হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলা মামলার রায়ের দিনে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত রিগ্যানসহ আরেক জঙ্গির মাথায় যে টুপি ছিল সেটা কারাগার থেকেই এসেছে।
বিষয়টি প্রাথমিক তদন্তে বের হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার (ডিবি) মো. মাহবুব আলম।
বৃহস্পতিবার রাতে তিনি সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি এ বিষয়ে পুলিশের তদন্ত কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্বে আছেন।
তিনি বলেন, টুপিটা রিগ্যানের পকেটেই ছিল। তখন টুপিটার উপরে আইএস শ্লোগান লেখাটা ছিল না। কিন্তু পরে সে টুপিটা উল্টিয়ে পরে আদালত চত্বরে প্রবেশ করে। তখন লেখাটা গণমাধ্যমে দৃশ্যমান হয়।
টুপিটা কি তবে কারাগার থেকে আসছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন: টুপিটা তার পকেটেই ছিল। আর কারাগার থেকে আসার পথে ব্যাপক নিরাপত্তা থাকে। তখন আসলে বাইরে থেকে কিছু সরবরাহ করার সুযোগ নাই। তখন এটা ঘটেও নি।
তাহলে কি টুপি কারাগার থেকেই আসছে? জানতে চাইলে তিনি বলেন: টুপিটা কারাগার থেকেই এসেছে। ‘
হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলার মামলার রায়ের পর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জঙ্গিদের কাঠগড়া থেকে নামিয়ে আনার প্রস্তুতি যখন চলছিল হঠাৎ ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত জঙ্গি রাকিবুল হাসান রিগ্যানের মাথায় দেখা গেল কালো টুপি। সেখানে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) পতাকার চিহ্ন।
চাঞ্চল্যকর হলি আর্টিজান মামলার রায়ের দিন গত বুধবার নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার মধ্যে কীভাবে পুলিশি হেফাজতে থাকা একজনের মাথায় এমন টুপি দেখা গেল, তা নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন।
ওই ঘটনার পর, টুপি কিভাবে পেলো তা তদন্তে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। ওই কমিটির প্রধান ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (ডিবি) মাহবুব হোসেন।
তদন্ত প্রতিবেদন কবে নাগাদ দাখিল হতে পারে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের যুগ্ম পুলিশ কমিশনার হিসেবে মো. মাহবুব আলম বলেন: আমরা কাজ করছি। সময় লাগবে। জবানবন্দি ও সাক্ষ্য প্রমাণ নিচ্ছি। আর প্রয়োজনে ও সুযোগ থাকলে আসামীদের আমরা জেল গেটে জিজ্ঞাসাবাদ করবো।
বুধবার ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমান মামলার ৮ আসামির মধ্যে ৭ জনকে ফাঁসির আদেশ এবং একজনকে খালাস দেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধী, আসলাম হোসেন ওরফে র্যাশ, আব্দুস সবুর খান, রাকিবুল হাসান রিগ্যান, হাদিসুর রহমান, শরিফুল ইসলাম ওরফে খালেদ ও মামুনুর রশিদ। খালাস পেয়েছেন মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান।
২০১৬ সালের ১ জুলাই রাত ৯টার দিকে রাজধানীর গুলশান-২-এর ৭৯ নম্বর সড়কের পাশে অবস্থিত হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গিরা হামলা চালায়। তারা অস্ত্রের মুখে দেশি-বিদেশি অতিথিদের জিম্মি করে। পরে রাতেই ওখানে অভিযান চালাতে গিয়ে পুলিশের দুই কর্মকর্তা রবিউল করিম ও সালাউদ্দিন খান নিহত হন। এছাড়াও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ ৩১ সদস্য ও র্যাব-১ এর তৎকালীন পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তুহিন মোহাম্মদ মাসুদসহ ৪১ জন আহত হন।
পরদিন ২ জুলাই ভোরে সেনা কমান্ডোদের পরিচালিত ‘থান্ডারবোল্ট’ নামের অভিযানে পাঁচ জঙ্গিসহ ছয়জন নিহত হয়। এরপর পুলিশ সেখান থেকে ১৮ বিদেশিসহ ২০ জনের লাশ উদ্ধার করে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আরও একজন রেস্তোরাঁকর্মী। আর কমান্ডো অভিযানের আগে ও পরে ৩২ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়।