চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

‘কল্পনাতেও আসেনি এই ম্যাচ হারতে পারি’

সাক্ষাতকারে সৈকত আলি

শুক্রবারের রাতটি হতে পারত সৈকত আলির। হাতে উঠতে পারত ম্যান অব দ্য ফাইনালের পুরস্কার, এমনকি বিপিএলের চ্যাম্পিয়ন ট্রফিও। অনেক কিছু পাওয়া থেকেই বঞ্চিত হয়েছেন ফরচুন বরিশালের এ ক্রিকেটার। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বিপক্ষে শিরোপার লড়াইয়ে ৩৪ বলে ৫৮ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে জয়ের পথ সহজ করে দিলেও শেষের নাটকীয়তায় ১ রানের হার! ম্যাচের ফল এমন হতে পারে তা কল্পনাতেও আসেনি সৈকতের।

চ্যানেল আই অনলাইনকে দেওয়া সাক্ষাতকারে এ ক্রিকেটার কথা বলেছেন বিপিএল ইতিহাসের অন্যতম সেরা ফাইনাল নিয়ে।

কখন মনে হয়েছে ম্যাচটা হেরে যেতে পারেন?
সৈকত: শেষ তিন বলের আগে মাথায় আসেনি ম্যাচ আমরা হারতে পারি। ওই সময় একটু মনে হচ্ছিল যে এটা কী হচ্ছে। ম্যাচটা কী হেরে যাচ্ছি? কল্পনাতেও আসেনি এই ম্যাচ হারতে পারি। কুমিল্লা ওই সময় খুব ভালো বোলিং করেছে। অবশ্যই এটা তাদের কৃতিত্ব যে ম্যাচটা আমাদের হাত থেকে বের করে নিয়ে গেছে।

সবচেয়ে বেশি আক্ষেপ তো আপনারই হওয়ার কথা। এত ভালো ইনিংসের পরও দল জিতল না!
সৈকত: ওই সময় যদি আমি আউট না হতাম তাহলে মনে হয় আমরা ম্যাচটা জিততে পারতাম। মনে হচ্ছে ভুলটা মনে হয় আমিই করে ফেলেছি।

ক্রিস গেইলকে একরকম দর্শক বানিয়ে ১১ চার, এক ছক্কা মেরেছেন। কতটা উপভোগ করেছেন সে সময়টা?
সৈকত: আসলে ওরকম কিছু অনুভব করিনি। অন্য পাশে গেইল দাঁড়িয়ে আছে, এটি কখনো মাথায় আসেনি। সে আমাকে খুব ভালো গাইড করছিল। ওভার শেষে সে আমাকে বোঝাচ্ছিল, কীভাবে খেলতে হবে। যতক্ষণ খেলেছি আমাকে গাইড করে খেলিয়েছে। সে তো অনেক বড় খেলোয়াড়, বিশ্বতারকা। আমি শুধু চিন্তা করছিলাম, আমার ব্যাটে ভালো লাগছে আমি যতুটুক খেলে যেতে পারি। একজন ব্যাটসম্যান যখন ব্যাট করতে নামে, বল যখন ব্যাটের মাঝে লাগে ওই সময়টা থাকে ব্যাটসম্যানের কাছে সুখের সময়। এটির চেয়ে ভালো কিছু হতে পারে না। খুব ভালো লাগছিল।

গেইল তখন কী পরামর্শ দিচ্ছিল আপনাকে?
সৈকত: গেইল বলছিল, শুধু টাইমিংয়ের কথা চিন্তা করো আর কিছু ভাবার দরকার নেই। খুব সহজ করে বলছিল যে খুব ভালো খেলতেছ সোজা ব্যাটে খেলতে থাকো। গেইল সিঞ্চেলস নিয়ে নিয়ে খেলছিল। আর আমার পাশ থেকে বাউন্ডারি আসছিল। আমি আমার খেলা পরিবর্তন করার কথা ভাবিনি। চিন্তা ছিল আমার হিটিং জোনে বল দিলে মারব।

প্রথম ১১টির মধ্যে মাত্র তিন ম্যাচ খেলার সুযোগ হয়েছিল আপনার। হঠাৎ করে ফাইনালে কীভাবে সুযোগ আসল?
সৈকত: পুরো টুুুর্নামেন্টে মাঝপথে আমি খেলিনি। শুরুর দিকে তিনটা ম্যাচ খেলেছিলাম। সুজন ভাই (খালেদ মাহমুদ, কোচ-বরিশাল) ম্যাচের আগে আমাকে বলল, ‘‘তুই খেলবি, দেখ, এখানে ভালো খারাপের কিছু নেই। খারাপ করলেও কিছু না তবে এখান থেকে পাওয়ার অনেক কিছু আছে।’’ কোনো চাপ নেই, ফাইনাল যেন মনে করি না। সাধারণ একটা খেলা হিসেবে নিতে বলেছিল। পরবর্তীতে যখন ব্যাটিং করে আসলাম তখনও সব ভালো ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে যখন দলের অবস্থা একটু খারাপ হয়ে গেল তখন সুজন ভাই বলছিল, ‘‘দ্যাখ এই জায়গাটাতে তুই থাকলে বা যদি শেষ করে আসতে পারতি…।’’ তখন অনুভব করছিলাম আমি মনে হয় ভুল করে ফেলেছি। আরেকটু টিকে থাকলেই হয়ত জিতিয়ে আসতে পারতাম।

কাভার ড্রাইভে চার। যতক্ষণ উইকেটে ছিলেন নিয়মিত বিরতিতে মেরেছেন বাউন্ডারি

আপনার ক্যারিয়ারে অনেক উত্থান-পতন। বিপিএল ফাইনালে ওরকম ইনিংসের পর বড় একটা পুরস্কার আপনি অবশ্য পেয়েছেন। ছায়া জাতীয় দল বাংলাদেশ টাইগার্সের স্কোয়াডে আপনি আছেন। ক্রিকেট নিয়ে নতুন করে ভাবনার শুরুটা হলো কিনা?
সৈকত: ২০১৫-১৬ মৌসুমে বিসিবির এইচপি (হাই পারফরম্যান্স) ক্যাম্পে ছিলাম। সেখানে কাজ করেছি। পরবর্তীতে আমার ইনজুরি হলো, কুমিল্লাতে যেবার বিপিএল খেলার কথা ছিল। শুরুতেই ইনজুরিতে পড়লাম, ওটার পর খুব বাজে সময় পার করেছি। তারপর আর ফিরতে পারিনি। দুই বছর বিপিএল খেলতে পারিনি। এখন আবার সুযোগ এসেছে। আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে। মোটামুটি একটা বিরতির পর আবার বিসিবির ক্যাম্পে ঢুকতে পারছি। তো, এখান থেকে যতটা ভালো জিনিস শেখা যায়; নতুন করে আশা দেখছি।

এর আগে বঙ্গবন্ধু টি-টুয়েন্টি কাপের ফাইনালে গাজী গ্রুপ চট্টগ্রামের হয়ে আপনি ফিফটি করেছিলেন। কিন্তু শেষে জেমকন খুলনার কাছে ৫ রানে হেরে রানার্সআপ হয়েছিলেন। নিজেকে কি দুর্ভাগা মনে হয়, ফাইনালে জ্বলে ওঠেন কিন্ত শিরোপা ছোঁয়া হয় না?
সৈকত: ওই ম্যাচটার প্রেক্ষাপট ভিন্ন ছিল। যেমন শুরুতে অনেক উইকেট পড়ে গিয়েছিল। মাঝে আমি নেমে যতটুকু চেষ্টা করা যায় করেছি। গতকালকের ম্যাচটা ছিল আমাদের হাতের মুঠোয়। দুইটা ম্যাচের মধ্যে পার্থক্য অনকে ছিল। এটাতে একটু বেশি কষ্ট লাগছে। ক্রিকেটে এরকম হয়। হয়ত সামনের আরও একটা টুর্নামেন্টেও এরকম হতে পারে। আল্লাহ যদি কপালে রাখে একদিন না একদিন তো চ্যাম্পিয়ন হবো।!