ঘনঘোর মেঘ আঁধারে কিঞ্চিৎ আলোর রেখা দিগন্তে দেখা দিয়াছিলো। ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক মহোদয় বেশ কিছুকাল আগে হইতেই বঙ্গবন্ধুর শাহাদাত বার্ষিকী পালন নিয়া একটি জাতীয় ঐকমত্য গড়িয়া তুলিবার পরিবেশের প্রয়োজনীয়তা ব্যক্ত করিতেছিলেন। ক্ষমতাসীনদের প্রধান প্রতিপক্ষের জন্মদিন লইয়া বিরাজমান ধূম্রজাল বিদূরীকরণে তিনি নামিয়াছিলেন, কাহারও জন্মদিন ১৫ আগস্ট হইতেই পারে, তবে তাহা ১৬ আগস্ট পালন করিলে বড় কিছু ব্যত্যয় ঘটিবেনা। বারংবার তিনি আবেদন করিয়া যাইতেছিলেন।
ঐ দিকের ভিতরের অবস্থা কী জানিনা। সেই মহলের একজন নিকট-সাংবাদিক দেখিলাম, ক্ষমতাসীন সাধারণ সম্পাদকের কথাবার্তা ও নিঃশব্দ কূটনৈতিক উদ্যোগের প্রতি অনুকূল মনোভাব। তাহার মতে, এইদিক হইতে জামায়াত এবং ঐদিক হইতে জাপা-কে ঝাড়িয়া ফেলিয়া দেশকে আগাইয়া নিয়া যাইতে হইবে। জাতীয় রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিমন্ডল গতিশীল ও কার্যকর করিবার স্বার্থে এইসব ব্যাপার স্যাপারের প্রতি মনে মনে গোপন পক্ষপাত সৃষ্টি হইতেছিল।
ঐদিকে শুনিতেছিলাম, তিনি বৃহৎ বৃটেনে যাইবেন। লন্ডনে নির্বাসিত জ্যেষ্ঠ সন্তান ও পরিবারের সহিত মিলিত হইবেন। টিকিট ভিসা চূড়ান্ত পর্যায়ে। ১৫ আগস্ট তিনি দেশেই থাকিবেননা। অতএব জন্মদিনের ‘কেক’ কাটিবার বীভৎস নৃশংসতার প্রতিচ্ছবি আর দেখাইবার প্রয়োজনই হইবেনা। এই খবরেও কিঞ্চিৎ স্বস্তি পাইলাম। শুনিতে থাকিলাম গোপনে গোপনে দৌত্যগিরির গভীর কাজ চলিতেছে। ম্যাডাম নিজেও এই প্রশ্নে আপসহীনতার টান টান দড়িটিতে একটু ঢিল দিয়া জাতীয় রাজনীতিতে ‘কুবাতাস’ দূর করিবার প্রচেষ্টায় কিছুটা অনুকূল মনোভাব প্রদর্শন করিতেছেন।
তাহার পর ২০১৫ সালের ১৫ আগস্টের সূচনা হইলো। রাত বারটা এক মিনিটে ঐ পৈশাচিক উল্লাসের জন্মদিনের কেক কাটিবার দৃশ্যটি জগৎ দেখিলো না, আহা কী প্রশান্তি! রাত যায়। দিন যায়। চ্যানেলে পর্দার উপরে-নিচে-মধ্যখানে কোথাও ঐ ‘ কেক’ কাটিবার দৃশ্য দেখা গেলো না। সমঝোতার কূটনীতির প্রাথমিক ‘সাফল্য’ দেখিয়া মনে মনে হৃষ্ট হইলাম। ঐদিকে অনলাইনের নানা পত্রিকার খবরে দেখিলাম, ভিতরে ভিতরে দেশের অভিজাত বেকারিতে ৭০ পাউন্ড ওজনের কয়েকখানা ‘ কেক’ নির্মিত হইতেছে। কেননা ম্যাডামের বয়স এইবার ৭০ বছর হইবে। ১৯৯১ সনে প্রধানমন্ত্রী হইবার পর বিতর্কিত এই জন্মদিন পালনের ‘পাষন্ড’ আয়োজন চলিয়া আসিতেছে। দেশের রাজনীতিতে সহনশীলতা আনিবার পথে এই ‘ কেক’ এক দুর্লংঘ্য প্রাচীরের মতো হইয়া ক্রমে দাঁড়াইলো। সেই ‘প্রাচীর’ তাহা হইলে এইবার হইতে ‘নির্মূল’ হইয়া গেলো? জাতীয় রাজনীতির এই অগ্রগতিতে মনে মনে উৎফুল্ল হইলাম। এমনকি ক্ষমতাসীন সাধারণ সম্পাদকও ১৫ আগস্টের সূচনার সময়ে জন্মদিনের কেক কাটিবার উৎসব পালন না করার জন্য প্রতিপক্ষ ম্যাডামকে ‘ধন্যবাদ’ জানাইতে দ্বিধাগ্রস্ত হইলেন না।
দিন গেলো। সন্ধ্যা নামিলো। কিন্তু হঠাৎ রাজনীতির ঈশান কোণে মেঘ দেখা দিলো। সেই মেঘের অন্ধকারকে আশ্রয় করিয়া তিনখানি ৭০ পাউন্ডের কেক আসিয়া গুলশানে ম্যাডাম-কার্যালয়ে ঢুকিলো। পিছন পিছন ঢুকিলেন ম্যাডাম। তাঁহার ৭০ বছর পূর্ণ হইয়াছে। অতএব তাঁহার অনুসারীরা সারা দিনমান মনভার করিয়া থাকিয়াছে। ১৫ আগস্ট সন্ধ্যার পর উহারা খুশিতে বাগবাগ হইলো। ম্যাডাম স্বহস্তে ছুরি দিয়া রাজনৈতিক সুশীলতা ও রুচিকে পুনঃ কুচি কুচি করিয়া কাটিবেন। বাহবা বাহবা করিয়া বিভক্তির আসর মশগুল হইলো। লন্ডনের ভাইজান ভাইয়াও নাকি অবশেষে তৃপ্ত হইলেন। প্যাঁচে পড়িয়াছেন আমাদের সোয়া দুইবারের প্রধানমন্ত্রী ম্যাডাম। নানা প্রকারের সমঝোতা-কূটনীতিতে সায় দিবেন নাকি লন্ডনী উত্তাপে বিস্ফোরিত হইবেন! এই দোলাচলের দ্যোলকে তিনি দুলিয়া দুলিয়া কোথা যাইবেন!
ম্যাডামের দশা দেখিয়া যে রবীন্দ্রনাথকে তিনি দুই চক্ষে দেখিতে পারেননা, সেই রবিকবির চরণে শামিল হইলাম। তাঁহার সুবিখ্যাত ‘ সোনার তরী’ কবিতাখানা মনে পড়িলো। ‘রাশি রাশি ভারা ভারা’ কতো যে অভিজ্ঞতার ‘ধান কাটা হলো সারা’। কতো কী দেখিলাম। সেই সুরে সুরে ১৫ আগস্ট রাত নয়টার পরে ঐ কবিতার ঢঙে একটি চরণ মগজে ঢুকিলো। কাটিতে কাটিতে ধান, এলো বরষা, শ্রাবণের এই বরিষণমুখর বাংলায় এইবার সেই সঙ্গে আরেকটি চরণও বুঝি যুক্ত হইবার উপক্রম ইয়াছে: ‘কাটিতে কাটিতে কেক, গেলো ভরসা’! এহেন ঘটনায় শেষ পর্যন্ত সৈয়দ আশরাফ সাহেবের কী প্রতিক্রিয়া হইলো, তাহা এই লেখাটি সমাপ্ত হওয়া পর্যন্ত (১৯ আগস্ট ২০১৫) এখনও জানিতে সক্ষম হই নাই।
এই রকম ঘটনা পৃথিবীবক্ষে মানব ইতিহাসে আর ঘটিয়াছে কিনা জানা যায় নি, জাতীয় প্রধান শোকাবহ দিবসকে ব্যঙ্গ করিয়া রাজনীতির বিরোধী পক্ষ একটি ‘হঠাৎ জন্মদিন’ এর অভ্যুদয় ঘটাইয়া এমন পৈশাচিক নৃত্যের আয়োজন করে, এমন ঘটনার কথা কোথাও শ্রবণ করি নাই। ভারতের মহাত্মা গান্ধীকে খুন করিয়াছে যে সাম্প্রদায়িক হিংস্র নাথুরাম গডসে, সেই নাথুরামের আদর্শিক দোস্তেরাই এখন ভারতের রাষ্ট্রক্ষমতায়। কিন্তু ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীতো ভারতের জাতির পিতার সমাধি ও স্মৃতিভাস্কর্যে যথাযথ সম্মান দেখাইতে এতটুকু দ্বিধা প্রদর্শন করে নাই! আমাদের দেশের প্রতিপক্ষ ম্যাডাম সেই কবে হইতে বিরূপাক্ষ দৃষ্টিতে আমাদের জাতিসত্ত্বার প্রধান প্রাণপুরুষকে যতটুকু সম্ভব অবহেলা করিয়া আসিতেছেন! এইবার ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক রাজনৈতিক সুশীলতা ও কুশলতাকে মিলাইয়া মিশাইয়া জাতির পিতা প্রশ্নে জাতিকে একত্র করিবার স্কিম হাতে লইয়াছিলেন। সেই স্কিমখানির কী হইল তাহা এখন তিনিই কহিতে পারিবেন! তবে সাধারণ সম্পাদক মহোদয়ের ঐ উদ্যোগকে শতকণ্ঠে সাধুবাদ জানাইতে অশেষ প্রীত বোধ করিতেছি।
এইবার আসি গোড়ার কথায়। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে, সবংশে নির্মূল করিবার এতটা আক্রোশ কেন সঞ্চিত হইলো দেশে এবং বিদেশে? একজন মহান জনপ্রিয় জননায়ক এবং একজন কুশাগ্র সুদক্ষ কূটনীতিক একই ব্যক্তি হইতে পারেন বলিয়া জগৎ দেখে নাই। গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার একজন সহজ সরল দাপুটে ছেলে যে প্রতিটি ঘটনার মধ্য দিয়ে এইভাবে বিকশিত হইতে হইতে বাঙালি জাতির আশা-আকাংখার প্রধান কেন্দ্রভূমিতে পরিণত হইয়া যাইবেন, তাহা কেহই ভাবিতে পারে নাই। আর বাংলার পূর্বাঞ্চল তথা বাংলাদেশ ইস্যুটি যে ১৯৭১ সনে জগতের ইস্যুসমূহের কেন্দ্রভূমি হইয়া দাঁড়াইবে, তাহার জন্যও কেহ প্রস্তুত ছিলোনা। বাংলার সেই সব নওয়াব-জমিদার-অভিজাতবর্গ মুসলিম লীগ দলটি গঠন করিয়া এই অঞ্চলের মাতব্বরির ‘চিরায়ত বন্দোবস্ত’ লইয়া সুখের উদগার সৃষ্টি করিতেছিল, তাহাদের সুখের আয়ু যে পাকিস্তান হইবার কিছুকাল পরই এইভাবে ধ্বসিয়া যাইবে, জনৈক মাওলানা ভাসানী এবং শেখ মুজিবর রহমানের মিলিত ঐক্য যে মহা মুসলিম লীগের পপাত ধরণীতল ঘটাইবে সেই ১৯৫৪ সনেই, তাহা পাকিস্তানি মিলিটারি-জমিদার শাসকেরা বুঝিতে পারে নাই। পাকিস্তানি শাসকেরা বুদ্ধি করিয়া মাওলানা ভাসানীকে কয়েক বছরের মাথায় মুজিবের নিকট হইতে কায়দা করিয়া ছুটাইয়া নিলো। ঐ দিকে মুজিবের নেতা সোহরাওয়ার্দী সাহেবও স্বায়ত্বশাসন ও স্বাধিকার প্রশ্নে যে ভূমিকা নিলেন, তাহা মুজিবের মনঃপুত ছিলোনা। সোহরাওয়ার্দীর জীবনাবসানের পর তাই জগৎ দেখিল একজন স্বাধীন, সহজিয়া, দৃঢ়চেতা, সাহসী ও ক্ষিপ্র জননায়কের ক্রমসৃজন। বস্তুত: ১৯৬৬ হইতে ১৯৭১ পর্যন্ত গৃহীত ভূমিকায় একজন শেখ মুজিবুর রহমান বঙ্গবন্ধুর অভিধা-পালক পরিধান করিয়া জনপ্রিয়তার উত্তুঙ্গে স্বাধীন বাংলাদেশের জাতির পিতায় উত্তরিত হইলেন। বিশেষত: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সকল প্রকার কূটষড়যন্ত্র এবং দম্ভকে পাংচার করিয়া দিয়া যে ১৯৭১ সনের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয় সংঘটিত হইবে, বাংলার মহান জনপুরুষ হিসাবে বিশ্ব রাজনীতি গগণে মুজিব-নক্ষত্রের উদয় ঘটিবে, তাহা বিশেষত: মার্কিন কিসিঞ্জার নেতৃত্ব কোনোক্রমেই মানিয়া নিতে প্রস্তুত ছিলোনা। সুতরাং প্রথম দিবস হইতেই চলিলো নতুন ষড়যন্ত্র। নতুন দেশটিকে কোনোক্রমেই স্থিতিশীল হইতে দেওয়া হইবে না, সকল প্রকার দুর্বলতা, ফাঁকফোকরের মধ্য দিয়া, রাজনীতিবিদ ও সেনা বাহিনীর একাংশকে হাত করিয়া অবশেষে মরণ আঘাত হানিবার আয়োজন হইলো। পরিকল্পনা হইলো, বঙ্গবন্ধুকে সবংশে সমূলে নিমূর্ল করা হইবে। ইতিহাসের নৃশংসতম এক অভিযান পরিচালিত হইলো। বাংলাদেশের প্রধান শক্তিমত্তা, প্রধান প্রাণকেন্দ্র, প্রধান ভরসাস্থলটি ষড়যন্ত্রের বুলেটে ছিন্নভিন্ন করা হইলো। কেহ বিকট হাসিতে গড়াইয়া পড়িলো,মিষ্টি ভক্ষণ করিলো, কেহবা মুচকি হাসিতে বিজয়রাঙা হইলো, কেহ রক্তে হাত মাখিয়া লম্ফ ঝম্ফ করিলো, কেহ পিশাচ আনন্দে মত্ত হইলো, কেহ কেহ ভয় পাইয়া ফ্রিজ শট হইয়া গেলো, কেহ কেহ বাস্তব মানিবার নামে ঘাতকদের সহিত হাত মিলাইলো, কেহ কেহ মাথা নত না করিবার ব্রতে কারাগার ও অবশেষে ঘাতকের মরণবুলেট বরণ করিয়া নিলো। কেহ কেহ সশস্ত্র কিংবা নিরস্ত্র প্রতিরোধে শামিল হইলো।
বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুকে নিশ্চিত করিবার আয়োজনে কিসিঞ্জার সফল হইলো। কিসিঞ্জারের ছিলো জমিদারী প্রতিহিংসা, একাত্তরের পরাজয়কে তিনি এক সেকেন্ড-এর জন্য মানিয়া নিতে পারেন নাই। বিংশ শতাব্দীর মীরজাফর খোন্দকার মুশতাক কখনোই মুজিবের উত্থানকে সহ্য করিতে পারে নাই। বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের সপ্তাহ দু’য়েক আগে একই খাবার টেবিলে বসিয়া খোন্দকার মোশতাককে দেখাইয়া স্বীয় জ্যেষ্ঠ সন্তান শেখ কামালকে বলিলেন, আমার কিছু হইলে এই চাচাই তোমাদের দেখিবে। যেন দেখিতে না হয় সেইজন্যই বোধ হয় পিতার পূর্বেই পুত্রকে বধ করিয়াছে খুনী মোশতাক চক্র। সেই রাতে, সেই প্রত্যূষে ঘাতকেরা বর্বরতার চূড়ান্ত মত্ততায় ঝাঁপাইয়া পড়িয়াছিলো তিনটি বাড়িতে। শিশুর মগজ, অন্তস্বত্ত্বা নারীর জঠর, বধূমাতাদের তরুণ রক্ত, মহিমাময়ী ফজিলাতুন্নেসার সাহসী আত্মদান, বুলেটে বুলেটে শিশু রাসেলকে নিঃশেষিত করা, প্রতিরোধে এগিয়ে আসা কর্ণেল জামিলকে হনন মানবিকতা ছিল সেই সময়ে ভীত-সন্ত্রস্ত্র-পরাজিত এক বিষয়বত্তা। উহারা জাতির পিতাকে সিঁড়ি দিয়া বাংলাদেশসহ চিরতরে অধঃপাতে নামাইয়া দিবার ছক কষিয়াছিলো । জাতির পিতাকে ধর্মীয় সম্মানে দাফনের সুযোগ দিতে ভীত শংকিত ছিলো।
সেই ভয় এবং শংকায় দুই জেনারেল এবং এক জেনারেল পত্নীর মোট একুশ বছরের ধারাবাহিক শাসনে ওরা হিংস্রতার ইতিহাস-ধারাপাত শিখাইতে চাহিয়াছিলো বাঙালিকে। কয়েকটি প্রজন্মকে ওরা ইতিহাস-মূর্খ অমানবিক করিয়া তুলিয়াছিলো বঙ্গবন্ধু চরিত্রটিকে মিথ্যা কলংকের কালিমায় সিক্ত করে। বঙ্গবন্ধু হননে প্রথম জেনারেল নীরবে নিঃশব্দে পিছন হইতে মদদ যোগাইয়াছিলো। বঙ্গবন্ধুর বিয়োগান্তক প্রস্থানে মূল লাভবান হইয়াছিলো প্রথম জেনারেল এবং তার চারপাশের কয়েকজন ষড়যন্ত্রী। মুজিবকে ছোট না করিলে তাহাদের হয়না। বঙ্গবন্ধুর প্রত্যক্ষ খুনীদের আশ্রয়, পারিতোষিক এবং পুনর্বাসনে প্রথম আর দ্বিতীয় জেনারেল কেহ কাহারো চেয়ে কম যায় নাই।
এ সবকিছুতে নবমাত্রা চড়াইয়ােিছন আমাদের বেগম ম্যাডাম, বেশ কয়েকবার তিনি নিজের কথায় কহিয়াছিলেন, অমন ‘হত্যাকান্ড’ জরুরি হইয়া পড়িয়াছিলো! কী অন্যায় করিয়াছিলেন মহান মানবিক বঙ্গবন্ধু এই নারীর কাছে? এই প্রচারিত কাহিনীটি ম্যাডাম নিজেও কখনো অস্বীকার করেননাই। একাত্তরে ঢাকা সেনানিবাসে তাহার অবস্থানে বীতশ্রদ্ধ জেনারেল স্বামী যখন তাহাকে মানিয়া নিতে পারিতেছিলেন না, বঙ্গবন্ধু তাঁহার মানবিক ছাতাটুকু ছড়াইয়া বলিয়াছিলেন, সৈনিক তোমাকে ফিরাইয়া নিতেই হইবে তোমার শপথ সাথীকে ! নিহত স্বামীর নাম ও পদবী বরাতেই ঐ নারী আজ ‘ দেশনেত্রী’! যে স্বামী বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিত্বের তরঙ্গে প্রবাহিত হইয়াই স্বীয় স্ত্রীকে ঘরে তুলিয়া নিতে বাধ্য হইয়াছিলেন!
সেই নারী কেমন করিয়া ১৯৯১ সনে প্রধানমন্ত্রী হইবার পর কাহাদের পরামর্শে এই ‘জন্মদিন উৎসব’-এর ১৫ আগস্ট খুঁজিয়া বাহির করিলেন? এক নারীর তিন তিনটি জন্মদিন। ঠিক আছে মানিয়া নিলাম ১৫ আগস্টই তাহার আসল জন্মদিন। ১৫ আগস্ট ভারতেরও জন্মদিন। ভারতীয় দূতাবাস ১৫ আগস্ট জন্মদিন পালন করেনা আমাদের জাতির পিতার শাহাদত দিবসের সম্মানে। অথচ শেষ পর্যন্ত আমাদের বিরোধীপক্ষ পৈশাচিক-বীভৎস রস ছড়াইয়া বিশাল বিশাল কেক কর্ত্তন করিয়া ঐ শাহাদাত দিবসটিকে অসম্মানিত করার আয়োজন দিন দিন জম্পেশ করিয়াতুলিয়াছে,এইসব নিয়া এতো কথা, এতো লেখা, এতো আলোচনা, এতো নোংরামী বাড়িয়াই চলিয়াছে।
তবু ভাবিয়াছিলাম,এইবার বুঝি এই অসভ্য-বর্বরতার অধ্যায়ে ছেদ পড়িবে। বিশেষত: আওয়ামী সাধারণ সম্পাদকের সর্বশেষ আবেদনের পর। একজন সাব্যস্তের লোক অবশ্য সান্ত¡না দিলেন। এই যে ১৫ আগস্ট সূচনা লগ্ন হইতে পরদিন রাত ন’টা পর্যন্ত কেক না কাটিয়া ‘ ধৈর্য্য’ দেখাইয়াছেন, সব কিছু বিচারে ইহাকেও ছোট করিয়া দেখা উচিত নয়। ইহাও একটি অগ্রগতি। আল্লাহর রহমত নাজেল হউক। পৈশাচিকতার অর্গলমুক্ত হইয়া উহারা ক্রমশঃ মানবিক হউক। কেক কাটার অধ্যায়টি আগামীবার অন্তত: আরো চার ঘন্টা পিছাইয়া যাক।। ফিরিয়া আসুক রাজনীতিক্ষেত্রে ভরসা। কাটিতে কাটিতে কেক, ভরসা যেন আর না পালায়!
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)