চলতি (২০১৯-২০) অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে ভাটা থামছে না। অর্থবছরের প্রথম ৩ মাসে উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে সঞ্চয়পত্র বিক্রি। এই অর্থবছরের তৃতীয় মাস সেপ্টেম্বরে সঞ্চয়পত্র নিট বিক্রি হয়েছে মাত্র ৯৮৫ কোটি ৭১ লাখ টাকা। তার আগের মাস আগস্টে নিট বিক্রি হয়েছিল ১ হাজার ৪৯৯ কোটি ৩৭ লাখ টাকা।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রতিবেদনের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ক্রমান্বয়ে প্রতি মাসেই কমছে সঞ্চয়পত্র বিক্রি। জুলাই মাসে নিট বিক্রি হয় ২ হাজার ১৬০ কোটি টাকা। আগস্টে বিক্রি হয় ১ হাজার ৪৯৯ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। অথচ গত অর্থবছরের শেষ মাস জুনে বিক্রি হয় ৩ হাজার ২০৮ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উৎসে করারোপের কড়াকড়িই সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমে যাওয়ার পেছনে প্রধান কারণ।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, আগে ধনী ব্যক্তিরা বিভিন্ন ব্যাংকে বিভিন্ন নামে শত শত কোটি টাকা রেখে দিত। কিন্তু এখন প্রযুক্তির প্রসারের ফলে এই সুযোগ কমে গেছে। কারণ সব ব্যাংক এখন প্রযুক্তির আওতায়।
এছাড়া এখন টিআইএন ধারীরা ছাড়া কেউ সঞ্চয়পত্র কিনতে পারে না। এই দুটি কারণে বিক্রি কমেছে এবং কমাটাই স্বাভাবিক বলে মনে করেন তিনি।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, কেউ কেউ হয়তো সঞ্চয়পত্র কিনতে চাইলেও পারেন না। কারণ তাদের টিআইএন সনদপত্র নাই। টিআইএন সংগ্রহ করা অনেকেই ঝামেলা মনে করেন।
তিনি বলেন, এছাড়াও আগে অনেকেই ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে সঞ্চয়পত্র কিনতেন। কিন্তু এখন সঞ্চয়পত্রেও আগের মত লাভ হয় না। ব্যাংকে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ কমে গেছে। এ কারণে সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমেছে।
সরকার চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্রে উৎসে কর বাড়িয়ে দ্বিগুণ করে দেয়। অর্থাৎ ৫ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্রের সুদের ওপর উৎসে কর ৫ শতাংশের পরিবর্তে ১০ শতাংশ করা হয়। এক লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনতে কর শনাক্তকরণ নম্বর বা টিআইএন বাধ্যতামূলক করা হয়। সঞ্চয়পত্রের সব লেনদেন ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে করতে হচ্ছে ক্রেতাদের।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের তৃতীয় মাস সেপ্টেম্বরে মোট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ৬ হাজার ১১৫ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে আগের কেনা সঞ্চয়পত্রের মূল ও সুদ পরিশোধ বাবদ ব্যয় হয়েছে ৫ হাজার ১২৯ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। সুদ বাবদ পরিশোধ করা হয় ২ হাজার ৬৭৭ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। সঞ্চয়পত্র নিট বিক্রি হয় ৯৮৫ কোটি ৭১ লাখ টাকা।
হালানাগাদ তথ্যে দেখা যায়, ৩ মাসে মোট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ১৭ হাজার ৪২১ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে আগের কেনা সঞ্চয়পত্রের মূল ও সুদ পরিশোধ বাবদ ব্যয় হয়েছে ১২ হাজার ৭২৩ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে সুদ বাবদ ব্যয় হয়েছে ৭ হাজার ৫৬৬ কোটি ৯ লাখ টাকা। সঞ্চয়পত্র নিট বিক্রি হয়েছে ৪ হাজার ৬৯৮ কোটি ৭ লাখ টাকা।