”সিনেমার মতো অনিশ্চিত (আনসার্টেন) ব্যবসা আর নেই। কখন কোন ছবি ব্যবসা করবে, এটা বলা সম্ভব নয়। শুনেছি, বাংলাদেশে সিনেমার ব্যবসা ভালো না। শুধু বাংলাদেশ নয়, কলকাতাতেও একই অবস্থা। সেখানকার কোনো ছবি ঠিকমতো চলে না। বাণিজ্যিক ছবি হোক আর ভিন্নধারার ছবি হোক, কলকাতার সব ছবির ব্যবসা একই অবস্থা। তবে ব্যবসা না করলেও কিছু ছবি প্রশংসিত হচ্ছে। খুব খারাপ সময় যাচ্ছে। অবস্থার উত্তরণের জন্য সবাই চেষ্টা করে যাচ্ছেন।”
দুই বাংলার চলচ্চিত্রের বর্তমান অবস্থার এভাবেই মূল্যয়ন করলেন কলকাতার অভিনেতা ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত। যিনি বাংলাদেশেও পরিচিত। এদেশের নির্মাতা রেদওয়ান রনির ‘চোরাবালি’, মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ পরিচালিত ‘সম্রাট-দ্য কিং ইজ হেয়ার’ দুই ছবি ইন্দ্রনীলকে পরিচিতি এনে দিয়েছে। এবার নির্মাতা সোয়াইবুর রহমান রাসেলের ‘নন্দিনী’ ছবির মাধ্যমে তৃতীয়বারের মতো ঢাকাই ছবিতে অভিনয় করছেন সুদর্শন এই অভিনেতা।
দ্বিতীয় লটের শুটিংয়ে ঢাকার কোক স্টুডিওতে বসে চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে আলাপে ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত বলেন, ‘সিনেমার ব্যবসা খারাপ যাওয়ার কিছু কারণ রয়েছে। প্রধান কারণ হলো, এখন সারাবিশ্বে ডিজিটাল মিডিয়া এসে গেছে। বাড়িতে বসে দর্শক অনেক এক্সপোজার পাচ্ছে। নেটফ্লিক্স, আইফ্লিক্সে বিশ্বের যে কোনো কিছু চাইলে দেখছে। দর্শক ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে যা দেখছে, সেগুলো হাই কোয়ালিটির। ওগুলোর তুলনায় ভালো পণ্য বানাতে না পারলে, দর্শক তো দেখবে না।’
ইন্দ্রনীল আরও বলেন, কলকাতার বাণিজ্যিক ছবিগুলো ‘না চলার’ অন্যতম কারণ হলো ৯০ ভাগ ছবিই সাউথের (তামিল-তেলেগু) কপি। সাউথের ছবিগুলো মুক্তির পর হিন্দিতে ডাবিং করে কলকাতার রিমেক হওয়ার আগেই চ্যানেলে প্রচার করে দেয়। সব দর্শক দেখে ফেলে। তাহলে নতুন করে ফ্রেম টু ফ্রেম রিমেক ছবি দর্শক কেন দেখবে? আমি নিজে নাচতে পারি না বলে এসব ছবি করি না। আর রিমেকে কাজের ইচ্ছেও আমার নেই। তাছাড়া দর্শক এখন অনেক বেশি ম্যাচিউরড। সেজন্য রিমেক না দেখে সৃজিত মুখার্জি, কৌশিক গাঙ্গুলির মতো নির্মাতারা যারা (মৌলিক) অর্জিনাল গল্পে ছবি বানান, তাদের ছবিগুলো একটু দেখেন।
২০০৪ সালে ইন্দ্রনীল ‘শুকরিয়া: টিল ডেথ ডু আস অ্যাপার্ট’ ছবির মাধ্যমে চলচ্চিত্রে কাজ শুরু করেন। তিনি ২০০৮ সালে জানালা নামক চলচ্চিত্রে স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় বিপরীতে অভিনয়ে করে বাংলা চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেন। এরপর অংশুমানের ছবি, অটোগ্রাফ, সিস্টেম, অপরাজিতা, দশমী, মিশর রহস্য, সত্বান্বেষি ইত্যাদি ছবিগুলো অভিনয় করেছেন।
ইন্দ্রনীল এখন আর কলকাতার বাংলা ছবি করছেন না। কারণ, তার পরিবার (সন্তান, স্ত্রী) থাকেন মুম্বাইতে। ছবি করতে গেলে পরিবারকে সময় দিতে পারেন না, তাই নতুন কোনো ছবি করছেন না। এবিষয়ে তিনি বললেন, পরিবার নিয়ে মুম্বাইতে থাকি। কয়েক বছর আগে বছরে সাত-আটটা করে ছবি করেছি। কিন্তু পরিবারকে কাছে পাইনি। কারণ আমার পরিবার মুম্বাইতে সেটেল। তারা আসতে পারে না। তাই হিন্দি সিরিয়ালে কাজ করছি। দুটো সিরিয়াল করছি। একটার শুটিং চলছে, আরেকটা প্রচারিত হচ্ছে।
বাংলাদেশের নন্দিনী ছবিতে ইন্দ্রনীলের নায়িকা ছোটপর্দার নাজিরা মৌ। দুই লটে নন্দিনীর ৬০ ভাগ শুটিং শেষ। শেষ লট হবে জানুয়ারিতে। পরিতোষ বাড়ৈ-এর ‘নরক নন্দিনী’ উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিতব্য ‘নন্দিনী’ প্রসঙ্গে ইন্দ্রনীল বলেন, চোরাবালি, সম্রাট থেকে নন্দিনীতে রয়েছে নতুন গল্প। তাছাড়া এবার আমি একজন নিউজ রিপোর্টারের চরিত্রে কাজ করছি। যে একটা অনুসন্ধানি নিউজে কাজ করতে গিয়ে নন্দিনী নামের মেয়েকে খুঁজে পায়। ছবির চিত্রনাট্য ও ট্রিটমেন্ট আমার পছন্দ হয়েছে। এ ছাড়া সমাজের এমন নির্দিষ্ট বিষয়বস্তু সম্পর্কের পটভূমিতে নির্মিত সিনেমায় আমি আগে কাজ করিনি। সেই সঙ্গে এটি একটি ভিন্ন রকমের ভালোবাসার গল্প।