বর্তমানের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে করা একটি বেসরকারি টেলিভিশনের সংবাদের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ঘুরছে। সেখানে জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নানান বিষয় জানতে চাওয়া হয়। সেই ভিডিও নিয়েই আবার অনেকে অনেক রকমের পোষ্ট দিচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে এবার নিজের ফেসবুকে পোস্ট দিলেন প্রবাসী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক আমিনুল ইসলাম।
ফেসবুকে একটি পোস্টে আমিনুল ইসলাম লিখেছেন, জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটা রিপোর্ট প্রকাশ করেছে দেশের একটি বেসরকারি টেলিভিশন। এই শিক্ষার্থীদের জিজ্ঞেস করা হয়েছে
-বলো তো জিপিএ মানে কি?
এরা কেউ সঠিক উত্তর দিতে পারেনি।
এরপর জিজ্ঞেস করা হয়েছে
-বলো তো ‘আমি জিপিএ ৫ পেয়েছি’, এর ইংরেজি কি হবে?
এক ছেলে উত্তর দিয়েছে
-আই এম জিপিএ ফাইভ!
আরেক ছেলেকে জিজ্ঞেস করা হয়েছে
-বলো তো বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস কবে?
সে উত্তরে বলেছে
-আমি এসব জানি না। আমি সায়েন্সের ছাত্র।
এরপর তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছে পিথাগোরাস কে? সে বলেছে- উপন্যাসিক! এরা নিউটনের সূত্র কি জিনিস সেটাও জানে না!
ভিডিও সম্পর্কে এসব কথা বলা শেষে আমিনুল ইসলাম নিজের কিছু অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন, এই সব দেখে বাংলাদেশে আমার কয়েকজন সহকর্মীর কথা মনে হলো। আমি বাংলাদেশের সব চাইতে নামকরা দুটো প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িয়েছি। এর মাঝে একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে তো আবেদন করার যোগ্যতা হচ্ছে জিপিএ ৫। অর্থাৎ জিপিএ ৫ না পেলে আবেদন করাই যায় না। তো এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ানো হয়! তাই আমার সব সহকর্মীরা ছিলেন হয় ইঞ্জিনিয়ার কিংবা বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পাশ করা! এরা প্রায়ই আমাকে বলতো- সমাজ বিজ্ঞান পড়ে কি হবে! একবার আমার এক সহকর্মী, যে কিনা ইঞ্জিনিয়ারিং এর শিক্ষক, আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, আপনি সমাজ বিজ্ঞানে পড়েছেন কেন, এইসব সাবজেক্টে পড়ে কি হয়?
এই ভদ্রলোককে আমি উল্টো জিজ্ঞেস করেছিলাম, আপনি ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়েছেন কেন? তিনি বলেছিলেন- ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার জন্য! একবার আমেরিকা থেকে এক গবেষক আসলেন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে। তিনি আবার ওই ইঞ্জিনিয়ারিং এর শিক্ষকের সাথে কথা বলছিলেন। তো ওই আমেরিকান ভদ্রলোক তাকে জিজ্ঞেস করলেন, হোয়াট ইজ ইউর রিসার্চ ইন্টারেস্ট? (অর্থাৎ তার গবেষণার বিষয় কি বা কোন বিষয়ে সে গবেষণা করতে চায়)
ওই ইঞ্জিনিয়ারিং এর শিক্ষক উত্তর দিয়েছে, আই এম ইঞ্জিনিয়ার!
আমেরিকান ওই গবেষক এর পর আমাদের ইউনিভার্সিটিতে যতক্ষণ ছিলেন কোনো কথা বলেননি। তিনি হয়তো ভাবছিলেন-একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কি করে এই ধরনের উল্টো-পাল্টা উত্তর দেয়! এই হচ্ছে আমাদের শিক্ষক এবং শিক্ষাব্যবস্থা! এরা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার জন্য! কিন্তু একটা প্রশ্নের উত্তরও সঠিকভাবে ইংরেজিতে দিতে পারে না! উত্তর দিবে কি, প্রশ্নই তো বুঝে না!
এরপর সাম্প্রতিক সময়ের ছেলেমেয়েদের কথা টেনে তিনি লিখেন, এই যে যেই ছেলেপেলেগুলো জিপিএ ৫ পেয়ে কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেনি; এতে আমি অবাক হয়নি। আমি চিন্তিত হচ্ছি, তাদের ব্যবহার দেখে। যারা ভিডিওটা দেখেছেন, তারা খেয়াল করে দেখবেন, তারা যে ভুল উত্তর দিচ্ছে বা জানে না একটা বিষয়; তাদের মুখ দেখে একবারও মনে হলো না যে তারা লজ্জিত এই জন্য। উল্টো তারা হাসছিল। ভাবখানা এমন- এসব না জনলেই বা কি!
এখনেই হচ্ছে মূল সমস্যা। কারণ তারা জানে, এই দেশে কোন কিছু না জেনেও এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক পর্যন্ত হওয়া যায়! থাক তো এসএসসি’র জিপিএ ৫! বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরও যদি এই প্রশ্নগুলো করা হয়, আমার সন্দেহ আছে কয়জন সঠিকভাবে উত্তর দিতে পারবে! এভাবেই চলছে আমাদের দেশ!