অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে এখন কোটিপতির সংখ্যা ১ লাখ ১৪ হাজার। দেশের তফসিলি ব্যাংকগুলোর হিসাব থেকে জানা যাচ্ছে, লাখো কোটিপতির মধ্যে মাত্র ৬ হাজারের কিছু বেশিজন আয়কর দেন। আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় এখন অনেক বেশি সাধারণ মানুষ কর দিলেও এক লাখের বেশি কোটিপতি এক টাকাও আয়কর দিচ্ছেন না।
আয়কারী ও আয়কর দাতা সংখ্যার এই বিশাল তারতম্য নিয়ে চ্যানেল আই অনলাইনকে অর্থনীতিবিদেরা বলেছেন, সরকারের সদিচ্ছা থাকলে এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড চাইলে আয় ও আয়কর দেয়ার বিশাল ফাঁক কমিয়ে আনা সম্ভব।
কর অাদায়কারী সংস্থার দাবি, সেটা হচ্ছে। সরকার ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সমন্বিতভাবে কর ফাঁকি রোধ এবং ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন বোর্ডের চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান।
অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. আনু মুহাম্মদ চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘কোটিপতি ও আয়কর দাতার সংখ্যাগত তারতম্য নিয়ে অবাক হওয়ার কিছু নেই। ব্যাংকগুলোতে যাদের হিসাব আছে সে হিসাবও প্রকৃত কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে। কালো-টাকার মালিকদের এই হিসাবে নিলে আয়কর ফাঁকি দেয়া ব্যক্তিদের সংখ্যা আরও অনেক বাড়বে। কারণ সরকারের হিসাবেই মোট দেশজ উৎপাদনের ৫০-৮২ শতাংশই কালো টাকা।’
কালো টাকার মালিকরা রাজস্ব বোর্ডের ধরা-ছোঁয়ার বাইরেই থাকছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কোটিপতিদের তুলনায় কম আয়কারী সাধারণ মানুষই বরং নিয়মিত আয়কর দিচ্ছেন। বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আসার কথা ছিলো এই কোটিপতিদের কাছ থেকেই। কিন্তু, বাস্তবে তাদের টাকা নামে-বেনামে বিদেশে পাচার হচ্ছে। শুধু ২০১৫ সালেই পাচার হয়েছে ৭৬ হাজার কোটি টাকা।’
‘সরকার এবং এনবিআর এসব কালো টাকার মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না কিংবা প্রভাবশালীদের প্রভাব থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না,’ বলেও মনে করেন আনু মুহাম্মদ।
তবে, আরেক অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ মনে করেন, কর ফাঁকি দেয়া বিত্তবানদের বিরুদ্ধে চাইলেই ব্যবস্থা নেয়া যায়। চ্যানেল আই অনলাইনকে তিনি বলেন, ‘প্রকাশিত আয়ের দালিলিক প্রমাণ ও সরকার-এনবিআর সমন্বিত পদক্ষেপ নিলে ফাঁকটা খুঁজে বের করা কঠিন কিছু না।’
সেজন্য আগে এনবিআরের আধুনিকায়নের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ড. আবু আহমেদ।
আয়কর ফাঁকি দেয়া কোটিপতিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান বলেন, ‘কর ফাঁকি অনুসন্ধান ও কর দিতে সক্ষমদের ওপর এনবিআর’র নিয়মিত জরিপ চলছে। এরইমধ্যে ব্যক্তিগত ও কোম্পানি পর্যায়ের আয়কর রিটার্নের মেয়াদ শেষ হয়েছে। এখন আয়কর দেয়াদের সংখ্যা আমরা জানি। একটি সামগ্রিক তথ্য পাওয়া যাবে। ইতোমধ্যে আয়কর না দেয়াদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে কমিশনারদের নির্দেশ দিয়েছি।’
রাজস্ব আদায় ও করদাতার সংখ্যা বাড়ানোর জন্য জনসচেতনতার উপর গুরুত্ব দিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘রাজস্ব বোর্ডকে সহযোগিতা করতে সকলের কাছে অনুরোধ করছি। জেলা পর্যায় থেকে এখন উপজেলা পর্যায়ে যাচ্ছি। জনগণকে উদ্বুদ্ধ করে দেশের আয়কর চিত্রটি সম্প্রসারিত করার চেষ্টা করছি।’
তফসিলি ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে কোটিপতির সংখ্যা ১ লাখ ১৪ হাজার ২৬৫ জন বলে জাতীয় সংসদকে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। ২৫ জানুয়ারি সংসদে কিশোরগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য মো. সোহরাব উদ্দিনের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী দেশের কোটিপতির সংখ্যা জানান।
অর্থমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ তফসিলি ব্যাংকে কোটি টাকার হিসাব সংখ্যা (আমানত এবং আগাম) ২০১৫ সালে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১ লাখ ১৪ হাজার ২৬৫টি। ২০১১ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কোটিপতি হিসাব সংখ্যা ছিল ৭৮ হাজার ১৫০টি, ২০১২ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৯০ হাজার ৬৫৫টি, ২০১৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৯৮ হাজার ৫৯১টি, ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১ লাখ ৮ হাজার ৯৭৪টি এবং ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১ লাখ ১৪ হাজার ২৬৫টি।