আমরা সারাক্ষণই আমাদের স্মার্টফোনের মেমোরিতে কিছু না কিছু জমাতে থাকি। হয়তো পছন্দের কোনো গান বা মজার কোনো ভিডিও ক্লিপ। যখন তখন গেমসহ অব্যবহ্নত অনেক অ্যাপ ইন্সটল করে রাখি, যার বেশিরভাগই হয়তো আমাদের দরকার নেই। আর সুযোগ পেলেই ছবি তোলা আর ভিডিও রেকর্ডিং তো আছেই।
কিন্তু স্মার্টফোনের স্টোরেজ বা মেমোরি যে কতো মূল্যবান, এভাবে সেটা অপচয়ের আগে আমরা বেশিরভাগ সময়ই টের পাই না। ফোনের স্টোরেজ সীমিত। তাই এভাবে ফাইল জমাতে জমাতে তা ভরে যাবেই। আর তখনই আপনার স্মার্টফোনটি স্লো হয়ে যাবে, হ্যাং করবে, অ্যাপ অথবা লঞ্চার ক্র্যাশ করবে, জরুরি দরকারের সময় মেমোরির অভাবে ছবি তুলতে পারবেন না… মানে সব মিলিয়ে এক অসহায় অবস্থা!
তাই এসব সমস্যা থেকে রেহাই পেতে কিছু টিপস-
মুছে ফেলুন পুরোনো অপ্রয়োজনীয় ছবি, ভিডিও
আমাদের একটা বদ অভ্যাস হলো হাতে ক্যামেরাওয়ালা ফোন থাকলেই দরকারে-বেদরকারে নিজের বা অন্যের ছবি তুলতে থাকি, ভিডিও শ্যুট করতে থাকি। হয়তো তার অনেকগুলোই খুব মূল্যবান স্মৃতি; কিন্তু সবগুলোই তো একইরকম গুরুত্ব রাখে না, তাই না? তাই দরকার নেই এমন নতুন পুরোনো ছবি এবং ভিডিও ক্লিপগুলো নিয়মিত ডিলিট করুন।
আবার কোনো এক সময় হয়তো কোনো দরকারে কিছু স্ক্রিনশট নিয়েছিলেন ফোনের। দরকার শেষ হয়ে গেলে সেগুলোও মুছে ফেলুন। কোনো ছবির ডুপ্লিকেট কপি থাকলে সেগুলোও ফেলে দিন। আপনার স্মার্টফোনে ট্র্যাশ বা রিসাইকেল বিন থাকলে সেখান থেকেও ডিলিট করা ফাইলগুলো চিরতরে মুছে ফেলুন। দেখবেন ফোনের কতখানি মেমোরি মুক্তি পাবে।
ছবি, ভিডিও সরিয়ে ফেলুন ক্লাউড বা কম্পিউটারে
আমাদের ফোনে জমে থাকা দরকারি ছবি ও ভিডিও ফাইলের সংখ্যাও কিন্তু কম নয়। আমরা চাইলেই সেগুলো ডিলিট করতে পারি না। তাই প্রয়োজনীয় ছবি ও ভিডিও ফাইলগুলো কম্পিউটারে সরিয়ে ফেলুন।
অথবা গুগল ক্লাউড বা ড্রপবক্স-এর মতো ক্লাউড স্টোরেজেও রাখতে পারেন। শুধু ছবি বা ভিডিও না, গান বা অন্যান্য ডকুমেন্ট ফাইলও এভাবে কম্পিউটার বা ক্লাউড স্টোরেজে সরিয়ে নিন এবার না রাখলেই নয় এমন কিছু ফাইল ছাড়া বাকি সবগুলো ফোন মেমোরি থেকে ফেলে দিন।
ব্যাস, অনেকটা শান্তি পাবেন এবার।
আনইন্সটল করুন অপ্রয়োজনীয় অ্যাপস
স্মার্টফোনে ইন্সটল করা একেকটি অ্যাপ বেশ অনেকটা মেমোরি দখল করে থাকে। তাই অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ আপনার ফোন থেকে আনইন্সটল করে ফেলুন।
তা হতে পারে পুরোনো কোনো গেমের অ্যাপ, যা আপনি এখন আর খেলেন না, বা কোনো সামাজিক মাধ্যমের অ্যাপ, যে সামাজিক মাধ্যম আপনি ব্রাউজার দিয়ে ব্যবহার করতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। এ ধরণের অ্যাপগুলো আবার অনেকসময় ব্যাকগ্রাউন্ডে চালু থেকে ফোন স্লো করে ফেলে, আবার ব্যাটারিও খরচ করে বেশি।
তাই অপ্রয়োজনীয় এবং অব্যবহৃত অ্যপগুলো আনইন্সটল করলে একদিকে যেমন আপনার ফোনের মেমোরি খালি হবে, তেমনি ফোনের চার্জও থাকবে আরো বেশি।
৪কে ফরমেটে ভিডিও করবেন না
ভালো মানের এবং দামি প্রায় সবগুলো অ্যান্ড্রয়েড হ্যান্ডসেটেই আজকাল ৪কে ফরমেটে ভিডিও ধারণের সুবিধা দেয়া হচ্ছে। এছাড়া আইফোন ৬এস এবং ৬এস প্লাস-এও রয়েছে এ সুবিধা।
৪কে ফরমেটে ধারণ করা ভিডিওর ফাইল সাইজ সাধারণত এইচডি ও ফুল এইচডি ফরমেটের ভিডিওর চেয়ে অনেক বড় হয়।
তাই আপনার বাড়িতে যদি ৪কে মানের টিভি বা কম্পিউটার মনিটর না থাকে তবে আপনার জন্য এক্ষেত্রে পরামর্শ একটাই – ৪কে ফরমেটে ভিডিও করা থেকে বিরত থাকুন!
ক্যামেরা সেটিংস থেকে ৪কে অপশনটি বন্ধ করে রাখুন। এতে মেমোরির পাশপাশি ব্যাটারি চার্জও বাঁচবে।
মেমোরি কার্ড ব্যবহার করুন
এক্সটারনাল মেমোরি কার্ড যেমন ইন্টারনাল মেমোরির পরিপূরক হিসেবে ব্যবহার করা যায় (অর্থাৎ ফোনের মোট স্টোরেজ বাড়াতে), তেমনি ব্যবহার করা যায় ইন্টারনাল মেমোরির বোঝা কমাতেও।
মেমোরি কার্ড ব্যবহারের সুবিধা আছে এমন প্রতিটি ফোনেই ফাইল ম্যানেজার অ্যাপ থাকে, যার মাধ্যমে ফোন মেমোরি থেকে কার্ড মেমোরিতে ফাইল ট্রান্সফার করা যায়। বেশিরভাগ অ্যাপ সরাসরি ইন্সটল করা যায় মেমোরি কার্ডে। এমনকি ইন্সটল করা অ্যাপও ফোন থেকে মেমোরি কার্ডে নেয়া যায়।
তাই এক্সটারনাল মেমোরি কার্ড ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে এমন ফোন ব্যবহার করুন। এরপর যেসব ফাইল আপনার ফোনে রাখতেই হবে সেগুলো ফোন মেমোরির বদলে সরিয়ে ফেলুন কার্ডে। এতে আপনার স্মার্টফোন অনেক হালকা বোধ করবে। তবে আইফোন ব্যবহারকারীদের এই সুযোগটি নেই বলে তাদের মন খারাপ হতেই পারে।