মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি সংবাদমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে রোহিঙ্গাদের নিয়ে চলমান পরিস্থিতিকে ভারতের কাশ্মীর সমস্যার মতো বলে দাবি করলেও তার সঙ্গে মোটেও একমত নন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা। বরং ভারতকে হাতে রাখতে বিষয়টিকে সু চি’র একটি কৌশল বলে উল্লেখ করছেন তারা।
সু চি’র এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক আমেনা মহসিন চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, কাশ্মীরের সঙ্গে মিয়ানমার পরিস্থিতি তুলনার বিষয়টি কখনোই একরকম নয়। কেননা রোহিঙ্গারা তাদের নাগরিক ছিল। বার্মার স্বাধীনতার পরও তারা সেখানকার নাগরিক ছিলো। ১৯৮২ সালে তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়। সেই নাগরিকত্বই তারা ফেরত চায়। সেটা কখনোই কাশ্মীর সমস্যার মতো নয়। কেননা কাশ্মীরের নাগরিকদের ভারত নিজেদের নাগরিক হিসেবে অস্বীকার করে না। এটা সু চি’র একটি কার্ড মাত্র। যেটা তিনি ভারতকে হাতে রাখার জন্য ব্যবহার করছেন।
এই বিষয়ে একই কথা বলেছেন সাবেক সেনাপ্রধান হারুন-অর-রশীদ। মিয়ানমার পরিস্থিতিকে কাশ্মীর পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা করার বিষয়ে তিনি বলেন, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সমস্যা দীর্ঘদিনের। আর বাংলাদেশে সঙ্গে এটা শুরু হয়েছে ১৯৭৮ সালে। এরপর বারবারই ২০১৭ এর মতো ঘটনা ঘটেছে। রোহিঙ্গারা যা চায় তা বার্মা দিতে চায় না। তাদের প্রশ্ন তারা কোন দেশের নাগরিক? রেঙ্গুন যেতে হলেও তাদের ভিসা লাগে। কোন মানুষ কি নাগরিকত্বহীন হতে পারে? আর কাশ্মীরের লোকজন তো নাগরিকত্বহীন নয়। তারা ভারতের নাগরিক।
সু চি’র এই বক্তব্যের বিষয়ে তিনি বলেন, উনি মনে করছেন ভারতকে তার পাশে পেয়েছেন, তাই ভারত যা করেছে তিনিও তা করতে চান। তার দেশের নাগরিকদের তিনি নাগরিকত্ব দেবেন না সেটা তার সমস্যা। রোহিঙ্গাদের সবই আছে মিয়ানমারে কিন্তু তারা নাগরিকত্ব পাচ্ছে না। কাশ্মীরবাসীর নাগরিকত্ব আছে। কিন্তু রোহিঙ্গারা বার্মার নাগরিক না। সুতরাং এই দুটি বিষয় এক হয় কেমন করে?
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সেনাবাহিনীর বহুদিন ধরে চলমান সংঘর্ষ-সহিংসতা সঙ্কট সমাধানে ২০১৬ সালের আগস্টে গঠিত হয় অ্যাডভাইজরি কমিশন অন রাখাইন স্টেট। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে ওই কমিশন এক বছরের তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের প্রধান অং সান সু চির কাছে জমা দেয় চলতি বছরের ২৪ আগস্ট।
৬৩ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদন জমা দেয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই ২৪ আগস্ট দিবাগত রাতে ত্রিশটি পুলিশ ও সেনাচৌকিতে রহস্যজনক হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় নিহত হয় নিরাপত্তা বাহিনীর ১২ সদস্য। তারপরই হামলার জন্য রোহিঙ্গা ‘জঙ্গি’দের দায়ী করে জবাব হিসেবে সেনাবাহিনী পুরো অঞ্চলে হত্যাযজ্ঞ শুরু করে।
সেনাবাহিনীর ওই হামলায় এখনও পর্যন্ত ৪শ’র বেশি মানুষ মারা গেছে, আর প্রাণভয়ে লাখ লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে পাড়ি জমাচ্ছে বাংলাদেশে। নৌপথে পালিয়ে আসার পথে নৌকাডুবিতেও বাড়ছে মৃতের সংখ্যা।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, আনান কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়ন না করার উদ্দেশ্যেই মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এই হত্যাকাণ্ড শুরু করে।