চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

কী কারণে পরমাণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে যেতে চান ট্রাম্প?

রাশিয়া ইন্টারমিডিয়েট রেঞ্জ নিউক্লিয়ার ফোর্স (আইএনএফ) চুক্তি লঙ্ঘন করায় ঐতিহাসিক পরমাণু চুক্তি থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করার কথা ভাবছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

শুক্রবার ট্রাম্পের ওই ঐতিহাসিক পরমাণু চুক্তি থেকে সরে আসার ঘোষণার পর থেকেই দু’দেশের মধ্যে বিরাজ করছে চাপা উত্তেজনা। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বজুড়ে এক ধরনের স্নায়ু যুদ্ধের আশঙ্কা করছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।

যে কারণে চুক্তি বাতিল করতে চান ট্রাম্প
ট্রাম্প বলেন, রাশিয়া ইন্টারমিডিয়েট রেঞ্জ নিউক্লিয়ার ফোর্স (আইএনএফ) চুক্তি লঙ্ঘন করেছে। ফলে এই চুক্তি থেকে আমরা বের হয়ে আসছি। তবে চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার অর্থ এই নয় যে আমরা রাশিয়াকে অস্ত্র নিয়ে যা ইচ্ছা তা করতে দেবো।

‘আমি জানি না কেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এর সমাধান বা বাতিল করেননি। তারা দীর্ঘদিন ধরে চুক্তি লঙ্ঘন করে আসছে। যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়াকে তা করতে দিতে পারে না, আমাদের তা দেয়ার অনুমতি নেই।’

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ওয়াশিংটন ও মস্কোর মধ্যে একটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি থাকায় চীন নির্বিঘ্নে ইন্টারমিডিয়েট রেঞ্জ নিউক্লিয়ার উন্নয়ন ও পরীক্ষা করে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র এই পরমাণু চুক্তিতে থাকার ফলে ক্রমাগতভাবে বেইজিং এর তুলনায় পিছিয়ে পড়ছে। এর ফলে হয়তো মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

চুক্তি বাতিলের প্রভাব
ঐতিহাসিক পরমাণু চুক্তি থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সড়ে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্তের ফলে বিশ্বের অস্ত্র নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও কূটনীতিবিদরা। তারা মনে করেন, মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই সিদ্ধান্তের ফলে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে বিপত্তি দেখা দিতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দু’দেশের মধ্যে আলোচনা করে সমন্বয় করাই হবে উচিৎ পন্থা। রাশিয়াকে পুনরায় এই জোটে ফিরিয়ে আনতে হবে।

তারা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, এর ফলে বিশ্বের সকল অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তি বিশাল ভাবে ভেঙে পড়বে। যার ফলে স্নায়ু যুদ্ধ চলাকালে কৌশলগত প্রতিযোগিতায় অস্ত্র ব্যবহার বৃদ্ধি পাবে।

রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া
রাশিয়ার বিরুদ্ধে আইএনএফ চুক্তি লঙ্ঘন করার যে অভিযোগ মার্কিন সরকারের পক্ষ থেকে আনা হয়েছে সেই অভিযোগ অস্বীকার করছে রাশিয়া।

ট্রাম্পের ওই চুক্তি থেকে সরে আসার ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়ায় রাশিয়ার পররাষ্ট্র বিষয়ক উপমন্ত্রী বলেন, ‘এটা খুব ভয়ংকর সিদ্ধান্ত হবে। এটা শুধু বিশ্ব সম্প্রদায়ের বোঝা হবে না, বরং গুরুতর নিন্দার উদ্দীপনা তৈরি করবে। এই চুক্তিটি আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ও পারমাণবিক অস্ত্র গোলকের নিরাপত্তা এবং কৌশলগত স্থায়িত্ব রক্ষণাবেক্ষণের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’

দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যমকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি আরো বলেন, রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রের এই ব্ল্যাকমেইল করে ছাড় নেয়ার সিদ্ধান্তকে নিন্দা জানায়।

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি এই ধরনের জবরদস্তি ও অবিবেচকের মত আচরণ করে আন্তর্জাতিক চুক্তি থেকে বেরিয়ে যায় তাহলে আমাদের প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নেয়া ছাড়া আর কোন অপশন থাকবে না। যার মধ্যে মিলিটারি প্রযুক্তিও থাকবে, তবে আমরা এখনই ওই পর্যায়ের সিদ্ধান্তে যেতে চাই না।

চুক্তির ঐতিহাসিক পটভূমি
সব ধরনের স্বল্প ও মাঝারি পরমাণু অস্ত্র নিষিদ্ধের জন্য ১৯৮৭ সালে তৎকালীন সোভিয়েত নেতা মিখাইল ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড রিগান নিজ নিজ দেশের পক্ষে স্বাক্ষর করেন। তবে সাগরে চালানো পরমাণু অস্ত্র এই চুক্তির বাইরে থেকে যায়।

১৯৯১ সাল পর্যন্ত ওই চুক্তির আওতায় প্রায় দু’হাজার সাতশ’ মিসাইল ধ্বংস করা হয়। উভয় দেশ তাদের পরমাণু কেন্দ্র পরিদর্শনের অনুমতি দিত।

২০০২ সালে যুক্তরাষ্ট্র এন্টি-ব্যালিস্টিক মিসাইল চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ানোর পর ২০০৭ সালে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এই চুক্তি তাদের কোন কাজেই আসছে না বলে অভিযোগ করেন।

২০১৪ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইন্টারমিডিয়েট রেঞ্জ নিউক্লিয়ার ফোর্স (আইএনএফ) চুক্তি লঙ্ঘন করেছে বলে অভিযোগ আনেন। অভিযোগে বলা হয়, রাশিয়া স্থল থেকে উৎক্ষেপিত ক্রুজ মিসাইল পরীক্ষা চালানোর মাধ্যমে আইএনএফ চুক্তি ভঙ্গ করেছেন। ইউরোপের নেতাদের চাপে ওবামা তখন চুক্তি থেকে সরে আসেননি।

মস্কোর সঙ্গে আলোচনা শেষে এই সপ্তাহের পর চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্র সরে আসতে পারে বলে জানিয়েছে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর উপদেষ্টা জন বল্টন।

যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপের বিষয়ে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ ‘একটি এককেন্দ্রিক বিশ্বের স্বপ্ ‘ দ্বারা প্রভাবিত, যেখানে তারা হবে একমাত্র সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী।