ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবি মনেকরে, দেশের সোনার বাজার কার্যত কালোবাজারিদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। এ খাতে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ না থাকায় এমনটি হয়েছে। আর বৈধ পথে সোনা আমদানি না হওয়ায় বছরে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে প্রায় ৪৮৭ কোটি থেকে ৯৭৪ কোটি টাকা।
রোববার রাজধানীর ধানমণ্ডিতে মাইডাস সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় টিআইবি।
সংস্থাটির পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম এ বিষয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে বলেন, ‘বিগত চার বছরে আটককরা স্বর্ণের পরিমাণ এক হাজার ৬৭৫ কেজি। যা বছর প্রতি ৪১৮. ৭৩ কেজি। বৈধ পথে আমদানি না হওয়ায় বছরে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি ৪৮৭ থেকে ৯৭৪ কোটি টাকা। জড়িত ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন সিভিল অ্যাভিয়েশন কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তা-কর্মচারী, সরকারি-বেসরকারি বিমান সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের একাংশ।’
স্বর্ণের বিষয়ে কোনো পূর্ণাঙ্গ নীতিমালাও নেই। স্বর্ণালঙ্কারের বাজার ব্যবসায়ীদের হাতে নিয়ন্ত্রিত, যাদের একংশ চোরাকারবারি ও কালোবাজারিতে লিপ্ত রয়েছে বলে টিআইবির গবেষণায় উঠে এসেছে।
এ বিষয়ে টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের গবেষণায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত থাকার প্রমাণ রয়েছে। তবে কী পরিমাণ ব্যক্তি জড়িত সেই তথ্য আমাদের হাতে নেই।’
তিনি বলেন, ‘স্বর্ণ চোরাচালান ও কালোবাজারি সংশ্লিষ্ট কিছু আইনি বিধান রয়েছে। তবে এ নিয়ে কোনো সমন্বিত আইন নেই। যেটা আছে তারও প্রয়োগের বিষয়ে ঘাটতি রয়েছে।’
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও কর্মকর্তাদের একাংশের সাথে চোরাচালানকারি ও ব্যবসায়ীদের একাংশের যোগসাজশ রয়েছে। যার ফলে এই খাতটি বিকাশমান ও সম্ভাবনাময় হলেও টেকসই উন্নয়ন হচ্ছে না। সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সেই সঙ্গে ভোক্তা, স্বর্ণশিল্পী ও শ্রমিকদের অধিকার হরণ হচ্ছে।’
টিআইবি এ বিষয়ে একটি নীতিমালা সরকারের কাছে প্রস্তাব করেছে, যার মধ্যে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও পূর্ণাঙ্গ আইনি কাঠামোর অধীনে স্বর্ণখাতকে আনার প্রস্তাব রয়েছে। স্বর্ণ আমদানিতে ও মান যাচাই নিয়ন্ত্রণে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘দেশের স্বর্ণখাত জবাবদিহিতার অভাব, হিসাব-বহির্ভূত ও বিভিন্ন পর্যায়ে অনিয়ম-দুর্নীতি পরিলক্ষিত হয়। একটি পূর্ণাঙ্গ নীতিমালার অভাব এই পরিস্থিতির অন্যতম প্রধান কারণ। গবেষণায় এটা পরিষ্কার বাংলাদেশে চোরাচালানটা অনেকটা প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ হয়েছে।’
এ গবেষণা কাজে সহযোগী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন গবেষক মো. রেজাউল করিম ও অমিত সরকার।