জনগণের ভোটে যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক, তারা যেন ব্যবসাবান্ধব হয় এটাই প্রত্যাশা ব্যবসায়ীদের।
তবে বর্তমান সরকারের ১০ বছরে অবকাঠামোসহ যে উন্নয়ন হয়েছে, তার ধারাবাহিকতাও দরকার। এ জন্য সুশাসন নিশ্চিত করাসহ দেশ পরিচালনায় বিদ্যমান সমস্যাগুলোর সমাধান অবশ্যই জরুরি।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যবসায়ীরা কী ধরনের সরকার চান এ বিষয়ে জানতে চাইলে চ্যানেল আই অনলাইনের কাছে এসব মতামত ব্যক্ত করেন বড় ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতারা।
নতুন সরকারের কাছে নিজেদের বিভিন্ন প্রত্যাশার কথা ব্যক্ত করার পাশাপাশি সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিকল্পনার মাধ্যমে দেশ পরিচালনায় কিছু পরামর্শও দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি আবুল কাসেম খান চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘আমরা ব্যবসায়ী সমাজ আমাদের কোনো দল নাই, আমরা একটা দলই বিশ্বাস করি; যেই দলটি ব্যবসা করার সুযোগ দিবে। ‘
‘‘জনগণের ভোটে যে সরকারই আসুক না কেন ব্যবসায়ীদের ব্যবসা করার সুযোগ দিবে এমন প্রত্যাশাই করে ব্যবসায়ী সমাজ।’’
আবুল কাশেম খান বলেন, গত ১০ বছর ধরে ব্যবসার বিভিন্ন খাতে যে উন্নতি হয়েছে তা যেন অব্যাহত থাকে সেটাই প্রত্যাশা করি। এছাড়া কিছু বিষয়ে আগামী সরকারের কাছে আরো বেশি নিশ্চয়তা চাই। যেমন-বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ, অবকাঠামোর উন্নয়ন, ব্যাংক ও আর্থিক খাতে পুনর্গঠন।
এছাড়াও ব্যবসা খাতে বিভিন্ন আইন প্রণয়ন বা সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে। কারণ পুরনো আইনে ব্যবসা চালিয়ে যেতে হয়।
তিনি বলেন, ঢাকা চেম্বারের দাবি, কস্ট অব বিজনেস কমিয়ে আনতে হবে। ডুইং বিজনেস সূচকে আরো এগিয়ে আসতে হবে। বিনিয়োগ পদ্ধতি সহজ করতে হবে। যাতে বিদেশিরা বাংলাদেশে এসে সহজে ব্যবসা করতে পারে।
কর্মসংস্থান সৃষ্টি করাই বর্তমানে বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে ঢাকা চেম্বারের এই সভাপতি বলেন, দেশে প্রতিবছর প্রায় ২০ থেকে ২৫ লাখ লোক কর্ম করার উপযোগী হয়ে উঠছে। কিন্তু কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে না। এই চ্যালেঞ্জটাকে মোকাবেলা করতে হবে। সেই জন্য ব্যবসা-বাণিজ্য খাত নিয়ে সরকারকে ভাবতে হবে।
তবে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন ও তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানের মতে, অবকাঠামো খাতে চলমান মেগা প্রকল্পগুলো দ্রুত সম্পন্ন করতে বর্তমান সরকারের নেতৃত্বের দরকার আছে। কিন্তু সরকারের সুশাসনে দূর্বলতাসহ কিছু সমস্যা রয়েছে। সুশাসন নিশ্চিতসহ অবশ্যই সমস্যাগুলোর সমাধান করতে হবে।
শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন চ্যানেল আই অনলাইন কে বলেন, অনেক সমস্যা নিয়ে বাংলাদেশের জন্ম হয়েছিল। যুদ্ধবিধ্বস্ত এই দেশটির নেতা শেখ মুজিবুর রহমান মারা যাওয়ার পর কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় প্রবৃদ্বি হয়নি। তবে গত ১০ বছরে বিদ্যুৎ, অবকাঠামো খাতে অনেক উন্নয়ন হয়েছে।
তিনি বলেন, বড় বড় যে কাজগুলো যেমন বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প, পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল চলমান রয়েছে সেগুলোর সমাপ্তি হওয়া দরকার। সেজন্যই নেতৃত্বের ধারাবাহিকতার প্রয়োজন রয়েছে। তবে এই জন্য সুশাসন নিশ্চিত করাসহ যেসব সমস্যা রয়েছে সেগুলোর অবশ্যই সমাধান হওয়া উচিত।
গত ১০ বছর প্রচুর উন্নয়ন দেখা গেছে, এর ধারাবাহিকতা রক্ষা করা দরকার বলে চ্যানেল আই অনলাইনকে জানান সিদ্দিকুর রহমান।
তবে অবকাঠামোখাতে উন্নয়নমূলক কাজগুলো যেন দ্রুত শেষ করা হয় ব্যবসায়ীরা সেই প্রত্যাশা করে বলে জানান তিনি।
বিজিএমইএর এই সভাপতি বলেন, পদ্মাসেতু, মেট্রোরেলসহ যেসব বড় প্রকল্প চলমান রয়েছে সেগুলো সমাপ্ত করার জন্য বর্তমান সরকারের মত একটি সুষ্ঠু নেতৃত্বের ধারাবাহিকতার প্রয়োজন রয়েছে।
‘‘তবে সরকারে একটা দূর্বলতা রয়েছে তা হলো সুশাসন। এই সুশাসন অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।’’
সিদ্দিকুর রহমান বলেন, সবচেয়ে বড় বিষয় হল, আগে চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য খালাসের জন্য মাসের পর মাস অপেক্ষা করতে হতো বিভিন্ন পণ্য বোঝাই জাহাজগুলোকে।
কিন্তু প্রধানমন্ত্রী সপ্তাহের ৭ দিনই রাতদিন ২৪ ঘণ্টা বন্দর খোলা রাখতে এবং বেশ কিছু যন্ত্র কেনার নির্দেশ দিয়েছিলেন- এই দুটি নির্দেশনার ফলে এখন চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ দাঁড়িয়ে থাকতে হয় না। এটা ব্যবসায়ীদের জন্য বড় পাওনা।