গুলশানে জঙ্গি হামলার পর সারাদেশে নিখোঁজ যুবকদের নিয়ে আলোচনার মধ্যে কুমিল্লার ৮ জন যুবকের নিখোঁজ থাকার তথ্য দিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার শাহ আবিদ
হোসেন।
তিনি জানিয়েছেন, এই যুবকদের মধ্যে তিনজনকে জঙ্গি হিসেবে সন্দেহের তালিকায় রাখা হয়েছে। যাদের একজনকে নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে।
সোমবার কুমিল্লা জেলা আইনশৃংখলা
কমিটির সভায় এসব তথ্য জানিয়ে কুমিল্লার পুলিশ সুপার বলেন, আরো অনেকে নিখোঁজ
থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই ৮ জন ছাড়াও ইতোমধ্যে আরো ৮ জঙ্গিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গত শনিবার রাতে গ্রেপ্তার করা এক যুবকের পরিচালিত ‘রক্তিম দিগন্ত’ নামে ফেইসবুক আইডি থেকেও জঙ্গি যোগাযোগের পর্যাপ্ত তথ্য পেয়েছে কুমিল্লা পুলিশ।
তিনি আরও জানান, গত দুই মাসে ৮ জন জঙ্গিকে কুমিল্লা পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। এর মধ্যে একজন ইস্ট ওয়েস্ট ইউনির্ভাসিটির ট্রিপল-ই বিষয়ে শেষ বর্ষের ছাত্র ও হিযবুত তাহরিরের সদস্য রফিকুল ইসলাম মিয়াজী (২৬)। সে ২০০৮ সালে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। পরে অনিয়মিত ছিল।
মিয়াজী কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের আদ্রা ইউনিয়নের বড় তুঘুরিয়া গ্রামের মুস্তফা কামাল মিয়াজীর ছেলে। গ্রেপ্তারের পর তাকে জেলহাজতে পাঠানো হয়।
কুমিল্লার পুলিশ সুপার সভায় বলেন, ‘আমরা যাদের ধরেছি তাদের মূল বক্তব্য হচ্ছে ‘জিহাদ’। তাদের কাছে জিহাদে সাধারণ মানুষকে মারা কোন গুনাহর কাজ নয়।
জঙ্গিদের একটি অনলাইন পোস্ট উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, “আরেক জঙ্গি লিখেছে, আমার অনেক ইচ্ছা ছিল সামরিক বাহিনীতে যোগ দেয়ার। কিন্তু সে আশা পূরণ হলো না। মনে সুপ্ত ইচ্ছা। যুদ্ধ করবো। সেই যুদ্ধ ইসলামের জন্য, আল্লাহর জন্য। কোন মানুষ্যের মস্তিষ্ক প্রসূত সংবিধানের জন্য নয়। তাদের মূল বিষয় খিলাফত।”
শাহ আবিদ
হোসেন জানান, তীক্ষ্ণ নজরদারির মাধ্যমে তারা জঙ্গি সংগ্রহ করে। তারা দেখে কোন যুবক বা কিশোর বিষন্নতায় ভূগছে। কে বাবা-মা থেকে দূরে আছে।
তিনি বলেন, কুমিল্লায় দেড় হাজার ভাড়াটিয়ার তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। কুমিল্লা জেলা পুলিশের জন্য তথ্যভাণ্ডার তৈরি করেছি।
কুমিল্লা জেলা আইনশৃংখলা কমিটির সভায় কুমিল্লা জেলা পরিষদের প্রশাসক আলহাজ মো: ওমর ফারুক অভিযোগ করে বলেন, “আমাদের অনেকেই কুমিল্লায় হেফাজতে ইসলামের অভিভাবক। হেফাজতের মিছিলে আমি তাদের দেখেছি। ঢাকায় এবং শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার পর হেফাজত ও জামায়াত কেউই কিন্তু নিন্দা জানায় নি।
“কওমি মাদ্রাসাও জঙ্গি হামলার বিরুদ্ধে কোন কথা বলেনি। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের বাসে পেট্রল বোমা হামলার পর জামিনে বেরিয়ে আসা অধ্যাপক জাকির এখন কি করে আমরা কি তার খোঁজ রেখেছি? কুমিল্লা মেডিক্যাল সেন্টার বা কুমিল্লা টাওয়ার নামে মানুষ যেটাকে চেনে, তার প্রশাসনিক কর্মকর্তা ইয়াকুব আলী, রাঙ্গামাটি হত্যা মামলার প্রধান আসামী। সে কুমিল্লা থাকে। ব্যবসা-বাণিজ্য কুমিল্লায় করে। তিনি কুমিল্লা বারের আইনজীবীও।”
তিনি আরো বলেন, “কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের তিনজন কাউন্সিলর অস্ত্রসহ ধরা পড়েছিল। তারা কুমিল্লা শহরে উন্মুক্ত ঘুরাফেরা করে। কুমিল্লা ইবনে তাইমিয়া স্কুল এন্ড কলেজ, পিস কিন্ডার গার্ডেন, পিস কাফেলা হজ্ব কাফেলা আছে এদের ব্যাপারে তথ্য থাকা উচিত। কুমিল্লা শহরে জামায়াত শিবিরের ১৬/১৭টি মেস আছে। ইবনে তাইমিয়া স্কুলের তিনজন শিক্ষক ৫টি মেস চালান। এই মেসগুলো কারা চালান। কারা থাকে এ সব বিষয়ে তদন্ত করা দরকার। ”
সভায় কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো: হাসানুজ্জামান কল্লোলের সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য রাখেন ১০ বিজির কমান্ডিং অফিসার লে. কর্নেল মো: মেহেদী, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সফিউল আহমেদ বাবুল, র্যাবের কমান্ডার মেজর মোস্তাফা কাওছার, লাকসাম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডভোকেট ইউনুছ ভূইয়া, দাউদকান্দি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মেজর (অব:) মোহাম্মদ আলী, সদর দক্ষিণ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম সারওয়ার, পিপি মোস্তাফিজুর রহমান লিটন, এনএসআই-এর যুগ্ম পরিচালক মুজিবুর রহমান, হোমনা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডভোকেট আজিজুর রহমান মোল্লা, কুমিল্লা ইসলামিয়া আলীয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আবদুল মতিন, কান্দিরপাড় জামে মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা ক্বারী মো: ইব্রাহীম, চকবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম জিলানী, পূজা উদযাপন কমিটির উজ্জ্বল কুমার দে প্রমুখ।