জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের নেতৃত্বে ৫৮টি দল নিয়ে নতুন রাজনৈতিক জোট গঠন এবং একই দিন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রুদ্ধদ্বার বৈঠক। এই অবস্থার মধ্যে ঠিক তার পরের দিনই মন্ত্রিসভায় রদবদলের ইঙ্গিত দিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে তিনি বলেছেন, ‘মন্ত্রিসভায় তো রদবদল হয়ই, একটা হবে, অনেক দিন তো হয়ে গেছে।’ সাধারণত এ ধরণের পরিবর্তন স্বাভাবিক ঘটনা হলেও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বিষয়টি একটু ভিন্নভাবে দেখছেন। তারা মনে করছেন, নতুন জোট গঠনের পর যে কোন দিন মন্ত্রিসভা থেকে জাতীয় পার্টি বের হয়ে যাবে। বর্তমান মন্ত্রিসভায় একজন মন্ত্রী এবং দুইজন প্রতিমন্ত্রী রয়েছে দলটির। তবে পরিবর্তন যে পরিপ্রেক্ষিতেই হোক না কেন; আমরা তাকে ইতিবাচক সিদ্ধান্তই হিসেবে দেখি। কারণ এ ধরণের রদবদল অনেক সময় মন্ত্রিসভার কাজে গতি আনে। দীর্ঘ সময় পরিবর্তন না অানায় অনেক কিছুতেই ধীর গতি পেয়ে বসে; স্থবির হয়ে যায়। যা একটি রাজনৈতিক দলকে তার লক্ষে পৌঁছানোর পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী বর্তমান মন্ত্রিসভায় ৩১ জন মন্ত্রী, ১৭ জন প্রতিমন্ত্রী এবং ২ জন উপমন্ত্রী রয়েছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর গঠিত এ মন্ত্রিসভায় প্রথম রদবদল করা হয় ২০১৪ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি। তখন এইচ মাহমুদ আলীকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং নজরুল ইসলামকে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়। দ্বিতীয়বার হয় সামান্য পরিবর্তন; ২০১৫ সালের ৯ জুলাই স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব থেকে বাদ দেওয়া হয় দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে। এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন। যদিও এর ৭ দিনের মধ্যেই সৈয়দ আশরাফকে আবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী করে ফিরিয়ে আনা হয়। এরপর ২০১৫ সালের ১৪ জুলাই মন্ত্রিসভায় যোগ হয় নতুন পাঁচ মুখ। প্রতিমন্ত্রী থেকে মন্ত্রী হন একজন। বর্তমান সরকারের মন্ত্রিসভার পরিবর্তনের এই চিত্র দেখে নিশ্চিত করেই বলা যায়; সরকার পরিচালনার দায়িত্ব নেয়ার পর মোটা দাগে তেমন একটা পরিবর্তন হয়নি মন্ত্রিসভায়। যারা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন আমরা দেখেছি তাদের কেউ কেউ অসাধারণ কাজ করছেন। আবার কোন কোন মন্ত্রণালয়ে ভিন্ন চিত্রও দেখা যায়। তাদের অনেককে নিয়ে নানামুখী সমালোচনাও আছে। কেউ কেউ নিজেদেরকে অনেকভাবেই বিতর্কিত করেছেন। এই অবস্থায় মন্ত্রিসভায় রদবদল হলে তা প্রশাসনকে আরো গতিশীল করবে বলে আমরা মনেকরি। পাশাপাশি সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নেও তা অবদান রাখবে।