চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

কানাডার টরন্টোতে বাংলা ভাষার চর্চা

বাংলা ভাষায় কথা বলার লোকের সংখ্যা টরন্টোতে এখন প্রায় ৩০ হাজার। স্টাটিস্টিকস কানাডার মতে ১৪০টিরও বেশি ভিন্ন ভিন্ন ভাষার লোক-এর বাস টরন্টোতে। এর মধ্যে বাংলার অবস্থান ১৪ তম। তবে এটি ২০১১ সালের পরিসংখ্যান। বর্তমানে বাংলা কথা বলা লোকের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। ইংরেজী এবং ফেঞ্চ এর পর যে ভাষায় সবচেয়ে বেশি কথা বলে সেটা হচ্ছে চায়নীজ (ক্যান্টনীজ, মেন্ডারীন), তামিল, স্প্যানীজ, ত্যাগালগ, ইতালিয়ান, পর্তুগীজ,ফার্সি, রাশান, উর্দু, কোরিয়ান এবং গুজরাটি। এর পরেই বাংলার স্থান।

টরন্টো থেকে বাংলা ভাষায় বর্তমানে ১০টি সাপ্তাহিক পত্রিকা (প্রিন্টেড ও অনলাইন), ৬টি টেলিভিশন ও কয়েকটি মাসিক পত্রিকা নিয়মিত প্রকাশিত হয়। আছে বাংলা রেডিও। টরন্টোয় বাংলা চর্চায় এসব গণমাধ্যমের ভুমিকা প্রশংসনীয়।

টরন্টো ডিস্ট্রিক্ট স্কুল বোর্ডের ১০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রাথমিক পর্যায়ে বাংলা শিক্ষার ব্যবস্থা আছে। যদিও বিগত বছর পর্যন্ত ১৩টি বাংলা শিক্ষার সুযোগ ছিল। পর্যাপ্ত শিক্ষার্থীর অভাবে ইতোমধ্যে চারটি স্কুলে পাঠদান বন্ধ হয়ে যায়।

টরোন্টতে বইমেলায় শিশুরা
টরোন্টতে বইমেলায় শিশুরা

টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা শেখার কোর্স চালু আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে বলা হয়, “বাংলা হচ্ছে বিশ্বের ত্রিশ কোটি লোকের ভাষা। বাংলাদেশের প্রধান ভাষা বাংলা, ভারতে দ্বিতীয়।”

ডেনফোর্থ এভিনিউর সংস্কারের বিষয়টি অবহিত করে বছর দুয়েক আগে সিটি অব টরন্টো আমাকে একটি চিঠি পাঠায়। এটি ছিল বাংলায়। টরন্টো হেলথ্ গত বছর বেঙ্গলি ইনফরমেশন এন্ড এমপ্লয়মেন্ট সার্ভিসকে (বায়েস) অনুরোধ করে স্থাস্থ্য সম্পর্কিত একটি ফ্যাক্ট শীট বাংলায় অনুবাদ করে দিতে। এই সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক হিসেবে বিনা পারিশ্রমিকে তথ্যপত্রটি দ্রুত বাংলায় অনুবাদ করে দিই।

টরন্টোয় বাংলা ভাষার লোকের বসবাস সবচেয়ে বেশি ইস্ট ইয়র্ক ও স্কারবোরো এলাকায়। তবে নর্থ ইয়র্ক এবং ইটোবিকোতেও এ সংখ্যা বাড়ছে।

টরন্টোয় বেশ কয়েকটি সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন বাংলা ভাষার প্রসার ও প্রচারে কাজ করছে। টরন্টোর জনপ্রতিনিধি ও নীতি-নির্ধারকরা এখন বাংলাকে বেশ গুরুত্বের সাথেই বিবেচনা করছে। প্রতি বছর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা উদযাপনে তাঁদের সরব উপস্থিতিই এটা প্রমাণ করে।

আসলে বাংলা এখন শুধু বাংলাদেশের ভাষা নয়। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা। তাইতো ২০০২ সালের ১২ ডিসেম্বর সিয়েরা লিওনের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আহমাদ তেজান কাব্বাহ বাংলাকে অন্যতম সরকারী ভাষা হিসেবে ঘোষণা করেন। যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগে ও ইমিগ্রেশন ওয়েবসাইটে বাংলা ভাষা ব্যবহার করা হচ্ছে। বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সাউথ এশিয়ান ল্যাঙ্গুয়েজ স্টাডিজ বিভাগে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য পড়ানো হয়।

বাংলা শুধু টরন্টোতে নয়, সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়‍ুক এটাই প্রত্যাশা করছি। একই সাথে স্মরণ করছি বাংলা ভাষার জন্য জীবনদানকারী শহীদদেরও।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)