কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) এর সাফল্যের মূল কারণ এক ঝাঁক নিবেদিত তরুন, যারা তাদের আবেগ, দেশপ্রেম, মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা এবং সাহসের মাধ্যমে নানা সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করেছে।
সিটিটিসি’র দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠাবাষির্কী উপলক্ষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্মৃতিচারণ করেছেন সিটিটিসি প্রধান ডিআইজি মনিরুল ইসলাম। ফেসবুকে দেওয়া ওই পোস্টে তিনি এসব কথা বলেন।
ওই পোস্টে সিটিটিসি’র দুই বছর পূর্তিতে সবাইকে শুভেচ্ছা জানান ডিআইজি মনিরুল ইসলাম।
ফেসবুকে দেওয়া পোস্টে তিনি বলেন: ‘‘মনটা খুব ফুরফুরে। নতুন ডিআইজি হয়েছি! সকাল সকাল অফিসে গেলাম। শুভানুধ্যায়ীদের ফুল আর মিষ্টি নিয়ে অভিনন্দন জানানো চলছেই। কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম এর অতিরিক্ত কমিশনার বা প্রধান হিসেবে আদেশ জারী হলো। যোগদান করলাম। তারিখটা ১৬/০২/২০১৬।
বাস্তবে এই ইউনিটের তখনও কোন অস্তিত্ব ছিল না, শুধু আমার বদলির আদেশ ছাড়া। গত ১৯/০৩/২০০৯ থ্রিঃ থেকে ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চে কাজ করে আসছিলাম। ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চ আমার যোগদানের আগে থেকেই একটি প্রতিষ্ঠিত ইউনিট। আমি আসার পর সহকর্মীরা এটাকে খ্যাতির শীর্ষে নিয়ে গেছে। এই অবস্থায় ডিটেক্টিভ ব্রাঞ্চের সমান্তরাল নতুন একটি ইউনিট কার্যকর করা সত্যিকার চ্যালেঞ্জের ব্যাপার। তারপর জনবল বলতে আমি একা, অফিস নাই, গাড়ি নাই, প্রশিক্ষণ নাই, বলতে গেলে মনোবল আর আত্মবিশ্বাস ছাড়া আর কিছুই নাই।
পুলিশ কমিশনারের অকুণ্ঠ সাপোর্ট আর তৎকালীন আইজিপি জনাব একেএম শহীদুল হকের অনুপ্রেরণা আমার এগিয়ে চলাকে অনেকটাই শক্তি যুগিয়েছে। শুরু হলো বন্ধুর পথ চলা। জনবল নির্বাচন ও সংগ্রহ, দেশে-বিদেশে প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা, লজিস্টিক সংগ্রহসহ প্রতি ধাপে ধাপে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা। মে মাসের শেষদিকে আইসিপিভিটিআর, সিঙ্গাপুর এর সহায়তায় প্রায় ৩০০ সদস্যের ওরিয়েন্টেশন ট্রেনিং করলাম।
দেখতে দেখতে নারকীয় হলি আর্টিজান অ্যাটাক হলো। আমরাও প্রকৃত পক্ষে অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু করলাম। তারপরের দিনগুলো কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের সাফল্যের ইতিহাস। একের পর এক Intelligence-led Preemptive সফল অভিযান। শুধু দেশে নয়, পৃথিবীর অধিকাংশ দেশের কাউন্টার টেররিজম কমিউনিটির কাছে সিটিটিসি একটি ব্র্যান্ড নেম। সেই অর্থে সিটিটিসি’র আজ দু’বছর পূর্ণ হলো।
সাফল্যের মূল কারন হলো-সিটিটিসি’র এক ঝাঁক নিবেদিত তরুন যারা তাদের আবেগ, দেশপ্রেম, মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা, সাহস যা দিয়ে তারা নানা সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করেছে। আরো যা করা যেত কিন্তু করতে পারিনি তা শুধুই আমার দায়। সিটিটিসি’র দু’বছর পূর্তিতে সবাইকে সীমাহীন কৃতজ্ঞতা ও আন্তরিক অভিনন্দন জানাই!’’
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) আওতাধীন ‘কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম’ ইউনিট (সিটিইউ) চালু হয় ২০১৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি। ডিএমপিতে চারটি বিভাগে বিভক্ত হয়ে এ ইউনিট কাজ করছে। বিভাগগুলো হচ্ছে কাউন্টার টেরোরিজম, সাইবার সিকিউরিটি এন্ড ক্রাইম, ক্রাইমসিন ম্যানেজমেন্ট ও ট্রান্সন্যাশনাল বিভাগ।
সন্ত্রাসবাদ, সন্ত্রাসবাদের অর্থায়ন, সন্ত্রাসবাদে সহায়ক অপরাধগুলো প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করাই মূলত এ ইউনিটের লক্ষ্য। ইন্টেলিজেন্স সংগ্রহ, অপারেশন পরিচালনা, মামলা , মামলা তদন্ত এবং তদন্তের আগে সন্ত্রাসীদের পর্যবেক্ষণে রাখার ওপর বিশেষ নজরদারি রাখে এ ইউনিট।