চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

কৃষকের ঈদ আনন্দ ও চলচ্চিত্রের শেকড়ের সন্ধানে

প্রতি ঈদের মতো এবারেও আসছে ঈদ-উল-আযহায় চ্যানেল আইতে প্রচারিত হবে দর্শকপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা ‘কৃষকের ঈদ আনন্দ’ অনুষ্ঠানটি। এবারের অনুষ্ঠানটি নির্মাণের জন্য পরিকল্পক, পরিচালক ও উপস্থাপক শাইখ সিরাজ গবেষণা করে বেছে নিলেন মানিকগঞ্জকে।

মানিকগঞ্জে জন্ম নিয়েছিলেন উপমহাদেশের চলচ্চিত্রের জনক খ্যাত হীরালাল সেন। আরেক কিংবদন্তী বাংলার কালজয়ী অভিনেতা ও পরিচালক খান আতাউর রহমানও মানিকগঞ্জের সন্তান। এছাড়া ষাটের দশক থেকে গ্রামীন পটভূমির চলচ্চিত্র নির্মাণের তীর্থস্থান হয়ে ওঠে মানিকগঞ্জের বিভিন্ন স্থান। তাই এবারের কৃষকের ঈদ আনন্দ অনুষ্ঠানে কৃষকদের বিভিন্ন রকম খেলাধুলার পাশাপাশি থাকছে সেই সময়ের চলচ্চিত্রে কৃষি ও কৃষকের জীবন উপলব্ধির সাথে বর্তমান সময়ের প্রামাণ্য দৃশ্যায়ন।


ষাটের দশকে মানিকগঞ্জের তরায় ধলেশ্বরী নদীতে চিত্রায়িত হয় ‘সোয়ে নদীয়া জাগে পানি’ চলচ্চিত্রের কিছু দৃশ্য। সেই সময়ের স্মৃতির কথা বর্ণনা করেন আমীর আলী

ষাটের দশকের সেই জাগো হুয়া সাভেরা, সোয়ে নদীয়া জাগে পানি থেকে শুরু করে আশির দশকের ভাত দে, লাঠিয়াল, নয়নমনি, গোলাপী এখন ট্রেনে ইত্যাদি বিখ্যাত সব চলচ্চিত্রের শ্যুটিং হয় মানিকগঞ্জের বিভিন্ন লোকেশনে। সেইসব চলচ্চিত্রের সেলুলয়েড রিলে ধরা পড়া কৃষি ও কৃষকের জীবনের গল্পের পাশাপাশি সেই সময়কার বাস্তবতা অন্বেষণে বেরিয়ে পড়েন শাইখ সিরাজ। তরা, নবগ্রাম, বেউথা ঘাট, হিজুলী কাচারি বাজার, বুজরুকী নানা অঞ্চলের মানুষজনের সাথে কথা বলে তুলে আনার চেষ্টা করা হলো সেই সময়কার গল্পগুলো।

চলচ্চিত্রের নির্মাণদৃশ্য দেখার পাশাপাশি স্থানীয় লোকজনের কেউ কেউ সেইসব চলচ্চিত্রের কোন কোন চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন খুঁজে বের করা হলো তাদের। তাদের কথা থেকে উঠে আসলো অজানা সব বিস্ময়কর গল্প, চমকপ্রদ নানা কাহিনী।


মানিকগঞ্জের বেউথা ঘাটের সুরাইয়া তখন নতুন বউ হয়ে এলেন এই বাড়িতে। এসে দেখেন তার থাকার ঘর দখল করে আছেন শাবানা, আলমগীর, আনোয়ারা সহ সিনেমার লোকজন। ‘ভাত দে’ সিনেমার শ্যুটিং চলছিলো

সেই সময়ের সমাজ ও বাস্তবতার নিরিখে কৃষি ও কৃষকের জীবনের যে প্রতিফলন চলচ্চিত্রে আমরা দেখেছিলাম, তার বর্তমান অবস্থা এই দীর্ঘ সময় শেষে কী কী পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে এসেছে- তারও একটা রূপরেখা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তাদের বক্তব্যে উঠে আসে খাদ্যে স্বয়ম্ভর বর্তমান বাংলাদেশের অতীত রূপ। সেই ক্ষুধা, সেই অভাবের দিনগুলোর স্মৃতি তাঁদের চোখ মুখের অবয়বেও যেন ধরা দেয়।

জন্মান্ধ সাইজুদ্দি ফকির। মানিকগঞ্জের বেউথা ঘাটে ‘ভাত দে’ সিনেমার কালজয়ী গান ‘আছেন আমার মোক্তার..’ গানে আনোয়ার হোসেনের পাশে বসে থেকে দোতারা বাজানোর অভিনয় ছিলো তার। সেই স্মৃতি রোমন্থনের পাশাপাশি গানটিও বাজিয়ে শোনান তিনি।

যারা কথা বললেন, তাদের অনেকেই ছিলেন তখন কৈশোরে। তখনকার চলচ্চিত্রের প্রতিবেশ তাদের কৈশোর বয়সকে এতোটাই উদ্দীপ্ত করেছিলো যে আজও তাদের সেইসব চলচ্চিত্রের সংলাপ ও গান হুবহু মনে আছে। তাদের চোখ সেই উদ্দীপনার স্মৃতিরোমন্থনে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।

শাইখ সিরাজের কৃষকের ঈদ আনন্দের ক্যামেরা ইতিহাস অণ্বেষণে পৌঁছে যায় বুজরুকী গ্রামের হীরালাল সেনের ভিটায়। সেখানকার মানুষই শুধু নয়, প্রকৃতিও যেন হীরালাল সেনের কিংবদন্তী হয়ে ওঠার নেপথ্য সংগীত হয়ে বেজে ওঠে।

ফেরার পথে ঘিওরে কিছুটা সময়। যেখানে এ প্রজন্মের অন্যতম মেধাবীচলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ ও চিত্রগ্রাহক মিশুক মুনীর সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করেছিলেন।

স্মৃতি ফলকটিও অযত্নে ম্লান হয়ে আছে

একটা উজ্জ্বল সকালে দিন শুরু করে নানা পথ ঘুরে শেষে হারানোর কষ্ট বুকে নিয়ে যখন ফেরার পালা তখন ধীরে ধীরে অস্ত যাচ্ছিলো সূর্য। আবার কি ফিরে আসবে চলচ্চিত্রের সোনালি যুগ?

কৃষির উত্তরণের পাশাপাশি গ্রাম-বাংলার মানুষ আজও প্রতীক্ষায় আছে তাদের জীবনের গভীর বাস্তব গল্পটি হয়তো একদিন চলচ্চিত্রের পর্দায় ভেসে উঠবে। ভেসে উঠবে তাদের শ্রম-ঘাম-ত্যাগের প্রতিচ্ছবি।

শাইখ সিরাজের ‘কৃষকের ঈদ আনন্দ’ প্রচারিত হবে ঈদের পরদিন বিকাল সাড়ে চারটায়।