চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

কৃষি ও কৃষকের স্বার্থে কৃষি আদালত প্রতিষ্ঠার দাবি

কৃষকের অধিকার ও স্বার্থ রক্ষায় কৃষি আদালত ও খাদ্য অধিকার আইনের দাবি জানিয়েছেন সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা বলেছেন, ভেজাল সার ও বীজ থেকে শুরু করে কৃষির সকল সমস্যার সঠিক সমাধানের জন্য প্রতিটি উপজেলায় কৃষি আদালত প্রয়োজন। যাতে কৃষক সহজে ও দ্রুতসময়ে সমস্যার সমাধান পায়।

এজন্য কৃষকদের আন্দোলন ও সংগ্রাম করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, খাদ্য অধিকার আইন করতে হবে। যাতে সরকার সাধারণ মানুষের খাদ্যে অধিকার নিশ্চিত করতে বাধ্য থাকে। খাস জমি ও পুকুর ইজারা দেয়ার ক্ষেত্রে কৃষক সংগঠনগুলোকে অন্তর্ভূক্ত করতে হবে।

শনিবার ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘খাদ্য নিরাপত্তায় দায়িত্বশীল শাসনকাঠামো এবং ভূমি-মৎস্য-বনজ সম্পদে জনসাধারণের অধিকার’ গবেষণাপত্রের ওপর বহুপাক্ষিক সংলাপে মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ফজলে হোসেন বাদশা এসব কথা বলেন।

একশনএইড বাংলাদেশ, কেন্দ্রীয় কৃষক মৈত্রী (কেকেএম) ও এশিয়ান ফার্মারস এসোসিয়েশন (আফা) অনুষ্ঠানটির অায়োজন করে।

কৃষিক্ষেত্রে সমস্যার অন্যতম কারণ দুর্নীতি উল্লেখ করে ফজলে হোসেন বলেন, “কৃষককে বিনা সুদে ঋণ দেয়া এবং অধিকার আদায়ে কৃষকবান্ধব নীতি প্রণয়ন করতে হবে”।

অনুষ্ঠানে ‘খাদ্য নিরাপত্তায় দায়িত্বশীল শাসনকাঠামো এবং ভূমি-মৎস্য-বনজ সম্পদে জনসাধারণের অধিকার’ নিয়ে গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন ফারহাত জাহান।

এতে বলা হয়, খাস জমি ক্ষমতাশীলদের দখলে, জলমহল ক্ষমতাশীলদের দখলে, কৃষকরা পণ্যের ন্যায্য মূল্য পান না দালাল ও মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে। কৃষি ও কৃষকের জন্য নানা আইন থাকলেও তার বস্তবায়ন কম।

গবেষণায় সমস্যা সমাধানের জন্য সরকার, সুশীসমাজ, গণমাধ্যম, কৃষদের ভূমিকার কথা তুলে ধরা হয়।

সরকারকে দায়িত্বশীল হওয়ার পাশাপাশি কৃষকবান্ধব নীতি প্রণয়নের কথা বলা হয়েছে। কৃষকরা নিজেদের সংগঠিত করে অধিকার আদায়ে সোচ্চার হলে সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো এগিয়ে আসবে।

অনুষ্ঠানে এশিয়ান ফার্মারস এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এস্থার পেনুনিয়া বলেন, ‘সবকিছুর কেন্দ্রে হলো ভূমি। ভূমি না থাকলে খাদ্য উৎপাদন সম্ভব হবে না। আর এক্ষেত্রে সরকারকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে’।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, ‘ক্ষমতা কাঠামোর দুর্বলতার কারণে ভূমি নিয়ে আইন থাকলেও তা কর্যকরী হয় না। কৃষিতে শ্রম ঘাটতি দেখা দিয়েছে। আর এই সুযোগে শহরের শিল্পপতিরা দারিদ্র্য জনগোষ্ঠীকে শোষণ করে যাচ্ছে।’

তিনি আরো বলেন, “কৃষি পণ্যের ন্যায্য মূল্য পেতে বাজারে দুটি সমবায় থাকতে হবে। একটি উৎপাদন অর্থাৎ কৃষক আর অন্যটি ভোক্তা। মধ্যস্বত্বভোগীদের মুনাফা নেয়ার সুযোগ বন্ধ হলে কৃষকরা পণ্যের ন্যায্য মূল্য পাবেন।’

অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ও একশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির নারী কৃষকদের বঞ্চনার কথা উল্লেখ করে বলেন, নারীরা প্রথমে কৃষক হিসেবে বঞ্চিত হচ্ছে। আবার নারী হবার কারণে বঞ্চিত হচ্ছেন। এই বৈষম্য কোনভাবেই কাম্য নয়। অধিকার আদায়ে কৃষকদেরও নিজেদের সংঘবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

কৃষকের নিরাপত্তায় খাদ্য অধিকার আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন প্রয়োজন বলে মনে করেন ফারাহ্ কবির।

বাংলাদেশ কৃষক লীগের সভাপতি ছবি বিশ্বাস বলেন, ‘আমাদের দেশে অনেক আইন আছে, তবে এর প্রয়োগিক দিক নাই। কৃষিনীতি হয়েছে তবে তার বাস্তবায়ন কম। বহুজাতিক কোম্পানীর কারণে কৃষকের ধান চিটা হচ্ছে। তবে এর প্রতিকার পান না কৃষক। খাস জমি থাকতেও কৃষককে জমি ভাড়া নিয়ে চাষ করতে হবে’।

অনুষ্ঠানে কৃষক ফেডারেশনের সভাপতি বদরুল আলম বলেন, ‘বর্তমান সরকার কৃষিবান্ধব তবে কৃষকবান্ধব না। এদেশে কৃষক ধান বা চালের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেনা। আবার ভারত থেকে কম দামে চাল আমদানী হচ্ছে। কৃষকের স্বার্থে আমদানী বন্ধ করতে হবে।

অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কৃষকরা যোগ দেন। কৃষকরা কৃষি যন্ত্রপাতিসহ তাদের অধিকার আদায়ে প্রেসক্লাব থেকে পল্টন মোড় পর্যন্ত একটি র‌্যালি করেন।