হাইকোর্টের নির্দেশনা মেনে সিটি কর্পোরেশনগুলো আপাতত কুকুর নিধন বন্ধ রাখলেও ওই প্রাণীর প্রতি মানুষের সহিংস আচরণ বন্ধ হয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় মানুষ ও প্রকৃতির বন্ধু বিবেচনা করে কুকুরকে কাজে লাগানোর সুযোগ রয়েছে।
রাজধানীর উত্তর কাফরুলের শিমুলতলি। এই এলাকায় অবাধে বিচরণ করছে প্রায় দেড় শতাধিক কুকুর। সবই বেওয়ারিশ। কুকুরের প্রতি সুহৃদ একটি পরিবার নিজ উদ্যোগে বেওয়ারিশ কুকুরদের খাবার ও চিকিৎসা দিয়ে চলেছে। কুকুরের প্রতি মানুষের সহিংস আচরণ বন্ধে ইতোমধ্যেই ওই এলাকায় ইতিবাচক জনমত তৈরি হয়েছে।
এমন জনমত তৈরিতে কাজ করা সাথিলা শারমিন মৌ বলেন, ওরা গন্ধ শুঁকেই বুঝতে পারে কে ওদের ক্ষতি করবে কে করবে না, আর ওদের তিন বেলাই খাবার খেতে দিতে হবে এমন নয়, এক বেলা খাবার পেলেই ওরা খুশি।
এটি সারাদেশের চিত্র নয়। দেশে প্রায় ১৬ লাখ বেওয়ারিশ কুকুর রয়েছে। বেসরকারী সংস্থার জরিপ অনুায়ায়ী ঢাকা শহরে কুকুর রয়েছে প্রায় ৫৩ হাজার। ব্যাপক নগরায়নে বহুতল ভবনের কারণে কুকুরের বিচরণ ক্ষেত্র কমেছে। কিন্তু কুকুরের প্রতি সহিংস আচরণ কমছে না।
কুকুরের প্রতি সহিংসতা বন্ধে কাজ করা মিথিলা শারমিন চৈতী বলেন, কুকুরের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার না করলেই হয়। ওরা নিজে থেকে কাউকে কামড়ায় না। ওদের সিরিয়াস ইনজুরিতে আমি ওষুধ খাওয়াই, ড্রেসিং করিয়ে দেই এখন পর্যন্ত কখনোই আমাকে ওরা আমাকে কামড় দেয় নি। এছাড়াও ওরা নিরাপত্তায় ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জনসংখ্যার অনুপাতে ঢাকা শহরে দেড় লাখ কুকুর থাকার কথা। শহরের বর্জ ব্যবস্থাপনায় এই কুকুর ভুমিকা রাখবে। তবে বেওয়ারিশ কুকুদের জলাতঙ্ক প্রতিষেধক টিকা দিয়ে মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাটা জরুরি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জলাতঙ্ক সংক্রান্ত পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডাক্তার বেনজির আহমেদ বলেন, আমদের উচিত কুকুর মারার দিকে না গিয়ে ডগ ওনারশিপ প্রমোশনে যাওয়া। কুকরের সঙ্গে মানুষের যে ঝগড়া সেটা দূর করতে চেষ্টা করা এবং এই ডগ ওনারশিপ প্রমোশনের মাধ্যমে আমরা কুকুরকে কাজে লাগাতে পারি। আমদের প্রায় ১৬ লক্ষ কুকর আছে, এই ১৬ লক্ষ কুকুর ব্যবহৃত হচ্ছে না। এদের সিকিউরিটির কাজে ব্যবহৃত করতে পারি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন প্রাকৃতিক প্রহরী কুকুরদের বাজার-হাট-স্কুল-কমিউনিটিভিত্তিক পুর্নবাসন করা যেতে পারে। এক একটি এলাকার বাসিন্দারা সমন্বিত ভাবে ওই সব কুকুরের খাদ্য সংস্থানেরও দায়িত্ব নিতে পারেন। হঠাৎ কুকুর কমে গেলে পরিবেশের ভারসাম্য বিঘ্নিত হবে বলেও মনে করেছেন বিশেষজ্ঞরা।