কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস পাশের গ্রামে সম্প্রসারণের সিদ্ধান্তকে ‘ক্যাম্পাস বিভক্তিকরণ’ উল্লেখ করে এর বিরোধিতা করছে শিক্ষার্থীরা। যদিও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, এই বিরোধিতা একটি বিশেষ মহলের কাজ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একনেকে পাশ হওয়া ‘কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন’ প্রকল্পের আওতায় ভূমি অধিগ্রহণ ও অবকাঠামোগত নির্মাণের অধিকাংশ কাজই হবে বর্তমান ক্যাম্পাসের পাশের গ্রামে। একে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বর্তমান ক্যাম্পাসের সম্প্রসারণ হিসেবে দেখছে।
কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এমন সিদ্ধান্ত ক্যাম্পাস বিভক্তিকরণ উল্লেখ করে প্রতিবাদ ও ক্ষোভ প্রকাশ করছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভাষ্য, একটি বিশেষ মহল বিশ্ববিদ্যালয়ের এত বড় অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য বিভিন্নভাবে উদ্ভট মন্তব্য ছড়াচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত ২৩ অক্টোবর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) একাদশ সভা কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬৫৫ কোটি ৫০ লাখ টাকার মেগা প্রকল্পের অনুমোদন দেয়; যার বড় একটি অংশ ব্যয় হবে ভূমি অধিগ্রহণে।
প্রকল্পের আওতাধীন ভূমি অধিগ্রহণে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার লালমাই মৌজার ৭, ৯, ১২ এবং ১৩ নং শীটে অন্তর্ভুক্ত জমি নির্ধারণ করা হয়েছে। সেখানে ১২ ও ১৩ নং হচ্ছে রাজারখলা গ্রামে, যা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে একই সঙ্গে ২০০ একর ভূমি পাওয়া সম্ভব নয়। তাই পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় থেকে যে ভূমি নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে সেখানেই উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হবে। এর মধ্যে বর্তমান ক্যাম্পাসে ৬৮ কোটি টাকা খরচে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ রাস্তা, বঙ্গবন্ধু স্কয়ার এবং নতুন একটি প্রধান ফটকসহ আনুষঙ্গিক কিছু কাজ করা হবে।
প্রকল্পের কাজ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে জমি না নিয়ে পার্শ্ববর্তী গ্রামে জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে যা আমরা মেনে নিতে পারছি না। এতে করে আমাদের ক্যাম্পাস খণ্ডিত হচ্ছে। আমরা খণ্ডিত ক্যাম্পাস চাই না। ক্যাম্পাস সংলগ্ন যতটুকু ভূমি রয়েছে সেগুলো নেয়া হোক।’
এ সময় শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস অখণ্ড রাখতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানান।
জমি অধিগ্রহণের ব্যাপারে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (চলতি দায়িত্ব) ড. মো. আবু তাহের চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘আমরা প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে ৭০ একর ভূমি অধিগ্রহণ চেয়ে প্রকল্প রেডি করেছিলাম। কিন্তু পরিকল্পনা মন্ত্রী তা আরও বাড়িয়ে প্রকল্প রেডি করতে বলেন যেখানে ২০০.২২ একর জমির কথা উল্লেখ থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশে অধিগ্রহণের মতো পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় থেকে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার রাজারখলার ৭, ৯, ১২ ও ১৩ নং মৌজার ২০০.২২ একর জমি নির্ধারণ করে দেয়া হয়।’
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে এক সাথে ২০০ একর ভূমি না পাওয়ায় আমাদের একটু দূরে ভূমি নিতে হবে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন ক্ষতি তো হচ্ছে না। আর আমরা এই ক্যাম্পাসে প্রধান গেইট, বঙ্গবন্ধু স্কয়ার, রাস্তা সংস্করণ প্রভৃতি কাজের মধ্য দিয়েই প্রকল্পের কাজ শুরু করব।’
তিনি বলেন, ‘যারা বিষয়টি না বুঝে বিরোধিতা করছে তারা কি আদৌ ক্যাম্পাসের ভালো চায়? সবার তো প্রকল্প যাতে সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়িত হয় সেদিকে নজর দেয়া উচিত।’