চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

কাঁটা নিয়েই দিনশেষ

‘বাংলাদেশের জান, সবাই তাকিয়ে তোমার দিকে’ -চা বিরতির ঠিক আগের ওভারে স্টাম্পের পেছন থেকে সাকিব আল হাসানকে উদ্দেশ্য করে কথাটি বলছিলেন মুশফিকুর রহিম। বাংলাদেশ উইকেটকিপারের ওই কথা ম্যাচের শুরু আর শেষের মধ্যে অনেক পার্থক্য বুঝিয়ে দেয়।

আফগানিস্তান: ২৭১/৫ (৯৬), (রহমত ১০২, আসগর ৮৮*; তাইজুল ২/৭৩, নাঈম ২/৪৩)

তবে মুশফিকের কথাটা সাকিবের চেয়ে নাঈম হাসানই হয়ত বেশি শুনেছিলেন! কারণ চা-বিরতি থেকে ফিরে দ্বিতীয় ওভারেই যে ম্যাজিক দেখান তিনি। পরপর সেঞ্চুরিয়ান রহমত শাহ ও মোহাম্মদ নবিকে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে ম্যাচে ফেরান।

কিন্তু দিনের শুরু থেকে মাঝপথ পর্যন্ত বাংলাদেশের কাঁটা হয়েছিলেন রহমত শাহ। আর দিনশেষে কাঁটা হয়ে থাকলেন আসগর আফগান। তিনি বড় কাঁটা হলে আফসার জাজাই’র সাইজও কম না! সেইসঙ্গে সাকিব আল হাসান ও মেহেদী হাসান মিরাজের উইকেটশূন্য থাকাও বাংলাদেশের জন্য কম উদ্বেগের না।

স্কোয়াডে কোনো পেসার না রাখায় বাতাসে নানা কথা ভাসতে শুরু করে। কিন্তু স্পিনে ভর করে প্রথম সেশনটা বেশ ভালোই কাটায় বাংলাদেশ। ৭৭ রানে ৩ উইকেট তুলে নিয়ে লাঞ্চে যায় তারা।

প্রথম সেশনটা যদি বাংলাদেশের হয় তো দ্বিতীয় সেশনটা পুরোপুরি আফগানিস্তানের। এই সেশনে কোনো উইকেট না হারিয়ে ১১৪ রান তুলে চা-বিরতিতে যায় আফগানরা।

প্রথম দিনের পিচ মোটেও জরাজীর্ণ নয়। তবু বাংলাদেশ নতুন বলে পেসারদের ব্যবহার করার কৌশল মিস করেছিল? রহমত শাহ ও আসগর আফগানের জুটির পর তা নিয়ে আবার প্রশ্ন উঠতে থাকে। কিন্তু সেই প্রশ্নের মাথা বাড়তে দেননি নাঈম হাসান।

প্রথম সেশনে বাংলাদেশের বড় প্রাপ্তি তাইজুলের মাইলফলক স্পর্শ। চতুর্মুখী স্পিন আক্রমণে আফগানিস্তানকে বেশ চাপেই রাখে বাংলাদেশ। টেস্টে ১০০তম উইকেট পাওয়ার কারণে তাইজুলের বিষয়টিই প্রথম সেশনের প্রধান আকর্ষণ।

এইপথে অবশ্য আফগানিস্তান তাদের উইকেট উপহার দিয়ে স্বাগতিকদের সহায়তা করে! তাদের ব্যাট চালানো দেখে মনে হয়েছে, মাত্র তৃতীয় টেস্ট খেলতে নামা ব্যাটসম্যানরা ওয়ানডে বা টি-টুয়েন্টির শর্টার ভার্সনের ঘোর থেকে এখনো বের হতে পারেননি! যদিও পরের ব্যাটসম্যানরা সেটা আস্তে আস্তে ঠিক করে নেন।

স্কোরবোর্ড তিন অঙ্ক ছোঁয়ার আগে তিন উইকেট হারালেও রহমত শাহ’র সেঞ্চুরিতে উল্টো চাপে পড়ে বাংলাদেশ। সঙ্গে হাফসেঞ্চুরি তুলে চাপের বোঝা আরও ভারী করেন রহমতকে দারুণ সঙ্গ দেয়া আসগর আফগান। তারপরই জোড়া উইকেট তুলে নিয়ে কিছুটা স্বস্তি ফেরান নাঈম হাসান।

টেস্ট ক্যারিয়ারের তৃতীয় হাফসেঞ্চুরি। সেটিকে রূপ দেন সেঞ্চুরিতে (১০২)। টেস্টে আফগানদের হয়ে প্রথম সেঞ্চুরিয়ানের নামটা এখন রহমত শাহ। তবে ইতিহাস গড়ার পরপরই আউট হয়ে যান তিনি।

পরপর রহমত-নবি ফেরায় মনে হয়েছিল ‘সীমার’ মধ্যেই আটকে যাচ্ছে আফগানিস্তান। কিন্তু সেটা হয়নি। হতে দেননি আসগর। রহমতের পর ইতিহাসের দ্বিতীয় অংশ হওয়ার পথ আছেন তিনি। দিনশেষে অপরাজিত রয়েছেন ৮৮ রানে। ৩৫ রানে অপরাজিত থেকে তাকে প্রয়োজনীয় সঙ্গ দিচ্ছেন উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান আফসার জাজাই।

ওপেনিং জুটিতে ১৯ রান আসলেও ধীরে ধীরে জুটি লম্বা করেছে আফগানিস্তান। পরের দুই জুটিতে আসে সমান ২৯টি করে রান। আর চতুর্থ জুটি তো সেঞ্চুরি ছাড়ানো (১২০)। পঞ্চম জুটিতে কোনো রান না আসলেও পরের জুটিতে সেটা পুষিয়ে দেন আসগর ও জাজাই। দিনশেষে ৭৪ রানে অবিচ্ছিন্ন তারা। নির্ধারিত ৯০ ওভারের পর আরও ছয় ওভার বেশি খেলা হলেও উইকেটের দেখা পায়নি বোলাররা।

প্রথমদিন শেষে এখন একটাই প্রশ্ন কতদূর যাবে আফগানিস্তান। পিচের গতিবিধি ধরলে, আফগানরা তিনশ রানের গণ্ডি তো পেরোনোর পথেই, বাংলাদেশের জন্য সেটা যথেষ্ট উদ্বেগের। কারণ, শেষ ইনিংসে ব্যাট করতে হবে বাংলাদেশকেই। ফলে প্রথমদিন শেষেই চোখে ভাসতে শুরু করেছে চট্টগ্রাম টেস্টের শেষদিন!