গানের সঙ্গে মিউজিক ভিডিওর প্রচলনটা সংগীত সংশ্লিষ্ট অনেকেই ‘কালের বিবর্তন’ মনে করেন। সে কারণে শিল্পীরা অ্যালবাম প্রকাশ কমিয়ে গানের ‘মিউজিক ভিডিও’র দিকে ঝুঁকেছেন। তবে অধিকাংশ মিউজিক ভিডিওই প্রেমের গৎবাঁধা আবহ চোখে পড়ে! সে কারণে দর্শকদের পাশাপাশি অনেক শিল্পী বিরক্ত এই বিষয়টি নিয়ে!
এরমধ্যে আবার অনেক গানের ভিডিওতে বিদেশি গানের মিউজিক ভিডিও’র কনসেপ্ট নকলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব বিষয় নিয়ে ধানমন্ডির একটি রেস্তোরাঁয় চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে কথা বলেছেন জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী কুমার বিশ্বজিৎ। তিনি মনে করেন, ভিউয়ার্স (দর্শক) এবং লিসেনার্স (শ্রোতা) দু’টো আলাদা জিনিস। গান দেখার জন্য নয়, শোনার বিষয়। এখন অনেকেই গানের চেয়ে ভিডিওর দিকে ছুটছে।
কুমার বিশ্বজিৎ বলেন, গানের ভিডিও যদি ভালো হয়, হিট হয়, তাহলে যিনি ভিডিও বানাচ্ছেন এটা তো তার সাকসেস। এখানে শিল্পী কি আসে যায়? তিনি বলেন, গানের ক্ষেত্রে ভিডিও একটি বাহক হিসেবে কাজ করে। কিন্তু গানের চেয়ে ভিডিও কখনো মুখ্য বিষয় হতে পারে না। কেউ যদি এটা নিজে নিজে আত্মতৃপ্তি পেয়ে থাকে, তাহলে বলার কিছু নেই।
কিশোর কুমার, লতা মঙ্গেশকর কখনো গানের ভিউ এর হিসেব করেছেন? ব্রায়ান অ্যাডামস কি কখনো বলেছেন, আমার গান এককোটি ছাড়িয়েছে? আমার মনে হয় ওনার কম সংখ্যক গান কোটি ভিউ হয়েছে। যারা গানের ভিউ নিয়ে মাতামাতি করে তারা কি কিশোর কুমার, লতা মঙ্গেশকর, ব্রায়ান অ্যাডামসের চেয়ে বড়মাপের শিল্পী?
সরি টু সে, আমি শিল্পী হিসেবে যদি বলি আমার গান এক কোটি পেরিয়েছে, সেখানে আত্মতৃপ্তির কিছুই নেই। শিল্পীর কাজ হচ্ছে গেয়ে যাও, তার ওটাই করা উচিত। এই ভিউয়ার্স গোনার দায়িত্ব শিল্পীর নয়। সময় সবকিছুই বলে দেবে, ভিউয়ার্স লাগবে না।
উদাহরণ টেনে জনপ্রিয় এই গায়ক বলেন, যেখানে সীমান্ত তোমার, তোকে পুতুলের মতো করে সাজিয়ে, তুমি রোজ বিকেলে গানের ভিউ তো এককোটি হয়নি। সো হোয়াট! তাহলে ওই গানগুলো কি মানুষ মনে রাখেনি? প্রতিদিন হাজারো মানুষ তো গুণগুণ করে এই গানগুলো গায়। এভাবেই বোঝা যায় একজন শিল্পীর স্বার্থকতা কতটুকু। তাই আমি বলতে চাই, গান করে যাওয়া উচিত। সময়ই বলে দেবে কি করতে হবে। ভিউয়ার্স গুনে সময় নষ্ট করা উচিত নয়।
কুমার বিশ্বজিৎ বলেন, আমার বলতে কোনো দ্বিধা কিংবা জেলাসি ফিল নেই, এই ইন্ডাস্ট্রিতে অনেক কৌশলী মানুষ আছে। যারা একটা সার্কেল মেনে কৌশল অবলম্বন করে চলে। তারাই নাকি হিট! আমার কাছে মনে হয় ওনারা ‘বায়বীয়’ হিট। আমি মনে করি, কৌশলী না হয়ে, মেধা দিয়ে প্রতিযোগিতা করে কাজ করা উচিত।
এই প্রজন্মের অনেক শিল্পীর মধ্যে রাতারাতি তারকা বনে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। এ প্রসঙ্গে নন্দিত এই গায়ক বলেন, তারকা শিল্পী হওয়া হয়তো সহজ, কিন্তু টিকে থাকা অনেক কঠিন। টিকে থাকতে হলে এমন কিছু সৃষ্টি করতে হবে, যেটা শিল্পীকে বাঁচিয়ে রাখবে। মানুষের মনে হয় যখন একজন শিল্পীর গান ও গায়কী ঢুকে যাবে, তখন আর কিছুই লাগবে না।
মোটকথা মানুষের মনে জায়গা করে নেয়াটাই আসল। তাই আমি মনে করি, শিল্পীর নিজস্ব পাবলিসিটি নিয়ে দৌড়াদৌড়ির কোনো দরকার নেই, আমি তো নিজে কখনো করিনি। শিল্পী যখন নিজের গলা বাড়িয়ে পাবলিসিটি করে তখন আমার কাছে ‘ভেরি ফানি’ মনে হয়।
সবশেষে কুমার বিশ্বজিৎ জানান তার আগামীর কাজের পরিকল্পনা। তার ভাষায়, এটা আমার জন্য ড্রিম প্রজেক্ট। বলেন, আমার ৪৫ টি পুরাতন গান আবার নতুন করে আনছি। ওই গানগুলো স্টুডিও ভার্সন করব। যখন ওই গানগুলো তৈরি করেছিলাম তখন হয়তো যে কোন কারণে কিছু ভালো গান আড়ালে গিয়েছিল, সেগুলো আমার মনে হয় নতুন করে জেগে উঠবে। ওসব গানে নতুন শব্দ ও কম্পোজিশন করবো। গানগুলো নতুন করে আনতে সময় লাগবে। এই বছরে আমার এই ৪৫ গানের পিছনে ব্যয় করব।