স্বাধীনতার পর দেশের অর্থনীতি অনেক এগিয়ে গেলেও তার প্রায় পুরোটাই এখনো বাণিজ্য নির্ভর। শ্রমিক অধিকার কর্মীদের মতে এ কারণেই স্বাধীনতার আগের তুলনায় কারখানা শ্রমিকদের সুযোগ সুবিধা কমেছে। তাদের মতে, দেশের শিল্পায়নের তুলনায় শ্রম নির্ভর ব্যবসা বাণিজ্য বাড়ায় শ্রমিকদের আবাসন, স্বাস্থ্যসেবার মতো মৌলিক অধিকারগুলো কারখানাগুলোতে গড়ে উঠেনি।
পূর্ববঙ্গে প্রথম দিকের কারখানা আদমজী জুট মিলস লিমিটেড। কারখানায় শুরু থেকেই ছিলো শ্রমিক কর্মচারীদের জন্য কলোনি, যেখানে স্বাস্থ্যসেবা থেকে শুরু করে সন্তানদের পড়ালেখার স্কুলও ছিলো। আদমজীর মতো সেসময় প্রতিষ্ঠিত ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলেই গড়ে উঠেছিলো অনেক পাট ও চিনিকল। সেখানেও শ্রমিকদের সকল সুবিধাই নিশ্চিত করা হয়েছিলো।
স্বাধীনতার পর ব্যক্তি খাত অবিশ্বাস্য গতিতে বিকশিত হয়েছে। বেড়েছে কর্মসংস্থান, বেড়েছে জিডিপি। কিন্তু শ্রমিকদের সকল মৌলিক অধিকারগুলোসহ শিল্পকারখানা তৈরি হয়েছে খুব কম।
শ্রমিক অধিকার নিয়ে সোচ্চার সংগঠনগুলো বলছে, স্বাধীনতার আগে বাংলাদেশে যেসব শিল্পকারখানা গড়ে উঠেছিলো তাদের বেশিরভাগ মালিক ছিলেন শিল্পপতি। ৮০’র দশকের পরে যারা উদ্যোক্তা হয়েছেন তাদের বেশিরভাগেরই লক্ষ্য ছিলো সস্তা শ্রম নির্ভর পন্য তৈরী করে মুনাফার দিকে।
গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বলেন, আগে পাকিস্তান আমলে আদমজী, ইস্পাহানির মতো যারাই ইন্ড্রাস্ট্রি শুরু করেছেন তাদের দৃষ্টিভঙ্গি ছিলো ইন্ডাস্ট্রিয়াল। আর পরবর্তীতে গার্মেন্টস যারা শুরু করছেন তারা মূলত শুরু করছেন ট্রেড’এর দৃষ্টিভঙ্গি থেকে। যে কারণে একজন শিল্পপতি আর একজন ব্যবসায়ীর দৃষ্টি ভঙ্গি অনেক সময় এক হয় না।
তবে বাংলাদেশের প্রথম প্রজন্মের শিল্প কারখানা মালিকরা এ দাবি মানতে নারাজ। তারা বলছেন, আদমজী, ইস্পাহানী ও বাওয়ানি জুট মিলসের মতো বড় জায়গা নিয়ে ফ্যাক্টরি করার সুযোগ খুব কম। তাই মজুরির সঙ্গে আবাসনের জন্য শ্রমিকদের আলাদা টাকা দেয়া হচ্ছে বলে দাবি তাদের।
শিল্প উদ্যোক্তা সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ইন্ডাস্ট্রির ভেতরে যে আপনি জায়গা করে দেবেন, ইন্ডাস্ট্রি করার জায়গাই তো মানুষ পায় না। সেখানে বাসস্থান করার জায়গা পাওয়াতো খুব কঠিন। মালিকদের উদ্যোগ থাকলেও তা করা খুব কঠিন। এজন্য বাসস্থানের জন্য আলাদা টাকা দিচ্ছি।
সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পর বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশও হাঁটছে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে। শ্রমিক কর্মচারীদের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা গেলে ওই লক্ষ্যও নিশ্চিত হবে বলে মনে করেন শ্রমিক সংগঠনগুলো।