কোটা সংস্কার আন্দোলনের পরবর্তী প্রতিক্রিয়ার পক্ষে-বিপক্ষে কিংবা মানুষরূপী কিছু দানবের দৌড়াত্মে হাত ও জীবন হারানো রাজীব আর পা হারানো রোজিনাকে নিয়ে যখন অনেকে আলোচনা-সমালোচনায় ব্যস্ত; ঠিক তখনই আলোচনার নতুন ইস্যু হয়ে উঠেছে নতুন দেয়ালচিত্র বা গ্রাফিতি। রাজধানীর তাজমহল রোড এবং বনানীসহ কয়েকটি এলাকার দেয়ালে ওই গ্রাফিতি দেখা যাচ্ছে।
আঁকার ধরন, প্রকাশ ভঙ্গি এবং তার অব্যক্ত অর্থ – এই দেয়ালচিত্র গত কয়েক বছর ধরে দেশে-বিদেশে ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসা ‘সুবোধ’ সিরিজের আরেকটি দেয়ালচিত্র বলেই মনে করা হচ্ছে। তবে এই দেয়ালচিত্রে প্রথমবারের মতো পুরুষ চরিত্রের সুবোধের বদলে আঁকা হয়েছে জাতির গর্বিত অর্জন লাল-সবুজ পতাকার ফ্রেমে বাঁধা ছবি, যাকে গভীর ভালোবাসায় বুকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে এক কিশোরী। যেন সব হারিয়ে ওই পতাকাকে আশ্রয় করেই বাঁচতে চাইছে সে।
কিশোরীর অবয়বের ঠিক ডান দিকে একটু উপরে লেখা রয়েছে ‘This is my Masterpiece’। আর নিচের দিকে সুবোধ সিরিজের দেয়ালচিত্রের মতো লেখা রয়েছে HOBEKI? তবে আগের মতো এই দেয়ালচিত্র আঁকা শিল্পীরও নাম প্রকাশ করা হয়নি।
দেয়ালচিত্রটি একটু খুঁটিয়ে দেখলে স্পষ্ট বোঝা যায়, লাল-সবুজ পতাকার মাঝে কয়েকটি আড়াআড়ি কালো আঁচড়। যেন কেউ নোংড়া হাতে খামচে ধরার চেষ্টা করেছিল। হতাশার মধ্যে থেকেও তাকেই রক্ষার আপ্রাণ চেষ্টা করছে ওই কিশোরী, কিংবা লাল-সবুজ জাতীয় পতাকার মধ্যেই নিজের আশ্রয় খুঁজে ফিরছে এক কিশোরী।
সুবোধ সিরিজে ‘সুবোধ তুই পালিয়ে যা, এখন সময় পক্ষে না’, ‘সুবোধ এখন জেলে’, ‘সুবোধ তুই লড়ে যা, আপোষ তোকে মানায় না’, ‘সুবোধ তুই পালাস না কোথাও, তোর ভাগ্যে লড়াই লেখা’, ‘সুবোধ কেন পালাবে?’ কিংবা ‘এবার ভোরের অপেক্ষায় সুবোধ’ এমন স্পষ্ট বার্তা থাকলেও এই দেয়ালচিত্রে মানুষকে বার্তা বুঝে নিতে বলছেন শিল্পী।
তবে আঁকার অন্যতম স্থান হিসেবে বনানীকে বিশ্লেষণ করলে সম্প্রতি বনানী এলাকার আলোচিত কিছু ঘটনা আমাদের সামনে চলে আসে। আমাদের মনে আছে, বনানীর রেইনট্রি হোটেলে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছিল। ওই ঘটনার কিছুদিনের মধ্যে একই ধরনের ঘটনা ঘটে বনানীতে।
এমন ঘটনা যে শুধু বনানীতেই ঘটছে, ঠিক তাও বলতে চাই না আমরা। আসলে কম-বেশি এই ধরনের ঘটনা সারাদেশেই ঘটছে। কিছুদিন আলোচনার পর তা আবার স্বাভাবিক হয়ে এক সময় ধামাচাপা পড়ে যায়। অস্বীকার করার উপায় নেই; দেশের বিভিন্ন এলাকায় এখন নানা ধরনের অনিয়ম, নির্যাতন আর অবিচার চলছে। তা কখনো শিশুর প্রতি, আবার কখনো নারীর প্রতি, কখনো বা সংখ্যালঘু কিংবা বিরোধী মতাদর্শের প্রতি। শুধু তাই নয়, এসব নির্যাতনের বিচার না পাওয়ার সংখ্যাও কম না। রাজনৈতিক ক্ষমতা আর অর্থ শক্তির কাছে অনেককেই আমরা অসহায়ত্ব প্রকাশ করতে দেখছি।
তাহলে কি নতুন এই দেয়ালচিত্র পুরো দেশের চিত্রই তুলে ধরতে চাইছে? আমরা মনে করি, এ এক নতুন বার্তা। সমষ্টিগতভাবে এ বার্তা বুঝতে না পারলে আমাদের যে পরিণতি হতে পারে সেটাই তুলে ধরা হয়েছে গ্রাফিতিতে। সেটা হতে পারে সুন্দর আগামী কিংবা ভয়ংকর এক ভবিষ্যত। জাতি হিসেবে আমরা কী করবো তার ওপর নির্ভর করবে কী পরিণতি অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য।