ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান স্যার ফজলে হাসান আবেদ খাদ্য এবং কৃষিখাতের নোবেল পুরস্কার বলে পরিচিত ‘ওয়ার্ল্ড ফুড প্রাইজ ২০১৫’ গ্রহণ করে বলেছেন, দরিদ্ররাই আমাদের গল্পের মুল নায়ক। বিশেষ করে নারীরা তাদের জীবনের প্রতিটি দিন দরিদ্রতা মোকাবেলার জন্য অসংখ্য প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের আইওয়া অঙ্গরাজ্যের রাজধানী দি মোয়াইন-এ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে পুরস্কারটি গ্রহণ করেন ফজলে হাসান। বিশ্বব্যাপী খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি, দরিদ্র্যদের মাঝে তা ছড়িয়ে দেওয়া এবং এর মাধ্যমে দারিদ্র্য দূরীকরণে অসামান্য অবদানের জন্য স্যার ফজলে হাসান আবেদকে ৪১তম ওয়ার্ল্ড ফুড প্রাইজ দেওয়া হয়। পুরস্কারের অংশ হিসেবে ২ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার পাবেন তিনি।
ওয়ার্ল্ড ফুড প্রাইজের জন্য নির্বাচিত হয়ে অত্যন্ত সম্মানিত বোধ করছেন জানিয়ে ফজলে হাসান পুরস্কারটি দিয়ে তাকে এবং ব্র্যাকের প্রচেষ্টাকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য ওয়ার্ল্ড ফুড প্রাইজ ফাউন্ডেশনকে ধন্যবাদ জানান।
কুইন এবং ওয়ার্ল্ড ফুড প্রাইস সিলেকশন কমিটির চেয়ারম্যান এবং সদস্যদের ধন্যবাদ জানিয়ে ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা বলেন, এই স্বিকৃতী পেয়ে আমি কতটো আলোড়িত হয়েছি এবং সম্মানিত বোধ করছি তা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। একই সাথে আমি বলতে চাই এই পুরস্কার শুধু আমার জন্য নয়। বাংলাদেশ এবং আফ্রিকা ও এশিয়ার অন্যান্য দেশের কোটি কোটি জনগণের দারিদ্রতা থেকে উত্তরণের পথ দেখানোর জন্য ব্র্যাকের ৪৩ বছর ব্যাপি কাজের স্বীকৃতি এই পুরস্কার।
“বিশ্বব্যাপি আমাদের কাজের মাধ্যমে আমরা উপলব্ধি করতে পেরেছি যে দেশ ও সংস্কৃতি ভিন্ন হলেও গরীব ও প্রান্তিক শ্রেণীর মানুষের বাস্তবতা, সংগ্রাম, উদ্দিপনা এবং স্বপ্ন লক্ষ্যণীয়ভাবে একইরকম। দারিদ্রতার বহুমুখী সমস্যা সমাধানে আমাদের লাখ লাখ বা হাজার হাজার মানুষকে বিবেচনায় নিয়ে বড় আকারে চিন্তা করতে হবে।”
দরিদ্রদের হাতেই তাদের উত্তরণের দায়িত্ব দিতে হবে উল্লেখ করে ফজলে হাসান বলেন, আগামী দশকগুলোতে দারিদ্রদের হাতেই এই সমস্যা মোকাবেলার সমাধান তুলে দিতে হবে। দরিদ্র বিশেষ করে নারীদের হাতে তাদের জীবন পরিচালনার ক্ষমতা তুলে দেয়ার মাধ্যমে বিশ্ব থেকে দারিদ্র এবং বঞ্চনার চিত্র মুছে ফেলা যাবে।
বক্তব্যের শেষে দরিদ্র বিমোচনের ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রাখা ফজলে হাসান দরিদ্রদের সাহায্য করার ব্যপারে তার ও ব্র্যাকের কাজ করে যাওয়ার অঙ্গিকার পুনর্ব্যক্ত করেন।
পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে ২০১৩ সালের পুরস্কার বিজয়ী রব ফ্রালে বলেন, দারিদ্র্য দূরীকরণে জৈবপ্রযুক্তি ব্যবহার করা বিশ্বের প্রথম দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। বাংলাদেশের কৃষকদের আধুনিক প্রযুক্তির শিক্ষাপ্রদানে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছেন আবেদ।
গত ১ জুলাই ওয়াশিংটন ডিসিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র বিভাগের এক অনুষ্ঠানে পুরস্কারের বিজয়ী ঘোষণা করেন ওয়ার্ল্ড ফুড প্রাইজ ফাউন্ডেশনের সভাপতি কেনেথ এম. কুইন।
ওই অনুষ্ঠানে কুইন বলেন, পৃথিবী যেখানে এর বিশাল জনসংখ্যার সবার খাদ্য চাহিদা পূরণে হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে স্যার ফজলে আবেদ এবং তার ব্র্যাক নারী শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন এবং দারিদ্র্য দূরীকরণের চেষ্টায় অনুকরণীয় মডেল তৈরি করেছে। এই বিশেষ অর্জনের স্যার ফজলে হাসান আবেদ সত্যিই ওয়ার্ল্ড ফুড প্রাইজ পাওয়ার দাবিদার।