ঠিক ১২ বছর আগে ‘চ্যানেল আই-লাক্স সুপারস্টার’ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে শোবিজে এসেছিলেন মেহজাবীন চৌধুরী। ধীরে ধীরে অভিনয় দক্ষতা আর নানা মাত্রিক চরিত্রের মাধ্যমে তিনি হয়ে ওঠেন দর্শকের কাছে সেরা অভিনেত্রী। নান্দনিক অভিনয় আর অপূর্ণতাকে পূর্ণতা দিয়ে মেহজাবীন হয়ে উঠেছেন সেরাদের চোখেও সেরা, নিজেই নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী।
শুরুর গল্পটা জানিয়েছেন মেহজাবীন নিজেই। তিনি বলেন, ২০০৮ সালের শেষের দিকে মাত্র ছ’মাসের জন্য বাংলাদেশে এসেছিলাম। আসার পর তেমন কোনো বন্ধু-বান্ধব না থাকায় অনেকটা ডিপ্রেশনে চলে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়েছিল। এরপর মাথায় চিন্তা এলো লাক্স এর কম্পিটিশনে যাওয়া যায় তাহলে হয়তো কিছু বন্ধু পাবো।
সেই চিন্তা থেকেই ২০০৯ সালে ‘লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার’ সুন্দরী প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন মেহজাবীন। হাজার হাজার প্রতিযোগীর মধ্যে তার বিজয়ী হওয়াটা ছিল অনেকটা স্বপ্নের মতো। বলেন, যেন বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না তখন!
মেহজাবীন বলেন, এরপর বিজ্ঞাপন করলাম, তারপরে অভিনয়ে পথচলা। আজকের এই অর্জন বা অবস্থান যেটাই বলি তার পেছনে আমার বাবা-মায়ের অবদান সবচেয়ে বেশি। কারণ তারা আমাকে বিভিন্ন সময়ে মানসিকভাবে সাপোর্ট দিয়েছেন, উৎসাহ দিয়েছেন। আমার মা আমার পাশে থেকে আমাকে সহযোগিতা করেছেন, এগিয়ে যাবার পথে অনুপ্রেরণা দিয়েছেন।
আরও বলেন, বাবা-মায়ের প্রতি আমরা ভালোবাসাটা প্রকাশ করতে পারি না তবুও তারা সেটা বোঝেন। আমি ভীষণ ভাগ্যবতী, এমন পরিবারে জন্ম নেওয়ায়। তারা সাপোর্ট না করলে হয়তো এতদূর আসতে পারতাম না।
মডেলিং দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করলেও অভিনয়েও নিয়মিত হবেন এমনটা আগে ভাবেননি মেহজাবীন। ২০১০ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত তিনি ফটোশুটে ফোকাস দিয়েছিলেন বেশি। তখন তার কাছে মনে হতো অভিনয় থেকে মডেলিংটা সহজ; তাই এখানেই থাকবেন। কিন্তু ২০১৩ সালের পর থেকে অভিনয়েই বেশি মনোযোগ দেন।
মেহজাবীন বলেন, যখন অভিনয় করতাম, কত কথা শুনতাম মানুষের কাছে! অনেকেই বলতো, মডেলরা অভিনেতা বা অভিনেত্রী হতে পারে না। সেখানেও অনেকের কটুক্তি ও সমালোচনার শিকার হয়েছিলাম। অনেকে আমাক নিয়ে হাসাহাসিও করেছে। দেখতে বিদেশিদের মতো, ভালোভাবে বাংলা বলতে পারিনা; এরকম অনেক সমালোচনা শুনেছি কিন্তু কোনো প্রতিউত্তর দেইনি।
“অভিনয় করতে গিয়েও এরকম অনেক কিছু শুনেছি আর চুপচাপ সয়ে গেছি। আমি কথায় নয়, কাজের মাধ্যমে আমার যোগ্যতা প্রমাণ করেছি। কাজ দিয়েই সবার সমালোচনার জবাব দিতে চেয়েছি। আমি নিজে সমালোচনা করতে পছন্দ করি না, আমার নামে কেউ কিছু বললেও সেসব কানে নেই না। আমি শুধু কাজটাতেই ফোকাস দেওয়ার চেষ্টা করি সবসময়।”-বলছিলেন নাটকের সবচেয়ে জনপ্রিয় এই অভিনেত্রী।
সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে মেহজাবীন বলেন, আমার দীর্ঘ ক্যারিয়ারের এই পথ চলায় যারা আমাকে সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করেছেন, ভালোবাসা দিয়েছেন সেসব পরিচালক, সহকর্মী, ভক্ত অনুরাগী এবং সাংবাদিক ভাই-বোনদের প্রতি অসীম কৃতজ্ঞতা জানাই। তারা সবাই আমাকে তাদের ভালোবাসার চাদরে সবসময় মুড়িয়ে রেখেছেন। এমন ভালোবাসাতেই সারাজীবন বেঁচে থাকতে চাই।
অভিনয় নৈপুণ্যে দর্শক মনে ঠাঁই করে নেয়া এ অভিনেত্রী বর্তমান সময়ে টেলিভিশন সবচেয়ে জনপ্রিয় নাম। একযুগের ক্যারিয়ারে মেহজাবীন অভিনয় করেছেন ৪৪৫টিরও বেশি নাটকে। প্রায় ৮০টিরও বেশি বিজ্ঞাপনে কাজ করেছেন। একটু একটু করেই অভিনয় নৈপুণ্যে নিজের একটা শক্ত অবস্থান তৈরি করে নিয়েছেন। হাঁটতে চান আরও অনেকটা পথ, দু হাতে কুড়াতে চান ভালোবাসা।