চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

কুড়িগ্রামে সাংবাদিক নির্যাতন: ডিসি-ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে এজাহার গ্রহণের নির্দেশ

কুড়িগ্রামের সাবেক জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেটসহ অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে নিউজপোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি আরিফুল  ইসলামের থানায় করা অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। 

এছাড়াও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের যে  মামলায় ভ্রাম্যমাণ আদালত আরিফুলকে কারাদণ্ড দিয়েছিল সেই মামলার কার্যক্রম ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট।

ভ্র‍্যাম্যমাণ আদালতের দেয়া দণ্ডের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সাংবাদিক আরিফুলের করা রিটের শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি সরদার মো. রাশেদ জাহাঙ্গীরের সমন্বয়ে গঠিত অবকাশকালীন হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এই আদেশ দেন।

আদালত তার রুলে আরিফুলকে দেওয়া দণ্ড কেন অবৈধ ও বাতিল হবে না- তা জানতে চেয়েছেন।

সোমবার আদালতে আরিফুলের রিটের পক্ষে ছিলেন সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি আইনজীবী এএম আমিন উদ্দিন ও আইনজীবী ইশরাত হাসান। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল প্রতিকার চাকমা।

এর আগে গত ১৩ মার্চ গভীর রাতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ১০০ গ্রাম গাজা এবং ৪৫০ গ্রাম ইথাইল (বাংলা মদ) জব্দের কথা উল্লেখ করে আরিফুলকে ১ বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। আর অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরো ১৫ দিনের কারাদণ্ড দিয়ে রাতেই কারাগারে পাঠানো হয়।

এই ঘটনার পর দেশজুড়ে আলোচনার প্রেক্ষাপটে  ১৫ মার্চ আরিফুলকে জামিন দেন কুড়িগ্রামের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। তবে পরিবারের পক্ষ থেকে জামিন আবেদন করা হয়নি বলে পরে সাংবাদিকদের জানায় আরিফুলের স্ত্রী।

আর আরিফুল জামিনে মুক্ত হয়ে বলেন, ‘জামিনের আবেদন তিনি করেননি। আগেই চোখ বেঁধে তার কাছ থেকে স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে।’

সাংবাদিক আরিফুলের সাথে ঘটা ঘটনার বিষয়ে তার স্ত্রী মোস্তারিমা সরদার নিতু বিবিসিকে বলেছেন: ‘গত ১৩ মার্চ গভীর রাতে অনেক লোকজন এসে আমাদের বাসার দরজা খুলে দিতে বলে। একপর্যায়ে ওনারা ধাক্কা দিয়ে দরজা ভেঙ্গে ঘরে ঢুকে সাত আটজন মিলে আমার স্বামীকে মারতে শুরু করে। তাদের হাতে রাইফেল, পিস্তল সবই ছিল। তখন তারা বারবার বলছিল, কয়দিন ধরে খুব জ্বালাচ্ছিস। গুলি করে দেবো। বলে আরো মারে। ওর গায়ে কোন কাপড় ছিল না। আশেপাশের বাড়ির কাউকে সামনে এগোতে দেয়নি। সারা রাস্তা মারতে মারতে নিয়ে গেছে। কোথায় নিয়ে যাচ্ছে, তাও বলেনি। অনেকক্ষণ খোঁজাখুঁজির পরে জানা গেল, আমার স্বামীকে নাকি মাদকের মামলায় এক বছরের সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।’

এ বিষয়ে সাংবাদিক আরিফুলের সহকর্মীরা গণমাধ্যমকে বলছেন: ‘কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক ও প্রশাসনের অনিয়মের বিরুদ্ধে আরিফুল বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন। যার মধ্যে একটি ছিল কাবিখার টাকায় একটি পুকুর সংস্কার করে জেলা প্রশাসক কর্তৃক নিজের নামেই নামকরণ করা। সে কারণেই হয়ত প্রতিশোধমূলকভাবে গভীর রাতে দরজা ভেঙ্গে ঘরে ঢুকে আরিফুলকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এবং কোন রকম তল্লাশি না চালিয়েই জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নেয়ার পর আধা বোতল মদ আর দেড়শ গ্রাম গাজা উদ্ধারের গল্প সাজিয়ে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে আরিফুলকে সাজা দিয়ে জেলহাজতে পাঠানো হয়।’

তবে কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন এ বিষয়ে বিবিসিকে বলেছেন: ‘সেটা তো একবছর আগের কথা। আর সেখানে সে স্যরি বলেছে বলে আমরা তো আর কিছুই বলি নাই। ওইটা যদি কোন বিষয় হতো, তাহলে তো তখনই আমরা কোন অ্যাকশনে যেতাম। এখন ওইটার সঙ্গে এইটা মিলাচ্ছে তারা।’

আরিফুলের ঘটনায় প্রেক্ষাপটে ডিসি সুলতানা পারভীন, আরডিসি নাজিম উদ্দিন, সহকারী কমিশনার রিন্টু বিকাশ চাকমা ও এসএম রাহাতুল ইসলামকে কুড়িগ্রাম থেকে প্রত্যাহার করা হয়।

পরে কুড়িগ্রামের সাবেক জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোছা. সুলতানা পারভীন, তিন ম্যাজিস্ট্রেটসহ ৩৫ থেকে ৪০ জনের বিরুদ্ধে গত ১৯ মার্চ কুড়িগ্রাম সদর থানায় অভিযোগ করেছেন সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম। যেখানে মধ্যরাতে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে কারাদণ্ড দেয়া এবং নির্যাতনের পূর্বাপর বিষয়ে অভিযোগ করেন সাংবাদিক আরিফুল।