ইংল্যন্ডের বিপক্ষে জিততে জিততেও শেষ পর্যন্ত প্রথম টেস্ট জয়টা হাতছাড়া হলো বাংলাদেশের। চট্টগ্রামে টেস্টের পঞ্চম তথা শেষ দিনে বাংলাদেশের হৃদয় ভেঙে দিয়ে ২২ রানে ম্যাচ জেতে ইংলিশরা। উভয়পক্ষই লড়াকু ক্রিকেট খেলেছে। তবে শেষ দিকের হিসাব-নিকাষে জয়ের পাল্লাটা বাংলাদেশের দিকেই ঝুঁকে ছিল। কিন্তু তারপরও কেন জিততে পারলো না বাংলাদেশ?
বাংলাদেশের হারের কারণগুলোর মধ্যে প্রথম ইনিংসের ব্যাটিং অনেকাংশে দায়ী। ইংল্যান্ডকে ২৯৩ রানে অলআউট করার পর ব্যাট হাতে প্রথম দিকে ভাল শুরুর পরও লিড নিতে না পারা। ইংলিশ ইনিংসের জবাবে বাংলাদেশ ৫ উইকেটে ২২১ রান থেকে ২৪৮ রানেই অলআউট হয়ে যায়। প্রথম ইনিংসে ইংল্যান্ডের পাওয়া ৪৫ রানের লিডটা পরে বাংলাদেশের জন্য বড় বোঝাই হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ম্যাচ শেষে অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমও আফসোস করে সে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, প্রথম ইনিংসে যদি আমরা ২৯০ রানও করতে পারতাম তাহলে আমাদের টার্গেটটা অনেক কম হতো।
প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের অনেকেই নিজের দায়িত্ব ঠিকঠাক পালন করতে পারেননি। টেস্ট ম্যাচের মেজাজে ব্যাট না করে বরং অতিরিক্ত আগ্রাসন দেখাতে গিয়ে উইকেট থ্রো করে ফিরেছেন। তৃতীয় দিনের শুরুতে সাকিব আল হাসান ওয়ানডের মনোভাব নিয়ে ব্যাট করতে নেমে দিনের দ্বিতীয় বলে উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে স্ট্যাম্পড হয়ে ফিরেছেন।
শুধু প্রথম ইনিংসে নয়, দ্বিতীয় ইনিংসেও পর্যাপ্ত সময় থাকার পর ওয়ানডে মেজাজে ব্যাট চালিয়েছেন ব্যাটসম্যানরা। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের শেষ পাঁচ উইকেট আউট হয়েছিল ২৭ রানে। দ্বিতীয় ইনিংসেও তার খুব বেশি উন্নতি চোখে পড়লো না। এবার শেষ পাঁচ উইকেট পড়লো ৩৬ রানে।
বাংলাদেশের হারের পেছনে উইকেটের ভূমিকাও ছিল। টেস্টের দ্বিতীয় দিন থেকেই পিচ ভেঙে ধুলো উড়ছিল। এই উইকেটে বাংলাদেশের স্পিনাররা সুবিধা পেয়েছে, কিন্তু চতুর্থ ইনিংস ব্যাট করতে হয়েছে বাংলাদেশকে, যেটা ব্যাটসম্যানদের জন্য কষ্টকর ছিল।
এমনিতেই চতুর্থ দিনে যেকোন পিচে ব্যাট করা কঠিন। সেখানে এই রকম ভাঙা পিচে কাজটা আরো বেশি কঠিন হয়েছে। পিচ ভেঙে যাওয়ায় ইংলিশ স্পিনাররা যেমন সুবিধা পেয়েছেন, তেমনি পেসাররাও এক ধরনের সুবিধা পেয়েছেন। স্পিনারদের বল বাড়তি ঘূর্ণির পাশাপাশি পেসারদের বল পিচে পড়ে স্লো হওয়ায় ব্যাটে আসতে অনেক দেরি হয়েছে। যার কারণে বল ব্যাটে না লেগে প্যাডে লেগেছে। বাংলাদেশের পাঁচজন ব্যাটসম্যান এলবিডব্লিউর শিকার হয়েছেন।
এলবিডব্লিউ’র নতুন নিয়মও বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড ম্যাচে প্রভাব ফেলেছে। এলবিডব্লিউ’র নতুন নিয়ম চালু হয়েছে এই মাসেই। আগের ডিআরএস নিয়মে এলবিডব্লিউর জন্য বলের প্রায় পুরো অংশ প্যাডে আঘাত হানতে হতো এবং বল মিডল স্ট্যাম্পে থাকতে হতো। কিন্তু নতুন নিয়মে বলের অর্ধেক বা তার বেশি অংশ প্যাডে লাগলে এবং সেই বল তিনটির যেকোন একটি স্ট্যাম্প বরাবর থাকলেই ব্যাটসম্যান আউট হবেন।
চট্টগ্রাম টেস্টে এরকম অনেকগুলো সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের বেলায় ঘটেছে। আর পুরো ম্যাচে ৪০টি উইকেটের রেকর্ড ২৬টি আউটের সিদ্ধান্ত হয়েছে ডিআরএসে। এই ২৬টির ২৫টি রিভিউ নিয়েছে ইংল্যান্ড। এই নতুন রিভিউ আসলে ম্যাচের ফলাফল ঠিক করে দিয়েছে।
বাংলাদেশের হারের পেছনে আরেকটি বড় কারণ টেস্ট খেলায় দীর্ঘ বিরতি। ১৫ মাসের লম্বা সময় পর টেস্ট খেললো বাংলাদেশ। এই সময়ের মধ্যে ইংল্যান্ড খেলেছে ২৬টি টেস্ট। এই লম্বা বিরতি দুই দলের বিশেষ করে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মেজাজ মর্জিতে বিশাল ফারাক এনে দিয়েছে।
এ নিয়ে মুশফিক বলেন, ২ উইকেট হাতে নিয়ে ৩৩ রান দরকার ছিল। সম্ভবত এটা আমাদের পক্ষে ছিল না। তবে ১৫ মাস পর মাঠে নেমে ছেলেরা যেভাবে লড়াই করেছে তাতে আমি গর্বিত।