কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ‘বিদ্বেষমূলক শাস্তি’ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক।
আজ বৃহস্পতিবার দেওয়া এক বিবৃতিতে সংগঠনটি এ দাবি জানায়।
বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫৬ জন শিক্ষকের সই করা বিবৃতিতে বলা হয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক মাহবুবুল হক ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত এবং একই বিভাগের শিক্ষক কাজী আনিছের পদোন্নতি বাতিলের যে বিদ্বেষমূলক সিদ্ধান্ত, তা দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রত্যাহার করতে হবে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গণমাধ্যমে তথ্য দেওয়ার অভিযোগে কুবি’র গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক মাহবুবুল হক ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে সিন্ডিকেট। আর অভিজ্ঞতা সনদে সম্বোধনের ‘ভুলের’ কারণে একই বিভাগের শিক্ষক কাজী আনিছের পদোন্নতি স্থগিত করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তথ্য সরবরাহকারীকে চিহ্নিত করতে, একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বলে সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যায়। উক্ত তদন্ত কমিটি তথ্য সরবরাহকারী হিসেবে মাহবুবুল হক ভূঁইয়াকে চিহ্নিত করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে বলে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
এতে বলা হয়, যে ঘটনাকে কেন্দ্র করে উক্ত পরিস্থিতির অবতারণা, তা সম্পর্কে জানা যায়- ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের একজন শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করেও মেধাতালিকায় ১২তম স্থান অধিকার করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গঠিত প্রথম তদন্ত কমিটি ওই ঘটনায় ইউনিট কমিটির গাফিলতি ও দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ পায় এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশও করে।
বিবৃতিতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ওই ঘটনায় দায়ীদের বিচারের উদ্যোগ না নিয়ে, বরং অত্যন্ত গাফিলতিপূর্ণ ও একইসঙ্গে অভাবনীয় এরূপ বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। ওই ঘটনা প্রকাশের তথ্যসূত্র বের করার জন্য ‘উচ্চতর তদন্ত কমিটি’ নামে দ্বিতীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে।
এতে বলা হয়, তারা (কর্তৃপক্ষ) মনে করছে যেকোনো ধরনের অন্যায়-অসঙ্গতি সংগঠিত হওয়ার ক্ষেত্র হিসেবে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়নি, বরং অসঙ্গতি প্রকাশে তাদের ভাবমূর্তি বেশি ক্ষুণ্ন হয়েছে।
‘অথচ দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়াটাই তাদের ভাবমূর্তির জন্য শ্রেয় হতে পারতো, যা তারা বিবেচনায় নেয়নি। এটি অস্বাভাবিক ও বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষের অসৎ উদ্দেশ্যের ইঙ্গিতবাহী’ বিবৃতিতে যোগ করা হয়।
এতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এহেন পদক্ষেপের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানাচ্ছে। পাশাপাশি এইরকম গর্হিত প্রক্রিয়া অবিলম্বে বন্ধ করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক মনে করে, এতে শুধু ব্যক্তি মাহবুবই এখানে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন না। বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের প্রাপ্য মর্যাদা ও নিরাপত্তা এতে চূড়ান্তভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, যা শিক্ষার পরিবেশের জন্য অশনিসংকেতস্বরূপ।
কাজী আনিছের বিষয়ে বিবৃতি বলা হয়, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৯তম সিন্ডিকেটে কাজী আনিছকে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দিয়ে সে অনুযায়ী বেতন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু, পরবর্তী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কর্তৃপক্ষ ঠুনকো অজুহাতে তার পদোন্নতি বাতিল করে।’
এ ধরনের ঘটনাগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের মূলনীতিবিরুদ্ধ ও অসামঞ্জস্যপূর্ণ। এসব ঘৃণিত পদক্ষেপ আত্মমর্যাদাসম্পন্ন ও দায়িত্বশীল শিক্ষকদের প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অগণতান্ত্রিক ও বিদ্বেষপূর্ণ আচরণ হিসেবে আমরা দেখছি। এতে সার্বিকভাবে সমাজে বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা বিনষ্ট হয় বলে বিবৃতিতে জানানো হয়।
বিবৃতিতে সই করেছেন—জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. কামরুল হাসান, ঢাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ফাহমিদুল হক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের নাসির আহমেদ, জাবি নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মানস চৌধুরী, ঢাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মার্জিয়া রহমান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জাকিয়া সুলতানা মুক্তা, ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কাজী মসিউর রহমান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আর রাজী, সহকারী অধ্যাপক সুদীপ্ত শর্মা, সমাজতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাইদুল ইসলাম, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রভাষক আলি আহসান ও মামুদুল হাসান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অ্যধাপক জি এইচ হাবীব, জাবির দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রায়হান রাইন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মামুন অর রশিদ, জাবির জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক উজ্জ্বল কুমার মণ্ডল, সহযোগী অধ্যাপক রাকিব আহমেদ, সহকারী অধ্যাপক সুমাইয়া শিফাত, সহকারী অধ্যাপক সালমা আহমেদ, প্রভাষক মৃধা মো. শিবলী নোমানসহ অন্যান্যরা।