয়োজন হয়, তাহলে বাংলাদেশকে ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করার পরামর্শ তার।

তবে তিনি বলেন, তিস্তা চুক্তি সই হবে ২০১১ সালে খসড়া চুক্তি অনুসারে। এখান থেকে সরে আসার কোন সুযোগ নেই। ‘তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিকল্প প্রস্তাবও গ্রহণযোগ্য নয়।’

তিস্তা প্রশ্নে বাংলাদেশের কূটনৈতিক ব্যর্থতা নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন: আমরা আমাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। সর্বোচ্চটা দিয়ে আমরা চেষ্টা করেছি। এটি আমাদের কূটনৈতিক সফলতা। যার সুফল ইতোমধ্যে আমরা পেতে শুরু করেছি।

‘আমাদের চুক্তি হবে দিল্লীর সাথে। এখানে মমতা বড় ইস্যু না হলেও মাঝখাতে তিনি রয়েছেন। কালক্ষেপণ করতেই মমতা এমন প্রস্তাব দিয়েছেন বলে আমি মনে করি। তবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যও থাকতে পারে,’ বলে মনে করেন সাবেক এ কূটনীতিক।

ভারতের দীর্ঘসূত্রতার বিপরীতে ধৈর্য্য ধরার পরামর্শ দেন তিনি।

পানিসম্পদ বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাতও মমতার প্রস্তাবকে অগ্রহণযোগ্য বলেছেন। চ্যানেল আই অনলাইনকে তিনি বলেন: বাংলাদেশ-ভারত দুটি স্বাধীন দেশ। দুই দেশের যাবতীয় সমস্যার সমাধান করবেন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিস্তা ইস্যুতে কেন ভারতের একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সাথে কথা বলবেন?

‘তিস্তা ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা-মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বৈঠকককে গুরুত্ব দেয়ার মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে খাটো করে দেখা হচ্ছে। দুইজনকে একই পদমর্যাদার ভাবা হচ্ছে, যা ঠিক নয়।’

আইনুন নিশাত

মমতা ইচ্ছে করে ‘গণ্ডগোল’ তৈরি করতে এমন প্রস্তাব দিয়েছেন উল্লেখ করে আইনুন নিশাত বলেন: ২০১১ সালে দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্পে প্রতিটি নদীর আলাদাভাবে পানি প্রবাহের কথা বলা আছে। তিস্তার বদলে তোর্সা, জলঢাকাসহ উত্তরবঙ্গের কয়েকটি নদীর পানি-বণ্টনের বিকল্প যে প্রস্তাব মমতা দিয়েছেন, তা ইচ্ছে করে গণ্ডগোল বাধাতে দেয়া হয়েছে।

‘স্বাধীন দেশ হিসেবে ভুটান, বাংলাদেশ ও ভারত এসব নদী নিয়ে ভাববে। একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত দেবার নৈতিক অধিকার রাখেন না। তাকে (মমতা) নিয়ে গণমাধ্যম ও সুশীল সমাজের মাতামাতি বন্ধ হওয়া উচিত,’ বলে মনে করেন গঙ্গা চুক্তিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা ড. আইনুন নিশাত।

তিনি বলেন: তিস্তা চুক্তির বিষয়ে মমতার সদিচ্ছার অভাব রয়েছে এটি এখন প্রমাণিত। যেখানে মোদি ও হাসিনার বৈঠকে তারা বিষয়টি দ্রুত সমাধানের জন্য বলেছেন এবং তিস্তার সমাধান হবেই হবে এমন বক্তব্য দিয়েছেন মোদি; সেখানে কালক্ষেপণ করতে তিনি (মমতা) এখন এমন প্রস্তাব দিচ্ছেন।

‘এটি তাকে (মমতা) রাজনৈতিকভাবে সুবিধা দেবে। কিন্তু, এটি দুই দেশের সম্পর্ককে খারাপ করবে। আইনের জটিলতা এবং বাংলাদেশের নানা সীমাবদ্ধতার কারণে এখনই আন্তর্জাতিক আদালতে গিয়ে তেমন সুফল পাওয়া যাবে না। একমাত্র রাজনৈতিকভাবে তিস্তা প্রশ্নের সমাধান করা গেলে দুই দেশের জনগণ এর সর্বোচ্চ সুফল পাবে।’

মোট ৩১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের তিস্তা নদীর ২০০ কিলোমিটার পশ্চিমবঙ্গে এবং বাংলাদেশের ১১৫ কিলোমিটারের শুরু রংপুর অঞ্চল দিয়ে যা শেষ হয়েছে ফুলছড়িতে ব্রহ্মপুত্রে। জনসংখ্যার তুলনামূলক বিচারে তিস্তার মোট সুবিধাপ্রত্যাশী জনগণের ৩০ ভাগ ভারতে আর ৭০ ভাগ বাংলাদেশে। বর্তমানে তিস্তার প্রবাহ কমে ৫০০ থেকে ১,০০০ কিউসেকে নেমে এসেছে।

মূলতঃ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তির কারণে গত আট বছর ধরে তিস্তা চুক্তি করা সম্ভব হচ্ছে না। ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং-এর ঢাকা সফরের সময় তিস্তা চুক্তি ভেস্তে যায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তির কারণে। এবারে শেখ হাসিনার ভারত সফরে তার সঙ্গে বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন।

তবে, দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীই তাদের সরকারের আমলে তিস্তা চুক্তির বিষয়ে আশা প্রকাশ করেছেন।