সহিংস রাজনীতির বলি হওয়া কৃষককে ঋণ পুন:তফশিল করার সুযোগ দেয়া হতে পারে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। সচিবালয়ে কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেট আলোচনার সুপারিশ হাতে পেয়ে মন্ত্রী বলেছেন, কৃষিকে বরাবরের মতো এবারো গুরুত্ব দেয়া হবে বাজেটে।
কৃষি ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজ মঙ্গলবার ৩ জেলায় কৃষকের সঙ্গে আলোচনায় উঠে আসা ৫৭ দফা সুপারিশ অর্থমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন।
এই নিয়ে ১০ম বারের মতো কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেট আলোচনার সুপারিশ তুলে দেয়া হলো অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের হাতে। পঞ্চগড়, টাঙ্গাইল এবং খুলনায় প্রায় ১২ হাজার কৃষকের সঙ্গে আলোচনায় পাওয়া বরাদ্দের দাবি এবং সমস্যার ভিত্তিতে করা হয়েছে সুপারিশ। এর মধ্যে ফসল কৃষির ২১টি, পোল্ট্রি শিল্পের জন্য ১২টি, মৎস্য খাতে ১৩ দফা এবং প্রাণী সম্পদ খাতের রয়েছে ১১ টি বিষয়। পরপর দুবছর রবি শষ্য মৌসুমে হরতাল-অবরোধের ফেরে পড়ে ঋণখেলাপী হওয়া কৃষকের তাই বাজেটে ঋণ মওকুফের ঘোষণা সবচেয়ে বেশি কাম্য। কৃষকের পক্ষে তার এই আর্তি তুলে ধরেন বাজেট আলোচনার সঞ্চালক শাইখ সিরাজ।
শাইখ সিরাজ বলেন, ৩ বছর কৃষকরা উৎপাদিত পণ্যের মূল্য পেলো না, বাজারে পাঠাতে পারলো না, কিন্তু ঋণের জালে আটকা রইলো। এই বিষয়টাই এবারের বাজেটে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। কোনো কৃষক ঋণ মওকুফের কথা বললেও কোনো কোনো কৃষক ঋণ পুনর্বিন্যাসের কথা বলেছে। এক বিঘা জমিতে যদি হাতে চারা রোপন করা হয় তাহলে ২০০০ টাকা খরচ হয়। কিন্তু ট্রান্সপ্লান্টার বা যন্ত্র দিয়ে লাগালে ৭০০ টাকা খরচ হয়। একইভাবে জমিতে ট্রাক্টর দিয়ে হালচাষ করলে ৮০০ টাকা লাগে আর গরু দিয়ে করলে খরচ হয় ২২০০ টাকা। তাই কৃষককে নানাভাবে প্রনোদনা দিয়ে যান্ত্রিকীকরণের দিকে অগ্রসর করাতে হবে।
অর্থমন্ত্রীর কাছে গণমাধ্যম কর্মীদের প্রশ্ন ছিলো কৃষি ঋণের সুদ মওকুফ করা হবে কিনা? কেনোইবা বোরো মৌসুমের ঠিক আগে আগে চাল আমদানির অনুমতি দেয়া হলো?
এব্যাপারে তিনি বলেন, মওকুফের সিদ্ধান্ত এখনো নেওয়া হয়নি। তবে পুনর্বিন্যাস হতে পারে। আমাদের দেশের কৃষিতেও বৈচিত্র এসেছে, সেটা নিয়ে গর্ব আমরা করতেই পারি। দেশে মাছ অনেক বেড়েছে। মাংসে আমরা সফল হতে পারিনি। সেটা এখনো আমাদের জন্য অন্ধকারাচ্ছন্ন। আমরা এদিকটা নিয়ে কি করা যেতে পারে তা ভাবছি।
অর্থমন্ত্রী আরো বলেন, এই আয়োজনের মধ্যে দিয়ে কৃষক ও সরকারের নীতি নির্ধারকদের মধ্যে একটি সেতুবন্ধন তৈরি হয়েছে। এই সরকার বরাবরই কৃষির প্রতি সর্বোচ্চ আন্তরিকতা দেখিয়ে আসছে। খাদ্য নিরাপত্তায় স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন এবং কৃষির সকল ক্ষেত্রে আশাব্যঞ্জক উৎপাদন সাফল্যই তার প্রমাণ।
৪ জুন সংসদে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। ভবিষ্যতে কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেটসহ অন্য প্রাক-বাজেট আলোচনা নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে শুরু করতে চান তিনি।
উল্লেখ্য, ২০০৫ সাল থেকে জাতীয় বাজেট সম্পর্কে কৃষককে অধিকার সচেতন করে তোলা এবং বরাদ্দ, প্রত্যাশা ও চাহিদা নিরূপণের জন্য তৃণমূল পর্যায়ে প্রাক-বাজেট আলোচনার আয়োজন করে আসছেন কৃষি ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজ। এবার দেশের তিনটি স্থানে ওই প্রাক-বাজেট আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পঞ্চগড়, টাঙ্গাইল ও খুলনার সেই প্রাক বাজেটে ১২ হাজার কৃষকের কৃষিক্ষেত্রে সরকারের নেয়া বিভিন্ন কর্মসূচি ও সুযোগ সুবিধার নিয়ে একটি প্রকাশ্য জরিপের ফলাফল তুলে দেওয়া হয় অর্থমন্ত্রীর হাতে।