জাতীয় পার্টির একাংশের চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী কাজী জাফর আহমেদ ইন্তেকাল করেছেন। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
বৃহস্পতিবার সকাল ৭টার দিকে বাসায় হৃদরোগে আক্রান্ত হলে ইউনাইটেড হাসপাতালে নেওয়ার পর তাঁর মৃত্যু হয়।
কাজী জাফরের সহকারী ব্যক্তিগত সচিব (এপিএস) কামরুজ্জামান রনী চ্যানেল আই অনলাইনকে জানান, সকালে ঘুম থেকে ডেকে তোলা হয়। এরপর হৃদরোগে আক্রান্ত তিনি। হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
তিনি আরো জানান, তিন মেয়ে এবং স্ত্রী নিয়েই ছিলো কাজী জাফরের সংসার। দুই মেয়ে দেশে থাকলেও ছোট মেয়ে থাকে অস্ট্রেলিয়াতে।
রনী বলেন, সম্ভবত তার নিজ জেলা কুমিল্লাতেই দাফন করা হবে। তবে জানাজার বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
কাজী জাফরের ব্যক্তিগত সহকারী গোলাম মোস্তফা চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, আজ তার (কাজী জাফর) কুমিল্লায় যাওয়ার কথা ছিলো। সকালে রেডি হতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি।
তিনি জানান, আগামীকাল বাদ জুম্মা বায়তুল মোকাররম মসজিদে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন ও ২০ দলীয় জোট নেতা বেগম খালেদা জিয়া। এছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন শোক জানিয়েছে।
কাজী জাফর ১৯৩৯ সালে ১লা জুলাই কুমিল্লার চিওড়া কাজী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি খুলনা জিলা স্কুল থেকে মেট্রিকে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। পরে রাজশাহী সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে বিএ অর্নাস এবং এম এ পাশ করেন।
তিনি ১৯৫৯-১৯৬১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ছাত্রনেতা হিসেবে কাজী জাফর ছাত্র ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৬২-১৯৬৩ সাল পর্যন্ত অবিভক্ত পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের (এসপু) সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৬২ সালে তিনি সামরিক শাসন ও শরীফ শিক্ষা কমিশন বিরোধী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
ছাত্র জীবন শেষে কাজী জাফর শ্রমিক রাজনীতির সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেন। ১৯৬৭-১৯৮৫ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলা শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি ছিলেন। এরপর ১৯৭২ সালে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭৪ সাল থেকে ১৯৮৬ পর্যন্ত তিনি ইউনাইটেড পিপলস পার্টির (ইউপিপি) প্রথমে সাধারণ সম্পাদক এবং পরে চেয়ারম্যান হিসেবে সক্রিয়ভাবে পার্টির সাংগঠিক দায়িত্বের পাশাপাশি জাতীয় রাজনীতিতে কার্যকরী ভূমিকা রাখেন।
১৯৭৮ সালে কাজী জাফর তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মন্ত্রিপরিষদে শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টির জন্মলগ্ন থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
এরপর ২০১৩ সালে বিশেষ কাউন্সিলের মাধ্যমে জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরআগে জাতীয় পার্টি (এরশাদ) থেকে তাকে বহিস্কার করা হয়।
তিনি দীর্ঘদিন নানান শারীরিক অসুস্থতায় ভূগছিলেন।