স্বামী লিবারেল পার্টিতে ক্ষমতার সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেলেও এতোদিন খ্যাতির অন্তরালেই ছিলেন সোফি। তবে সোমবার নির্বাচনের ঐতিহাসিক ফলাফলের পর থেকেই সবার নজরে আসছেন তিনি; বিশেষ করে এখন যখন ২৪ সাসেক্সে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত বাসভবনে উঠছেন পরিবারসহ।
হ্যাঁ, বলছি কানাডার নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সহধর্মিণী সোফি গ্রেগয়ার-ট্রুডো’র কথা। পর্দার আড়াল থেকে তিনি এবার চলে এলেন লাইমলাইটে। চলুন জেনে নেওয়া যাক শুধু কানাডা নয়, বিশ্বজুড়ে আলোচনায় আসা কানাডার নতুন এই ‘ফার্স্ট লেডি’ সম্পর্কে কিছু তথ্য।
ক্যারিয়ার
বাবার মতো শেয়ারবাজারে কাজ করবেন, এই আশায় সোফি গ্রেগয়ার-ট্রুডো কানাডার ম্যাকগিল ইউনিভার্সিটিতে বাণিজ্য বিষয়ে পড়াশোনা করেন। কিন্তু এই কাজ তার জন্য নয় বুঝতে পেরে তিনি যোগাযোগ বিষয়ে পড়তে চলে যান ইউনিভার্সিটি দ্যু মন্ট্রিল-এ।
কয়েক বছর সেখানে পড়াশোনা করে সোফি সিদ্ধান্ত নেন রেডিও এবং টেলিভিশন নিয়ে শিক্ষাগ্রহণের। তাই মন্ট্রিলের ‘ইকোল দ্যু রেডিও এত টেলিভিশন প্রোমিডিয়া’ থেকে আরেকটি ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। এর পর কাজ শুরু করেন শিল্প ও সংস্কৃতি বিষয়ক রিপোর্টার হিসেবে।
জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে বিয়ে হওয়ার কয়েক মাস পর সোফি কানাডিয়ান গণমাধ্যম সিটিভি’র ই-টক অংশে কুইবেক ভিত্তিক সাংস্কৃতিক রিপোর্টার হিসেবে যোগ দেন। সেখানে তিনি গসিপ সেগমেন্টের চেয়ে সেলিব্রিটিদের দাতব্য কর্মকাণ্ড নিয়ে কাজ করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতেন।
‘বুলিমিয়া’র সঙ্গে লড়াই
১৭ বছর বয়স থেকেই সোফি ‘বুলিমিয়া’য় ভুগতেন। এটি খাদ্যাভ্যাসজনিত এক ধরণের মানসিক সমস্যা। এ সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তি কোনো খাবার দেখে খেতে মন চাইলে অল্প সময়ের মধ্যেই অতিরিক্ত পরিমাণে ওই খাবারটি খায়। তারপর খাবারগুলো যেনো তার ওজন বাড়াতে না পারে সেজন্য সেগুলো শরীর থেকে বের করে দিতে জোর করে বমি করে, অথবা ল্যাক্সাটিভ জাতীয় ওষুধ খায়।
২০-২১ বছর বয়সের দিকে সোফি বুঝতে পারেন তাকে এই সমস্যাটি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। তখন তিনি তার মাকে সবকিছু খুলে বলে মায়ের সহায়তায় চিকিৎসা নিয়ে বুলিমিয়া থেকে মুক্তি পান।
বুলিমিয়াসহ খাদ্যাভ্যাসজনিত বিভিন্ন রোগব্যাধি সম্পর্কে সচেতনতা তৈরির উদ্দেশ্যে এসব নিয়ে পরামর্শ দেন সোফি। এছাড়াও নারীদের মাঝে আত্ম-সম্মানবোধ জাগানো ও নারী নির্যাতন বন্ধের মতো বিভিন্ন বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরিতে অনেক আগে থেকেই কাজ করে যাচ্ছেন সোফি গ্রেগয়ার-ট্রুডো।
সোফি-জাস্টিনের পরিচয়
সোফি আর জাস্টিন ছোটবেলায় একই এলাকায় থাকতেন। জাস্টিনের ছোট ভাই মাইকেলের সঙ্গে একই ক্লাসে পড়তেন সোফি (১৯৯৮ সালে তুষারধসে মারা যান মাইকেল)। তখন জাস্টিনকে সোফি শুধু বন্ধুর বড় ভাই হিসেবেই চিনতেন।
২০০৩-এর জুনে সোফি-জাস্টিনের আবার দেখা হয় মন্ট্রিল গ্র্যান্ড প্রিক্স চ্যারিটি বল-এ (নাচের অনুষ্ঠান)। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন তারা দু’জন। এরপর কয়েক মাস প্রেম; তারপর ২০০৪-এর অক্টোবরে বাগদান; ২০০৫-এর মে মাসে বিয়ে।
পরিবার
জাস্টিন-সোফি দম্পতির প্রথম সন্তান জেভিয়ার জেমস ২০০৭-এর অক্টোবরে পৃথিবীতে আসে। এরপর জন্ম হয় মেয়ে এলা গ্রেস’র, ২০০৯-এর ফেব্রুয়ারিতে। পরিবারের সর্বশেষ সদস্য ছেলে হ্যাড্রিয়েন, যার জন্ম ২০১৪ সালের মার্চ মাসে।
সোফি একজন গৃহিনী। গৃহিনী জীবনই ভালোবাসেন বলে জানিয়েছেন সোফি। আর দশজন গৃহিনীর মতোই তিনি ঘর সামলান, বাচ্চাদের টিফিন তৈরি করেন, তাদের স্কুল পৌঁছে দেন আর ছুটির দিনগুলোতে একটু দেরি করে বিছানা ছাড়েন।
সোফি চান তাদের সন্তানেরা বাবা-মার মতোই দোভাষী হয়ে বেড়ে উঠুক। তাই তিনি সবসময়ই বাসায় ইংরেজি এবং ফরাসি – দুই ভাষাতেই কথা বলেন।
সেবামূলক কর্মকাণ্ড
২০০৬ সালে সোফি গ্রেগয়ার-ট্রুডো ওয়াটারক্যান’র (বর্তমানে ওয়াটারএইড) খাবার পানির কূপ খনন প্রকল্পের অংশ হিসেবে শাশুড়ি মার্গারেট ট্রুডোর সঙ্গে ইথিওপিয়া যান।
এছাড়াও তিনি প্ল্যান কানাডা’র ‘বিকজ আই এম আ গার্ল’ প্রকল্প, কানাডিয়ান ক্যানসার সোসাইটি, ডাভ পে বিউটি ফরওয়ার্ড, কানাডিয়ান মেন্টাল হেলথ এসোসিয়েশনসহ অন্যান্য বেশ কিছু সেবামূলক প্রকল্প ও সংস্থার জাতীয় দূত হিসেবে কাজ করেছেন।
কানাডার আদিবাসী গোষ্ঠীগুলোর সমস্যা নিয়েও বহুবার কথা বলেছেন সোফি।
যোগ ব্যায়াম ও সঙ্গীতের প্রতি অনুরাগ
যোগ ব্যায়ামের প্রতি বহু আগে থেকেই সোফির রয়েছে ভিন্নরকম টান। ২০০৬ সাল থেকেই তিনি নিয়মিত যোগ ব্যায়াম শিখতেন। শিশুদের যোগ ব্যায়ামের শিক্ষক হওয়ার জন্য এ বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণও নিয়েছিলেন তিনি।
সঙ্গীতও ভালোবাসেন সোফি। শৈশব-কৈশোরে বাঁশি এবং গিটার বাজানো শিখেছিলেন তিনি। এছাড়া ব্যালে এবং জ্যাজ নাচেরও প্রশিক্ষণ আছে তার।
মাটির কাছাকাছি থাকার প্রত্যয়
জাতীয় নির্বাচনের আগের সপ্তাহে সোফি গ্রেগয়ার-ট্রুডো সিটিভি’কে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, যদি তার স্বামী প্রধানমন্ত্রী হন, তবুও তার জন্য খুব বেশি কিছু পাল্টাবে না। তিনি এবং তার পরিবার ‘বাস্তব, খাঁটি এবং মাটির কাছাকাছি’ একটি পরিবার হিসেবেই থাকবেন।
‘আমাদের চারপাশটা হয়তো পাল্টে যাবে। কিন্তু তার মাঝখানে আমরা যা ছিলাম তাই থাকবো,’ বলেছিলেন সোফি।
প্রধানমন্ত্রীর সন্তান হিসেবে হয়তো অনেক সমালোচনার সম্মুখীন হতে হতে পারে সোফির ছেলেমেয়েদের। তাই এখন থেকেই কীভাবে সেসব সুস্থভাবে এড়িয়ে যেতে হয়, তাদেরকে তা শিক্ষা দিচ্ছেন সোফি।