নিয়োগকর্তা চাইলে কর্মস্থলে মুসলিম মহিলা কর্মীদের হিজাব পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে পারবেন বলে জানিয়েছেন ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের শীর্ষ আদালত।
কর্মক্ষেত্রে মহিলারা হিজাব পরে কাজ করতে পারবেন কিনা-এমন একটি মামলায় এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন ওই আদালত। এ বিষয়ে ইউরোপের কোন আদালতে প্রথম রায় দেয়া হলো।
বেলজিয়ামে জি ফোর এস কোম্পানির এক রিসেপসনিস্টকে হিজাব পরার কারণে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার পর করা এক মামলায় বেলজিয়ামের আদালত আইনী ব্যাখ্যার জন্য ইউরোপের সর্বোচ্চ আদালতে এই মামলা হস্তান্তর করেছিল।
আদালত রায়ে বলা হয়েছে, চাকুরিদাতারা চাইলে তাদের কর্মচারীদের হিজাবসহ ‘যে কোনো রকম রাজনৈতিক, দার্শনিক অথবা ধর্মীয় পরিচয় লোকের সামনে দৃশ্যত তুলে ধরে এমন পোশাক বা প্রতীক’ পরা নিষিদ্ধ করতে পারবে।
তবে ইউরোপের বিচার আদালত (ইউরোপীয়ান কোর্ট অফ জাস্টিস) তার রায়ে আরও বলেছে, সব কর্মচারীর ‘সাজপোশাক নিরপেক্ষ’ রাখার নিজস্ব নীতির উপর ভিত্তি করে কর্মদাতা প্রতিষ্ঠানকে এই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
এটা কোনো একজন ভোক্তার ব্যক্তিগত ইচ্ছার ভিত্তিতে করা যাবে না বলে বলছে আদালত।
জি ফোর এস কোম্পানির কর্মচারী সামিরা আচবিতা তিন বছর ওই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার পর যখন কর্মস্থলে হিজাব পরতে শুরু করেন, তখন তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। তিনি দাবি করেন ধর্মীয় কারণে তার প্রতি বৈষম্য করা হয়েছে।
কিন্তু তার চাকুরিদাতা প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মক্ষেত্রের নিয়মবিধি সংস্কার করে কাজের জায়গায় ‘যে কোনরকম রাজনৈতিক, দার্শনিক অথবা ধর্মীয় পরিচয়বহনকারী পোশাক বা প্রতীক দৃশ্যত তুলে ধরা এবং/অথবা এধরনের বিশ্বাসের প্রদর্শন’ নিষিদ্ধ করে দিয়েছিল,’ বলে ব্যাখ্যা দিয়েছে আদালত।
আদালত বলেছে, তাদের নতুন নিয়মবিধিতে ‘সাজপোশাকে এধরনের বিশ্বাসের প্রদর্শন কোনো একটি ধর্ম বা বিশ্বাসের ক্ষেত্রে যেহেতু প্রযোজ্য নয়’ তাই এটা বৈষম্যমূলক বলে বিবেচিত হবে না।
তারা বলছে, ‘‘একটি প্রতিষ্ঠান যদি সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের সেবাগ্রহণকারীদের কাছে তাদের নিরপেক্ষ ভাবমূর্তি তুলে ধরতে চায় তাহলে সেটা বৈধ’’- তবে জাতীয় পর্যায়ের আদালতকে এটা নিশ্চিতভাবে দেখতে হবে যে ওই প্রতিষ্ঠানের নীতি সব কর্মচারীর জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য হচ্ছে কীনা।
এই মামলার ক্ষেত্রে বেলজিয়ামের আদালতকে এটাও নিশ্চিতভাবে প্রমাণ করতে হবে যে আচবিতাকে সেবাগ্রহণকারীদের সামনে আসতে হয় না এমন কোন কাজে বদলি করা সম্ভব ছিল কীনা।
এই রায়ের সুদূরপ্রসারী ফল হতে পারে। নেদারল্যান্ডসে সাধারণ নির্বাচনে মুসলিম শরণার্থী একটি বড় ইস্যু। তাছাড়া ইউরোপ জুড়ে শরণার্থীদের হয়রানি নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। সেই অবস্থায় ইউরোপের কোর্ট অব জাস্টিসের (ইসিজে) রায় নানা দিক থেকেই তাৎপর্যপূর্ণ।